ইউক্রেনের ইজমাইলে দানিয়ুব নদীর ওপর বন্দর স্থাপনায় রাশিয়া ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এ স্থাপনাটি পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিরক্ষা জোট ন্যাটোর সদস্য দেশ রোমানিয়ার সীমান্ত থেকে অল্প কিছু দূরে। এ হামলায় একটি শস্য-গুদাম, একটি ভবন এবং শস্য ওঠানো-নামানোর কাজে ব্যবহৃত একটি লিফট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে হওয়া একটি সমঝোতা চুক্তি থেকে মস্কো বের হয়ে যাওয়ার পর রাশিয়া ইউক্রেনের বন্দরগুলোতে আক্রমণ চালাতে শুরু করেছে। এ চুক্তির আওতায় দুটি দেশ কৃষ্ণ সাগর দিয়ে নিরাপদে খাদ্যশস্য রপ্তানি করতে পারত।
ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর দাবি, ইরানের তৈরি শাহেদ-১৩৬ ড্রোন ব্যবহার করে আজভ সাগর থেকে কৃষ্ণ সাগর হয়ে ওডেসা অঞ্চলে হামলা চালানো হয়েছে।
আঞ্চলিক গভর্নর ওলেগ কিপার বলেন, ড্রোন হামলায় ওডেসা বন্দরের অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।
এদিকে কিয়েভের সামরিক প্রশাসন গতকাল সকালে বলেছে, রাজধানী শহরটিতে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে রাশিয়ার ছোড়া ১০টির বেশি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। কিয়েভের প্রশাসনিক প্রধান সেরগি পোপকো বলেন, শহরটি লক্ষ্য করে বিভিন্ন দিক থেকে একযোগে কয়েকটি ড্রোন ছোড়া হয়েছিল। ১০টির বেশি চালকবিহীন বিমান (ড্রোন) শনাক্ত করামাত্রই স্থানীয় আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী সেগুলো ধ্বংস করেছে।
এদিকে রোমানিয়ার প্রেসিডেন্ট ক্লাউস ইওহান্নিস রাশিয়ার এই হামলার নিন্দা করে বলেছেন, ‘রোমানিয়ার সন্নিকটে’ ইউক্রেনের অবকাঠামোর ওপর এ ধরনের আক্রমণ গ্রহণযোগ্য নয়। ইউক্রেনের বিমানবাহিনী বলেছে, রাশিয়ার ড্রোনগুলো রাতের বেলায় দানিয়ুব নদীর দিকে অগ্রসর হচ্ছিল, যেখানে ইজমাইল ও রেনি- ইউক্রেনের এই দুটো বন্দর অবস্থিত। ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড বলেছে, এসব ড্রোন ধ্বংস করার জন্য তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে সক্রিয় ছিল। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেখানে কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’ ইউক্রেনের আঞ্চলিক নেতা সোশ্যাল মিডিয়াতে ক্ষয়ক্ষতির কয়েকটি ছবি পোস্ট করেছেন, যা দেখে বোঝা যাচ্ছে কয়েকটি টার্গেটে এই হামলা চালানো হয়েছে।
গত সপ্তাহেও রাশিয়ার ছোড়া ড্রোন রেনি বন্দরের শস্য-গুদামে আঘাত করেছিল। এ বন্দরটিও দানিয়ুব নদীর আরও উজানে এবং রোমানিয়ার ভূখে র কাছে। এর আগে রাশিয়া কৃষ্ণ সাগরে বৃহৎ সমুদ্র বন্দর ওডেসা এবং চরনোমর্স্কেও হামলা চালিয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, এসব হামলায় ৬০ হাজার টন খাদ্যশস্য বিনষ্ট হয়েছে।
গত জুলাই মাসে শস্য চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় রাশিয়ার পক্ষ থেকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল যে, তারা ইউক্রেনের কৃষ্ণ সাগর বন্দরের অভিমুখে অগ্রসরমান যে কোনো নৌযানের ওপর আক্রমণ চালাবে, যা কার্যত নৌ-অবরোধের পর্যায়ে পড়ে। এর পর থেকে দানিয়ুব নদীকে শস্য পরিবহনের বিকল্প রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল।
বিশ্বে গম ও ভুট্টা রপ্তানির ক্ষেত্রে ইউক্রেন শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর একটি। এর বেশিরভাগ চালানই পাঠানো হয় কৃষ্ণ সাগরে অবস্থিত দেশটির বিভিন্ন বন্দর থেকে। জাহাজ চলাচলের জন্য কৃষ্ণ সাগর বন্ধ হয়ে গেলে ইউক্রেনের শস্য রপ্তানির জন্য এই দানিয়ুব নদী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শস্য চুক্তি থেকে রাশিয়ার বের হয়ে যাওয়ার পর বিশ্ববাজারে তাৎক্ষণিকভাবে গমের মূল্য বেড়ে যায়।