ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের এক বছর এক দিন পার হলো। এরপর সেই যুদ্ধের বিরতির আহ্বান জানাল রাশিয়ার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত চীন। গতকাল চীন এ আহ্বান জানায়। এ যুদ্ধ বন্ধে চীন ১২টি প্রস্তাব তুলে ধরে। তবে চীন মনে করে, ইউক্রেন সরকারের মিত্র দেশগুলো তুলে ধরা এ ১২টি প্রস্তাবসহ যুদ্ধ বিরতিতে সম্মত নাও হতে পারে।
চীন বলছে, সব পক্ষের উচিত রাশিয়া এবং ইউক্রেনকে যত দ্রুত সম্ভব সংলাপে বসানোর ব্যবস্থা করা। যাতে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যায়। একই সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো হবে প্রধান লক্ষ্য।
তবে চীনের এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্র। ন্যাটোর মহাসচিব জেন্স স্টোলটেনবার্গ বলেছেন, চীনের শান্তি আলোচনার আহ্বানের খুব একটা বিশ্বাসযোগ্যতা নেই।
এদিকে প্রকৃতপক্ষে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ হোক এমন কোনো কার্যক্রম চীনও দেখাচ্ছে না। বরং গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে প্রস্তাব তোলা হয়। সেখানে ১৪৭টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে রায় দিলেও সাতটি দেশ বিপক্ষে রায় দেয়। আর ৩২টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে বা বিপক্ষে ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল। তার মধ্যে চীন অন্যতম।
এদিকে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রথম দেশ হিসেবে ইউক্রেনে লেপার্ড ট্যাংক পাঠিয়েছে পোল্যান্ড। গতকাল ট্যাংক পাঠানোর কথা জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদা।
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের একটি শহর
১২ দফা শান্তি প্রস্তাবে কী আছে : যুদ্ধের বর্ষপূর্তিতে চীন জানিয়েছে, ইউক্রেন সংকট নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া ঠেকাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে চায় বেইজিং। এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবনাগুলো তুলে ধরেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। শান্তি পরিকল্পনার প্রথমেই আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া এবং রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা অবসানের আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ছাড়া পারমাণবিক স্থাপনার নিরাপত্তা, বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নিতে মানবিক করিডোর গঠনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের বন্দরগুলো দিয়ে শস্য রফতানি মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়ে আসছে। জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় শস্য রফতানি চালু থাকলে এখনো স্বাভাবিক হয়ে উঠেনি। ফলে চীন তার ১২ দফার প্রস্তাবনার মধ্যে এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে জানিয়েছে, বৈশ্বিক খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে বিঘ্নিত শস্য রফতানি নিশ্চিতে সবাইকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। শান্তি প্রস্তাবে সব দেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা নিশ্চিতের ওপর জোর দিয়েছে বেইজিং।
প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান ন্যাটোর : এস্তোনিয়া সফরে থাকা ন্যাটো মহাসচিব জেন্স স্টোলটেনবার্গের কাছে ইউক্রেন ইস্যুতে চীনের ১২ দফা প্রস্তাব সম্পর্কে জানাতে চাওয়া হয়েছিল। এতে বেইজিং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, আলোচনা শুরুর জন্য শর্ত ও মঞ্চ তৈরি করার জন্য। ন্যাটো মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেছেন, ইউক্রেনে অবৈধ আক্রমণের নিন্দা জানাতে সক্ষম হয়নি চীন। এ ছাড়া আক্রমণের মাত্র কয়েক দিন আগে রাশিয়ার সঙ্গে সীমাহীন অংশীদারত্বের বিষয়ে চীন ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। ফলে চীনের খুব একটা বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। ইউক্রেনকে পশ্চিমাদের অস্ত্র সরবরাহ নিয়ে চীনের সমালোচনাকে আক্রমণ করে জেন্স স্টোলটেনবার্গ বলেন, আজকে সামরিক সহযোগিতা দেওয়ার অর্থ হলো আগামী দিন শান্তিপূর্ণ চুক্তি অর্জনের পথ।