শনিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

৩১টি দেশে শনাক্ত হয়েছে ওমিক্রন ভারতের পর ঢুকল মালয়েশিয়ায়

এশিয়া প্যাসিফিককে প্রস্তুত হতে বলল ডব্লিউএইচও

করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন দ্রুত বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। এখন পর্যন্ত মোট ৩১টি দেশে এটি শনাক্ত হয়েছে। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারতের পর মালয়েশিয়াও ঢুকে পড়েছে এটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) এরই মধ্যে এক সতর্ক বার্তায় বলেছে, এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলো যেন কালবিলম্ব না করে এই ভাইরাস মোকাবিলায় প্রস্ততি গ্রহণ করে। ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল (ইসিডিসি) গণমাধ্যমতে জানিয়েছে, যে গতিতে ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ছে, শিগগিরই ডেল্টাকে সরিয়ে এটিই হয়ে উঠবে বিশ্বে মূল সংক্রামক করোনার ধরন। খবরে বলা হয়, এখন পর্যন্ত যে ৩১ দেশে ওমিক্রন ছড়িয়েছে সেগুলো হলো ভারত, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা, নেদারল্যান্ডস, হংকং, ইসরায়েল, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, চেকিয়া, ডেনমার্ক, অস্ট্রিয়া, কানাডা, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, পর্তুগাল, জাপান, ফ্রান্স, ঘানা, দক্ষিণ কোরিয়া, নাইজেরিয়া, ব্রাজিল, নরওয়ে, সৌদি আরব, আয়ারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাষ্ট্র।

এদিকে বিপজ্জনক এ ভ্যারিয়েন্ট ঠেকাতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিশ্বের অনেক দেশ। এ ছাড়া আফ্রিকার সাতটি দেশ থেকে আসা যাত্রীদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন। এ সাতটি দেশ হলো বতসোয়ানা, ইসোয়াতিনি, ঘানা, নামিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও লেসোথো।

মালয়েশিয়ায় ওমিক্রন : মালয়েশিয়ায় প্রথমবারের মতো এক শিক্ষার্থীর শরীরে করোনার ওমিক্রন ধরন শনাক্ত হয়েছে। গতকাল দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।

 দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী খাইরি জামালউদ্দিন জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ায় যার শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে, সেই শিক্ষার্থী গত ১৯ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে মালয়েশিয়ায় আসেন। ওই শিক্ষার্থী এ মুহূর্তে কোয়ারেন্টাইনে আছেন। তার সঙ্গে একই বাসে থাকা পাঁচ ব্যক্তিকেও কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

এর আগে বুধবার আফ্রিকার আট দেশের ওপর ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে মালয়েশিয়া। পাশাপাশি বলা হয়, নতুন করে যেসব দেশে ওমিক্রন শনাক্ত হবে, সে দেশগুলোকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হতে পারে।

নেপালে সতর্কতা : এদিকে ওমিক্রন ধরন নিয়ে শঙ্কার মুখে ৯ দেশ থেকে ভ্রমণকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নেপাল। গতকাল থেকেই এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। খবরে বলা হয়, এর আগে গত সোমবার নেপালের মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়। মন্ত্রিসভার নির্দেশনা অনুযায়ী, দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা, জিম্বাবুয়ে, নামিবিয়া, লেসোথো, ইসোয়াতিনি, মোজাম্বিক, মালাউয়ি ও হংকং থেকে কোনো ভ্রমণকারী নেপালে প্রবেশ করতে পারবেন না। নিষেধাজ্ঞা থাকবে গত তিন সপ্তাহের মধ্যে দেশগুলোতে ভ্রমণ করেছেন এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও।

নেপালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ফদিন্দ্রমণি পোখরেল জানান, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা দেশগুলো থেকে কোনো কূটনৈতিক কর্মকর্তা নেপালে আসতে চাইলে তাদের এক সপ্তাহের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনসহ স্বাস্থ্যসংক্রান্ত নানা নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে।

ওমিক্রনের ঝুঁকির মুখে দেশের অভ্যন্তরেও নানা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে নেপাল সরকার। খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লোকজনকে দেশত্যাগ না করার আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি বিদেশ ভ্রমণের আগে বাধ্যতামূলকভাবে অনুমতি নিতে হবে সরকারি কর্মচারীদের।

এশিয়া প্যাসিফিককে প্রস্তুত হতে বললো ডব্লিউএইচও : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোকে সতর্ক করে প্রস্ততি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ডব্লিউএইচওর আঞ্চলিক পরিচালক তাকেশি কাসাই ম্যানিলা থেকে একটি ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এ সময় তিনি বলেছেন, করোনার নতুন ধরন মোকাবিলায় প্রত্যেকটি দেশ ও সম্প্রদায়কে অবশ্যই প্রস্তুতি নিতে হবে। ওমিক্রন মোকাবিলায় শুধু সীমান্ত সম্পর্কিত পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করা উচিত হবে না। দ্রুত সংক্রমণশীল এ ধরন ঠেকাতে প্রস্তুতির বিকল্প নেই। ওমিক্রন সম্পর্কে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনতে পারছি না। প্রস্তুতি হিসেবে স্বাস্থ্য-সংশ্লিষ্ট সক্ষমতা বাড়ানো ও টিকা কর্মসূচি ওপর জোর দেওয়ার কথা বলেন তিনি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহামারী বিশেষজ্ঞ মারিয়া ভ্যান কেরখোভ এক বিবৃতিতে বলেন, ওমিক্রন কতটা সংক্রামক তা কয়েকদিনের মধ্যে হয়তো জানা সম্ভব হবে।

ফিনল্যান্ডে ওমিক্রনের সংক্রমণ : করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ফিনল্যান্ডে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে। এর আগে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যারা ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের অধিকাংশই আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে সেখানে গিয়েছিলেন। এবার ফিনল্যান্ডে যার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, তিনি সুইডেন থেকে সেখানে গিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যারা একই সঙ্গে সুইডেন থেকে ফিনল্যান্ডে এসে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের নমুনাও পরীক্ষা করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর