ব্রাজিলে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনের শেষ দিনে পুরো সম্মেলন ভেস্তে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। চুক্তিতে জীবাশ্ম জ্বালানির উল্লেখ থাকবে কি না, এই নিয়ে তীব্র বিরোধ দেখা দিয়েছে। শুক্রবার ব্রাজিল থেকে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
কপ৩০-এর মূল লক্ষ্য হলো গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ দ্রুত কমানোর পথ তৈরি করা। ক্রমবর্ধমান চরম আবহাওয়ার মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এখনো কার্যকর, এটা প্রমাণ করাই ছিল এর মূল উদ্দেশ্য। প্রায় দুই সপ্তাহের আলোচনার পর আয়োজক ব্রাজিল নতুন খসড়া প্রকাশ করেছে। এতে ‘ফসিল ফুয়েল’ বা ‘রোডম্যাপ’ শব্দের কোনো উল্লেখ নেই। অথচ প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা নিজেই প্রকাশ্যে এই রোডম্যাপের পক্ষে ছিলেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু কমিশনার ভপকে হোকস্ত্রা বলেছেন, এই প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। তার মতে, সম্মেলন কোনো চুক্তি ছাড়াই শেষ হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি ভারাক্রান্ত মনে বলছি, এখন টেবিলে যা আছে, তা স্পষ্টত কোনো চুক্তিই নয়।’ এক ইউরোপীয় প্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, চুক্তি প্রত্যাখ্যান করায় তাদের ‘খলনায়ক’ বানানো হচ্ছে। কেউ কেউ সম্মেলন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথাও ভাবছেন। -এএফপি
আবার অনেকে শঙ্কা করছেন যে, আলোচনায় ভাঙন এলে এর দায় তাদের ওপরই পড়বে। সম্মেলন বৃহস্পতিবার কয়েক ঘণ্টা বন্ধ ছিল। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ভেন্যুর ছাদে বড় গর্ত হয়ে যায়। এর আগে আদিবাসী নেতৃত্বে দুটি বিক্ষোভও সম্মেলন ব্যাহত করে। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সময় পেরিয়ে গেছে। অনেক দেশ প্রতিনিধিদলকে হোটেলে পাঠিয়েছে। এ সম্মেলন সপ্তাহের শেষ দিন পর্যন্ত গড়াতে পারে। ধনী দেশ, উদীয়মান অর্থনীতি ও ছোট দ্বীপরাষ্ট্রসহ ৩৬টি দেশ ব্রাজিলকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে যে, তেল, কয়লা ও গ্যাস থেকে সরে আসার পরিকল্পনা ছাড়া তারা কোনো চুক্তি মানবে না। ফ্রান্সের পরিবেশ রূপান্তরমন্ত্রী মনিক বারবুত বলেন, তেলসমৃদ্ধ রাশিয়া ও সৌদি আরব, কয়লা উৎপাদক ভারত এবং আরও অনেক উদীয়মান দেশ এটা আটকে দিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার বিশেষ দূত অরুণাভ ঘোষ বলেন, এক পক্ষকে পরিবেশবান্ধব আর অন্য পক্ষকে পরিবেশবিরোধী বলাটা আলোচনার চেতনাকে ক্ষতি করে। তিনি জানান, রোডম্যাপ বাদ দেওয়ার কারণ হলো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রায় ২০০ দেশের ঐকমত্য ছাড়া কোনো চুক্তি সম্ভব নয়। এবারের সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র নেই। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনুষ্ঠান এড়িয়ে গেছেন।