গাজা উপত্যকাকে শিশুদের জন্য কবরস্থান ও অনাহারের স্থান বানাচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর কমিশনার জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লেখেন, ইসরায়েল গাজায় একটি নিষ্ঠুর ও পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞের ফাঁদ তৈরি করেছে।
তিনি আরও লেখেন, ‘গাজার মানুষ এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যেখানে তাদের সামনে বেছে নেওয়ার মতো মাত্র দুটি পথ রয়েছে। ক্ষুধায় মারা যাওয়া অথবা গুলিতে প্রাণ হারানো।’ এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর বলছে, মে মাস থেকে গাজায় রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত খাদ্যসহায়তা কেন্দ্রেই নিহত হয়েছেন অন্তত ৭৯৮ জন। শুক্রবার সুইজারল্যান্ডে এক ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বলেন, ‘২৭ মে থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত ৭৯৮ জনকে হত্যার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৬১৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে জিএইচএফের ত্রাণগুলোর আশপাশে। আর ১৮৩ জনকে হত্যা করা হয়েছে ত্রাণ নিতে যাওয়ার পথে।’-আলজাজিরা
অন্যদিকে ফিলিস্তিনি ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলের তুর্কি কবরস্থানে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালিয়ে লাশ উত্তোলন করেছে। গুঁড়িয়ে দিয়েছে আশপাশের কবর ও শিবির। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গাজার ৬০টি কবরস্থানের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি তাদের।
ক্ষুধাসংকট ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে : যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় খাবারের অভাবে ক্ষুধাসংকট ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। শুক্রবার নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দপ্তরে একটি সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডব্লিউএফপির ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর কার্ল স্কাউ। তিনি বলেন, পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যা আমি আগে কখনো দেখিনি। স্কাউ জানান, গাজায় মানবিক সংকট এর আগে কখনো এত বেশি ছিল না। এমনকি জাতিসংঘের সহায়তা করার ক্ষমতাও কখনো এত সীমিত ছিল না বলেও জানান তিনি। ডব্লিউএফপির ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর বলেন, গাজাবাসীর মধ্যে পুষ্টিহীনতা বেড়ে চলেছে। সেখানকার ৯০ হাজার শিশুর জরুরিভাবে পুষ্টিহীনতার চিকিৎসা প্রয়োজন। এ ছাড়া গাজার প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন দিনের পর দিন না খেয়ে থাকছে বলেও জানান তিনি। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েল হামলা হওয়ার পর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধের জবাবে ইসরায়েল গাজায় ভয়াবহ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ১ লাখ ৩৭ হাজার জনের বেশি মানুষ। তা ছাড়া ঘরবাড়ি হারিয়েছে লাখ লাখ মানুষ।