এক মাস পেরোলো ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় এক নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যা ঘটনার। কিন্তু আজও ওই ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা যায়নি। আর এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলছে দেশজুড়ে বিশেষ করে কলকাতায়। ওই ঘটনার প্রতিবাদে জুনিয়র চিকিৎসকরা এক মাস ধরে চিকিৎসাসেবা বন্ধ রেখেছে। রাজ্যের রিপোর্ট বলছে, ২৮ দিন ধরে চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে এখনো পর্যন্ত ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, যথেষ্ট চিকিৎসা পরিষেবা না পাওয়ায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বারবার আর্জি জানিয়েছেন চিকিৎসকদের কাজে ফিরতে। তার পরেও চলছে টানা প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। এদিকে গতকাল সুপ্রিম কোর্টের দ্বিতীয় শুনানিতে দেশের শীর্ষ আদালতও একই বার্তা দিল। মনে করিয়ে দিল, চিকিৎসা প্রদান চিকিৎসকদের প্রধান কাজ, তাই পরিস্থিতি বিচারে এবার কাজে ফিরতে হবে তাদের। তার জন্য সময়ও বেঁধে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। গতকাল আরজি কর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, মঙ্গলবার বিকাল ৫টার মধ্যে চিকিৎসকদের কাজে যোগ দিতে হবে। এ সময়সীমা কেউ অগ্রাহ্য করলে তার বিরুদ্ধে বিরূপ পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও সতর্ক করেছেন আদালত। শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, ‘বাস্তব পরিস্থিতি কী চলেছে আমরা সবাই জানি। কিন্তু ডাক্তারদের কাজে ফিরতে হবে।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ‘চিকিৎসকদের প্রথম কাজ চিকিৎসা করা।
তাদের নিরাপত্তার নির্দেশ আমরা দিয়েছি। তারা কাজে যোগ না দিলে আমরা প্রত্যেককে নোটিস দেব।’ এরপরই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে বিচারপতি বলেন, ‘আপনারা নিশ্চিত করুন, যে চিকিৎসকরা কাজে যোগ দেবেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। এমনকি তাদের বদলি করাও যাবে না।’ এদিকে ভারতে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার বিচারের দাবিতে রবিবার বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার প্রবাসী ভারতীয় বিক্ষোভ করেছেন। সংগঠকরা জানিয়েছেন, রবিবার এ দাবি জানিয়ে বিশ্বের ২৫টি দেশের ১৩০টিরও বেশি শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। রয়টার্স জানায়, প্রথমে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, তাইওয়ান ও সিঙ্গাপুরে ছোটবড় বিভিন্ন দল বিক্ষোভ শুরু করার পর ক্রমে তা ইউরোপের ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে আরজি কর মেডিকেল কলেজের ঘটনায় ইতোমধ্যে সাবেক অধ্যক্ষসহ এক সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী বিক্ষোভের সংগঠক দীপ্তি জৈন বলেন, ‘দায়িত্বরত একজন তরুণ ইন্টার্ন চিকিৎসকের ওপর এই জঘন্য, নির্মম, নৃশংসতায় আমরা বাকরুদ্ধ।’ নিহত চিকিৎসক গত ৮ আগস্ট টানা ৩৬ ঘণ্টার ডিউটিতে ছিলেন, রাতে সহকর্মীদের সঙ্গে খাবার খেয়ে তিনি পালমোনোলজি বিভাগের সেমিনার হলে বিশ্রাম নিতে যান।পরদিন সকালে তার জুনিয়র সহকর্মীরা ওই হলের ভিতরেই তার অর্ধনগ্ন লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। ওই তরুণীর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ তাদের প্রথমে জানিয়েছিল তাদের মেয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেছে। পরে অবশ্য তীব্র ক্ষোভের মুখে পুলিশ এ ঘটনায় খুন ও ধর্ষণের মামলা দায়ের করেছে। এ ঘটনায় আরজি কর মেডিকেল কলেজের পদত্যাগকারী অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে। তিনিও বিষয়টি ‘আত্মহত্যা’ বলে ধামাচাপা দিতে চেয়েছিলেন।