আদানি গ্রুপ বনাম হিন্ডেনবার্গ গবেষণা নিয়ে বিশ্ব গণমাধ্যম জুড়েই চলছে আলোড়ন। আমেরিকার লগ্নি-সংক্রান্ত গবেষণাকারী সংস্থা হলো ‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ’। কোনো সংস্থার শেয়ার বিক্রিতে গলদ রয়েছে কি না, কিংবা বাজার থেকে সংস্থাগুলো যে ঋণ নিচ্ছে তাতে স্বচ্ছতা বজায় রয়েছে কি না, এই ধরনের বিভিন্ন বিষয় যাচাই করে দেখে এই সংস্থা।

‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ’-এর প্রতিষ্ঠাতা নাথান অ্যান্ডারসন। কানেকটিকাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগে স্নাতক পাস করেছেন তিনি। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ে পড়াশোনা শেষের পর ‘ফ্যাক্টসেট রিসার্চ সিস্টেমস আইএনসি’ নামে এক সংস্থায় কর্মজীবন শুরু করেন অ্যান্ডারসন। তবে আর্থিক সংস্থায় পা রাখার আগে ইসরায়েলে অ্যাম্বুলেন্স চালক হিসেবেও কাজ করেছেন অ্যান্ডারসন।

মূলত নিকোলার একটি ভিডিওকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন নাথান অ্যান্ডারসন। ভিডিওটিতে নিকোলার ইলেকট্রিক ট্রাকটিকে উচ্চগতিতে চলতে দেখা যায়। কিন্তু নাথান দাবি করেন, ট্রাকটি আসলে খাড়া পাহাড় থেকে নেমে আসছিল বলেই অমনটি দেখাচ্ছিল। হিন্ডেনবার্গের এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর, বিনিয়োগকারীদেরকে ভুয়া তথ্য দেওয়ার অভিযোগে নিকোলার প্রতিষ্ঠাতা ট্রেভর মিল্টনকে গত বছর দোষী সাব্যস্ত করে মার্কিন এক জুরি।

এবার তার গবেষণায় নাস্তানাবুদ ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানি। হিন্ডেনবার্গের দাবি, গৌতম আদানি ও তার নেতৃত্বাধীন আদানি গ্রুপের ঘাড়ে বিপুল পরিমাণে ঋণের বোঝা রয়েছে। এই গ্রুপ ‘বহু বছর ধরেই অভাবনীয় স্টক ম্যানিপুলেশন এবং অ্যাকাউন্টিং জালিয়াতিতে জড়িত।’ আর হিন্ডেনবার্গের নাথান অ্যান্ডারসন সম্পর্কে ধারণা দিয়েছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।

১৯৩৭ সালে মার্কিন বাজারে অন্যতম আর্থিক কেলেঙ্কারি ছিল ‘হিন্ডেনবার্গ কান্ড’। সেই ঘটনার সূত্রেই নিজের সংস্থার নাম দিয়েছেন নাথান। অর্থাৎ, তাঁর সংস্থার লক্ষ্য, এমন সব আর্থিক ফাঁক খুঁজে বের করা, যা ধরতে পারলে আগে থেকেই বিপর্যয়ের সম্ভাবনা চিহ্নিত করা যায়। তবে মজার বিষয় হলো, নাথান আরেক সাক্ষাৎকারে নিজের রোল মডেল হিসেবে হ্যারি মার্কোপোলোসের কথা উল্লেখ করেন। যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ জালিয়াতির জন্য দোষী সাব্যস্ত হওয়া বার্নি ম্যাডফের প্রতারণার বিষয়টি সর্বপ্রথম প্রকাশ্যে আনেন এই হ্যারি। ২০১৭ সালে একটি ফরেনসিক আর্থিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে হিন্ডেনবার্গ প্রতিষ্ঠা করেন নাথান।

হিন্ডেনবার্গ জানিয়েছে, কোম্পানি সম্পর্কে প্রতিবেদন তৈরিতে হুইসেলব্লোয়ার এবং প্রাক্তন কর্মীরা সহায়তা করেছেন।

হিন্ডেনবার্গ বলছে, আদানি গ্রুপের প্রতিবেদন তৈরিতেও এই একই পন্থায় তাদেরকে প্রাক্তন কর্মীরা সহায়তা করেছে, সেই সঙ্গে প্রচুর নথিপত্র ঘেঁটেছে তারা। আসলে হিন্ডেনবার্গ চাইছে আদানি গ্রুপ যাতে তাদের বিরুদ্ধে নিউইয়র্কে কোনো মামলা ঠুকে দেয়। এতে করে আদানির কিছু নথিও তাদের হাতে আসবে, যা থেকে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে গ্রুপটি। ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১৬টি কোম্পানির সম্ভাব্য অন্যায় কার্যকলাপকে চিহ্নিত করেছে হিন্ডেনবার্গ। নিউইয়র্ক ভিত্তিক ফার্মটির দাবি, তারা আদানির বিনিয়োগ এবং স্টকগুলো ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করে ২ বছরে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। গৌতম আদানিকে ‘দীর্ঘতম এবং সবচেয়ে বড় করপোরেট প্রতারক’ হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে হিন্ডেনবার্গ।