বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
ব্রিটিশ মিডিয়ার খবর

অপহৃত মোল্লা বারাদার, মারা গেছেন আখুন্দজাদা

অপহৃত মোল্লা বারাদার, মারা গেছেন আখুন্দজাদা

অপহৃত হয়েছেন আফগানিস্তানের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী মোল্লা বারাদার। শুধু তাই নয়, তালেবান সরকারের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদাকে হত্যা করা হয়েছে। সোমবার একটি রিপোর্টে এমনই দাবি জানাল ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য স্পেকটেটর’। সম্প্রতি সরকার গঠনের সময় বারাদার সমর্থক এবং হাক্কানি নেটওয়ার্কের সদস্যদের মধ্যে হওয়া সংঘর্ষের পরই অপহরণ করা হয়েছে মোল্লা আবদুল গনি বারাদারকে। এই প্রতিবেদনের পর তালেবানের অন্দরের ক্ষমতার লড়াইয়ের ছবিটা আরও স্পষ্ট হয়ে গেল বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। তবে আখুন্দজাদার মৃত্যুর বিষয়ে বিশেষ কিছু জানানো হয়নি।

স্পেকটেটর খবরে আরও বলা হয়, মূলত আফগানিস্তানে সরকার কেমন হবে তা নির্ধারণ করতে চাইছে পাকিস্তান। এ কারণে তালেবানের কট্টরপন্থি অংশের নেতাদেরই সরকারে পদ দিতে চায় দেশটি। পাকিস্তানের ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স বা আইএসআই প্রধানও তালেবান সরকারের সব গুরুত্বপূর্ণ পদ পাকিস্তানের অনুগত নেতাদের দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ জন্য দেশটির পছন্দ হাক্কানি নেটওয়ার্কের নেতারা। কিন্তু আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের চুক্তিতে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছেন বারাদার। তার কূটনৈতিক চেষ্টাতেই তালেবানের সঙ্গে চুক্তিতে সম্মত হয়েছিল ওয়াশিংটন। ফলে তিনিও তালেবান সরকারের প্রধান হওয়ার অন্যতম দাবিদার। এ নিয়ে হাক্কানিদের সঙ্গে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথমেই বারাদার অনুসারীদের সংঘাতের খবর ছড়িয়েছিল আন্তর্জাতিক সব গণমাধ্যমে। এ কারণেই কাবুল পতনের পরেও তালেবানের সরকার গঠনে বিলম্ব হয়।

কারা মন্ত্রিত্ব পাবে, কবে শপথ গ্রহণ হবে, তা চূড়ান্ত করতে সেপ্টেম্বরের শুরুতেই কাবুলে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে বৈঠকে বসেছিল তালেবান জঙ্গিগোষ্ঠীর নেতারা। নাম চূড়ান্ত হওয়া তো দূরে থাক, বৈঠকে রীতিমতো গুলিবৃষ্টি হয়। হাতাহাতি বেধে যায় নেতাদের মধ্যে। এমনকী, মোল্লা বারাদারের মতো নেতাকেও হেনস্তা করে হাক্কানি নেটওয়ার্কের শীর্ষনেতারা। সেই রিপোর্টও  প্রকাশ্যে এসেছিল। সূত্রের খবর, তালেবান গোষ্ঠীর বাইরে অন্য নেতা, বিভিন্ন উপজাতি নেতৃত্ব, প্রাক্তন প্রেসিডেন্টদের মন্ত্রিসভায় শামিল করতে চাইছিল বারাদর। যাতে তা গোটা বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। আর তা নিয়েই শুরু হয় বিতন্ড। এর মধ্যেই এবার বারাদারের অপহরণের খবর  সামনে এলো। শুধু তাই নয়, তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা আখুন্দজাদার মৃত্যুর রিপোর্টও প্রকাশিত হয়েছে। যদিও তালেবানের তরফে সরকারিভাবে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

মেয়েরা শিগগিরই স্কুলে যেতে পারবে : আফগানিস্তানে মেয়েরা শিগগিরই স্কুলে যেতে পারবে বলে জানিয়েছে ক্ষমতাসীন তালেবান। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে তালেবান তাদের নতুন মন্ত্রিসভার বাকি পদগুলোর নাম প্রকাশ কালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই তথ্য জানায়। মুজাহিদ মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার বিষয়ে বলেন, ‘আমরা সবকিছু চূড়ান্ত করছি- এটি যত দ্রুত সম্ভব ঘটবে।’

গত সপ্তাহে স্কুল খোলার ঘোষণা দেয় তালেবান। তবে শুধু ছেলেদের স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত দেয় তারা এবং স্কুলে শুধু পুরুষ শিক্ষকরাই পাঠদান করবেন বলে ঘোষণায় বলা হয়েছিল। ওই সময় তালেবান বলেছিল, তারা মেয়েদের স্কুল খুলে দেওয়ার বিষয়ে কাজ করছে।

সংবাদ সম্মেলনে জবিউল্লাহ মুজাহিদ বর্তমানে বন্ধ ঘোষিত নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয় নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। গত সপ্তাহে ওই মন্ত্রণালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ মন্ত্রণালয়কে নীতিনৈতিকতাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বদল করছে তারা। একসময় এ মন্ত্রণালয় কট্টর ধর্মীয় মতাদর্শ বাস্তবায়নে কাজ করেছিল। বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবান সরকারের আমলে এ দফতর ছিল।

জবিউল্লাহ মুজাহিদ আরও বলেছেন, নতুন করে তালেবানের অন্তর্বর্তী সরকারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যুক্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আজকে ঘোষিত পদগুলো সরকারকে সচল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হচ্ছে।’ এ মাসের শুরুতে প্রথম অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু সদস্যের নাম জানিয়েছিল তালেবান।

এদিকে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কর্মজীবী নারীদের আইনশৃঙ্খলার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। কাবুলের মেয়র হামদুল্লাহ নোমান সরকারি নারী চাকরিজীবীদের ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সম্প্রতি।

দুই দশকের যুদ্ধ শেষে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের মধ্যে গত ১৫ আগস্ট কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। এরপর তালেবানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এবার নারী অধিকারের প্রতি সম্মান দেখাবে তারা। তবে শরিয়াহ্ আইনের মধ্যে থেকেই তা করা হবে।

সর্বশেষ খবর