শনিবার, ২০ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা
বিবিসির প্রতিবেদন

যুক্তরাষ্ট্র কি ঋণখেলাপি হচ্ছে

যুক্তরাষ্ট্র কি ঋণখেলাপি হচ্ছে

অর্থনীতিবিদদের মতে, গোটা বিশ্বই এখন অর্থনীতির মারাত্মক ঝুঁকির মধ্য দিয়ে পার করছে। প্রভাবশালী অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রও এর বাইরে নেই। দেশটির সরকার এখন এমন চরম অচলাবস্থার মধ্যে আটকে আছে। এ সমস্যা এখন আটকে আছে ঋণের সর্বোচ্চ সীমার মধ্যে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের জন্য ঋণের যে সর্বোচ্চ সীমা (ডেট সিলিং) বেঁধে দেওয়া আছে, তা আরও বাড়ানো হবে কি না এ নিয়ে দেশটির দুই প্রধান রাজনৈতকি দল ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দুই পক্ষই যার যার অবস্থানে অনড়। যদি এ অচলাবস্থার কোনো সমাধান না হয়, তাহলে এর জন্য বিশ্ব অর্থনীতিকে হয়তো এযাবৎকালের সবচেয়ে চরম মূল্য দিতে হতে পারে। ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানরা যদি যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে আরও অর্থ ধার করতে দিতে রাজি না হয় বা তাদের ভাষায়- ঋণের সর্বোচ্চ সীমা না বাড়ায়, তাহলে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির এই দেশ তাদের ৩১ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ঋণখেলাপি হবে। এরকম সমঝোতায় পৌঁছানোর সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। আগামী ১ জুনের মধ্যে যেভাবেই হোক এ অচলাবস্থার নিরসন করতে হবে। যদি তা না হয়, ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্ট হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, এর পরিণতি হবে মারাত্মক বিধ্বংসী। যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ঋণখেলাপি হলে এর কী প্রভাব পড়বে মার্কিন ও বিশ্ব অর্থনীতিতে? এতে গোটা দুনিয়ার সাধারণ মানুষের ওপরই বা কী প্রভাব পড়বে?

ডেট সিলিং বা ঋণের সর্বোচ্চ সীমা কী? : যুক্তরাষ্ট্রে আইন করে নির্দিষ্ট করা আছে, সরকার সর্বোচ্চ কী পরিমাণ অর্থ ধার করতে পারবে। সরকারের ব্যয়ের বড় খাতগুলো হচ্ছে ফেডারেল সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, সামরিক ব্যয়, সোশ্যাল সিকিউরিটি, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি। এর সঙ্গে আছে সরকারের জাতীয় ঋণের কিস্তি এবং এর সুদ পরিশোধ ও ট্যাক্স রিফান্ড ইত্যাদি। বেশ কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সর্বোচ্চ ব্যয়ের সীমা বাড়ানো হচ্ছে, কারণ সরকার আসলে যা আয় করছে, তার চেয়ে বেশি ব্যয় করছে। ঋণ করার সর্বোচ্চ সীমা এখন বেঁধে দেওয়া আছে ৩১ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলারে। কিন্তু গত জানুয়ারিতেই যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি ঋণ এ সীমায় পৌঁছে গেছে। কিন্তু সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় অন্য কিছু উপায়ে সরকারকে বাড়তি অর্থ জোগান দিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়ালেন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদি সরকার আরও অর্থ ধার করতে না পারে, তাহলে ১ জুনের মধ্যেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে যে, সরকার হয়তো আর তার ধারদেনা-দায় পরিশোধ করতে পারবে না।

অর্থনীতিতে যে প্রভাব পড়বে : প্রথমেই বলে নেওয়া ভালো, বিবিসি যত বিশেষজ্ঞের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছে, তারা কেউই মনে করেন না যে, যুক্তরাষ্ট্র ঋণখেলাপি হবে। কিন্তু যদি ঋণখেলাপি হয়, তখন কী? একটি ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ‘প্যানমিউর গর্ডন’-এর প্রধান অর্থনীতিবিদ সাইমন ফ্রেঞ্চের ভাষায়, যদি এরকম কিছু আসলেই ঘটে, তখন এ বিপর্যয়ের তুলনায় ২০০৮ সালের বিশ্ব ব্যাংকিং ও আর্থিক সংকটকে এক সামান্য বিষয় মনে হবে। ১৫ বছর আগে ২০০৮ সালের ওই সংকটের সময় বিশ্বের বড় বড় বহু ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে মারাত্মক মন্দা দেখা দিয়েছিল।

যদি যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের ঋণের সর্বোচ্চ সীমা বাড়ানো না হয়, তখন সরকার আর নতুন করে অর্থ ধার করতে পারবে না। এর ফলে দ্রুত সরকারের হাতে অর্থ ফুরিয়ে যাবে, তারা আর দায়-দেনা পরিশোধ করতে পারবে না, জনগণকে যেসব সুযোগ-সুবিধা-সেবা দিতে হয়, সেগুলোও অব্যাহত রাখতে পারবে না। মার্কিন সরকার ঋণখেলাপি হলে তার চাইতে বহুগুণ বড় অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে। এ জে বেল বলে একটি প্রতিষ্ঠানের ইনভেস্টমেন্ট ডিরেক্টর রাস মোল্ড বলেন, ‘তখন সরকার বাধ্য হবে জনগণকে কল্যাণ ভাতা এবং অন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা দেয়, যে সাহায্য দেয় তা বন্ধ করতে। এর ফলে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবে, মানুষ তাদের ব্যয় মেটাতে পারবে না। আর পরিণামে মার্কিন অর্থনীতিতে এর ধাক্কা লাগবে।’

হোয়াইট হাউসের ‘কাউন্সিল অব ইকোনমিক অ্যাডভাইজার্স’ হিসাব করে দেখেছে, সরকার যদি একটা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ঋণের সীমার ব্যাপারে কোনো সমাধানে পৌঁছাতে না পারে, মার্কিন অর্থনীতি ৬ দশমিক ১ শতাংশ পর্যন্ত সংকুচিত হতে পারে।

সর্বশেষ খবর