মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
তুরস্ক ভূমিকম্প

নবজাতককে নিয়ে অলৌকিক বেঁচে থাকার গল্প

নবজাতককে নিয়ে অলৌকিক বেঁচে থাকার গল্প

তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় হাতায় প্রদেশের একটি বাড়িতে সপরিবার থাকতেন নেচলা কামুজ। ওই নারী ২৭ জানুয়ারি দ্বিতীয় ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। নাম রাখা হয় ইয়াগিজ। এর অর্থ ‘সাহসী’। ছেলের জন্মের ১০ দিন পর ৬ ফেব্রুয়ারি ভোরে সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছিলেন। স্থানীয় সময় ৪টা ১৭ মিনিটে হঠাৎই শক্তিশালী ভূমিকম্পে ভবনটি বিধ্বস্ত হয়। নবজাতকসহ তিনি ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়েন। চার দিন পর নবজাতকসহ জীবিত উদ্ধার হন তারা। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ধ্বংসস্তূপে থাকাকালীন সেই দুঃসহ স্মৃতি বর্ণনা করেছেন এই নারী। তবে এ ধরনের ঘটনা হামেসাই ঘটছে সপ্তাহজুড়ে। এগুলোকে ‘অলৌকিক’ ছাড়া অন্য কোনো উপমা দেওয়া সম্ভব নয়। নেকলা এবং তার পরিবার সামান্দাগ শহরে একটি আধুনিক পাঁচ তলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় থাকতেন। তিনি বলেন, ‘যখন ভূমিকম্প শুরু হয়েছিল, আমি আমার স্বামীর কাছে যেতে চেয়েছিলাম যিনি অন্য ঘরে ছিলেন এবং তিনিও সেটাই চেয়েছিলেন। কিন্তু যখন তিনি আমাদের অন্য ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে আমার কাছে আসার চেষ্টা করেছিলেন, তখন ওয়ারড্রবটি তাদের ওপর আছড়ে পড়ে। তখন তাদের পক্ষে নড়াচড়া করা অসম্ভব ছিল।’ ‘ভূমিকম্প যত ভয়াবহ রূপ নেয় তখন দেয়াল ভেঙে পড়ে। ঘরটি ভীষণ কাঁপছিল। যখন কম্পন থামে, আমি বুঝতে পারিনি যে, আমি এক তলা নিচে পড়ে গিয়েছি। ৩৩ বছর বয়সী এই নারী নিজেকে তার বাচ্চা বুকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকা অবস্থায় আবিষ্কার করেন।

প্রথম দিনের বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে ঘরের পোশাক পরা অবস্থায় আটকে ছিলেন নেকলা। ঘুটঘুটে কালো ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাননি তিনি। নিজের স্বস্তির জন্য, তিনি একটি কথাই আওড়াতেন যে, ইয়াগিজ এখনো শ্বাস নিচ্ছে। এভাবে অনেক সময় কেটে যায়। এরমধ্যে দূর থেকে তিনি কণ্ঠস্বর শুনতে পান। সাহায্যের জন্য তিনি চিৎকার করার চেষ্টা করছিলেন এবং ওয়ারড্রবে ঠুং ঠুং শব্দ করছিলেন। কিন্তু তখনো কেউ তাদের সাহায্য করার জন্য আসেনি। এরমধ্যে ওইটুকু জায়গায় সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু নিজের জন্য কোনো পানি বা খাবার পাননি তিনি। হতাশায়, তিনি তার নিজের বুকের দুধ পান করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলেন। এরমধ্যে হঠাৎ নেকলা মাথার ওপরে ড্রিলের গর্জন অনুভব করেন। এরমধ্যে হতাশাও কাজ করে, নেকলা ভাবতে পারেননি যে, তিনি ধ্বংসস্তূপ থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন। অতঃপর উদ্ধার, মাটির নিচে ৯০ ঘণ্টারও বেশি সময় পর, নেকলা কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ শুনতে পান। হঠাৎ তার চোখের ওপর টর্চের আলো জ্বলে উঠলে অন্ধকার কেটে যায়। নেকলাকে হাসপাতালে নেওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা জানান, তাঁর স্বামী ইরফান ও তিন বছরের সন্তান ইগিত কেরিমকেও ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর