আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান সরকারকে ‘নিশ্চিহ্ন’ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। ইস্তাম্বুলে চলমান শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর এই হুমকি দেন তিনি। এতে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়ে গেছে।
এর আগে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী জানান, ইস্তাম্বুলে হওয়া যুদ্ধবিরতি আলোচনা কোনো কার্যকর সমাধান ছাড়াই শেষ হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, চলতি মাসের প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পর এটি আঞ্চলিক শান্তির জন্য বড় ধাক্কা।
পাকিস্তান সরকারের এক কূটনৈতিক সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানায়, আফগানিস্তানের ভেতর থেকে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকায় সেনাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে—এই অভিযোগ নিয়েই আলোচনায় বিরোধ সৃষ্টি হয়। অবশেষে মতপার্থক্যের জেরেই বৈঠক ভেস্তে যায়।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে লেখেন, “তালেবানি শাসনকে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন করতে আমাদের অতি সামান্য সামরিক শক্তিই যথেষ্ট। আমরা তাদের আবারও গুহায় ফিরে যেতে বাধ্য করব।”
তবে পাকিস্তানের এই মন্তব্যের বিষয়ে তালেবান বা আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।
২০২১ সালে তালেবান কাবুলের ক্ষমতা দখলের পর গত ১১ অক্টোবর (শনিবার) আফগানিস্তান–পাকিস্তান সীমান্তে ভয়াবহ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। দুই দেশই দাবি করে, একে অপরের সীমান্তচৌকি দখল ও ধ্বংস করেছে।
তালেবান সরকারের অভিযোগ, ৮ অক্টোবর কাবুল ও পাকটিকা প্রদেশে বিমান হামলা চালায় পাকিস্তান। প্রতিশোধ নিতে পরের শনিবার আফগান বাহিনী পাল্টা আক্রমণ করে। এতে ৫৮ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি করে কাবুল।
অন্যদিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী জানায়, তাদের ২৩ জন সেনা শহীদ হয়েছেন, তবে পাল্টা হামলায় ২০০ জন তালেবান ও তাদের সহযোগী যোদ্ধা নিহত হয়।
প্রায় চার দিনের সংঘর্ষের পর ১৫ অক্টোবর উভয় দেশ ৪৮ ঘণ্টার জন্য সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। পরবর্তীতে ১৯ অক্টোবর দোহায় কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির উদ্দেশ্যে নতুন করে আলোচনায় বসে দুই দেশ।
এরপর গত ২৫ অক্টোবর, দ্বিতীয় দফায় তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিন দিনের বৈঠক শুরু হয়। কিন্তু তৃতীয় দিনেও কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি দুই পক্ষ। উভয় দেশই দোষারোপের পালায় লিপ্ত হয়।
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার বলেন, “আলোচনার মূল উদ্দেশ্য থেকে আফগান পক্ষ বারবার সরে যাচ্ছিল। তারা সূক্ষ্ম কৌশল অবলম্বন করে দোষারোপের খেলায় মেতে উঠেছে। এভাবে কোনো কার্যকর সমাধান সম্ভব নয়।”
পাকিস্তানের একটি নিরাপত্তা সূত্র জানায়, ইস্তাম্বুল বৈঠকে আফগান প্রতিনিধি দল তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)–এর বিষয়ে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে অনিচ্ছুক ছিল।
বিশেষ করে পাকিস্তানবিরোধী কর্মকাণ্ডে টিটিপিকে সমর্থন বন্ধে নিশ্চয়তা দেওয়ার প্রশ্নে তারা নীরব থাকে।
আলোচনায় উপস্থিত এক আফগান কূটনৈতিক সূত্র জানান, এ নিয়েই ‘উত্তেজনাপূর্ণ বাক্যবিনিময়’ হয় এবং পরক্ষণেই বৈঠক ভেঙে যায়।
দুই দেশের সম্পর্কের মূল টানাপোড়েন সীমান্ত নিরাপত্তা ইস্যু ঘিরে। পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে, আফগানিস্তান তাদের মাটিতে টিটিপি–এর মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় দিচ্ছে।
তবে কাবুল সরকার বিষয়টি সব সময় অস্বীকার করে এসেছে।
সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান
বিডি প্রতিদিন/আশিক