প্রবল বর্ষণে ভারতের দুই নগরী মুম্বাই ও পুণের জনজীবন থমকে গেছে। মহারাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চল ও কোংকন উপকূলে জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা। ভারতের বাণিজ্য নগরী মুম্বাইয়ে জারি করা হয়েছে হলুদ সতর্কতা। পাশাপাশি কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে পুণে, পালঘর, থানে, সাতারা, কোলাপুর, রায়গড় ও রত্নগিরি এলাকায়। এসব জায়গায় আরও ৪-৫ দিন অতি ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা। প্রবল বর্ষণের ফলে উলাশ, কালু নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। আবহাওয়া দপ্তর জানায়, ২৮ জুলাই পর্যন্ত আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকবে ও বৃষ্টিপাত চলবে।
মুম্বাই নগরীর আন্ধেরী সাবওয়েতে প্রায় ১ থেকে দেড় ফুট পানি জমে যাওয়ার মেট্রো চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ওই এলাকায় যানবাহনের গতিপথ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে ইস্টার্ন এক্সপ্রেস হাইওয়েতে যানজট চলছে, পাঁচ মিনিটের পথ যেতে সময় লাগছে আধাঘণ্টা। রাস্তায় দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ার কারণে ভর দুপুরেও হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। মুম্বাই মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন জানিয়েছে, টানা বৃষ্টিপাতে বৃহস্পতিবার ভোর নাগাদ স্থানীয় ‘বিহার লেকে’র পানি উপচে পড়ায় লেক পাশের এলাকাগুলো প্লাবিত হয়। গোটা মুম্বাই শহরে যে সাতটি লেক থেকে পানি সরবরাহ করা হয়, তার মধ্যে অন্যতম এই বিহার লেক। ভারী বৃষ্টিপাত এবং জলাবদ্ধতার কারণে মুম্বাইয়ের ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামা বিঘিœত হচ্ছে। বৃষ্টি ও দৃশ্যমানতা কম থাকার কারণে বুধবার বেশ কিছু বিমান বাতিল করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ইন্ডিগো এয়ারলাইনস টুইট করে তাদের যাত্রীদের নিয়মিত আপডেট তথ্যের দিকে নজর রাখতে অনুরোধ করেছে।
এয়ার ইন্ডিয়া জানায়, ভারী বৃষ্টিপাত তাদের বিমান পরিষেবাতেও ব্যাঘাত করতে পারে। সেক্ষেত্রে যানজট এড়াতে সব যাত্রীকে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বিমানবন্দরে আসতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে পুণে ও পার্শ্ববর্তী পিম্পরি চিঞ্চওয়াড়ের কিছু অংশে অবিরাম বর্ষণের কারণে বৃহস্পতিবার সকালে বন্যার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বৃষ্টিজনিত ঘটনায় এখনো পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদিন ভোরে ডেকান জিমখানা এলাকার পুলাচি ওয়াড়িতে প্রবল বৃষ্টির সময় পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
অন্যদিকে মাভাল তহসিলের আদারওয়াদি গ্রামে একটি ভূমিধসে এক রেস্টুরেন্ট কর্মচারীর মৃত্যু হয়েছে এবং অন্য আরেক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশে পুণে শহর এবং পার্শ্ববর্তী পিম্পরি চিঞ্চওয়াড়, ভোড়, ভেলহে, মাভাল মুলশি এবং খড়কওয়াসলা এলাকার সব স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একাধিক জায়গায় জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ায় সব পর্যটন স্থল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি অফিস এবং শিল্প কারখানাগুলোকেও বন্ধ রাখার আবেদন করা হয়েছে। তার বদলে সেসব প্রতিষ্ঠানের সব কর্মচারীকে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মুম্বাই পুণে, থানে, কোলাপুরসহ এলাকার মানুষকে বাইরে না বেরোনোর আরজি জানিয়েছেন মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ার। সেই সঙ্গে দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী এবং জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দুর্গত এলাকাগুলোতে পরিদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
রায়গড়-পুণে সড়কপথে তামিনী ঘাট এলাকায় ভূমিধসের কারণে ব্যাহত হয়েছে যান চলাচল। মুম্বাই, পুণেসহ বিভিন্ন এলাকায় পানিতে আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধারে রাবার বোট ব্যবহার করা হচ্ছে।