‘ওয়াক্ফ (সংশোধন) আইন’ নিয়ে গতকাল কোনো অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশের নির্দেশ দেননি ভারতের শীর্ষ আদালত। আজ ফের আদালতে এ মামলার শুনানি হবে। ওয়াক্ফ (সংশোধন) অইনের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে ভারতের শীর্ষ আদালতে এখন পর্যন্ত ৭৩টি পিটিশন জমা পড়েছে। তারই শুনানি ছিল এদিন।
গতকাল দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের শীর্ষ বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চে এ মামলার শুনানি শুরু হয়। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি সঞ্জয় কুমার ও বিচারপতি কে ভি বিশ্বনাথন। এ শুনানিতে কেন্দ্রের তরফে উপস্থিত ছিলেন সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা, অন্যদিকে মামলাকারীদের তরফে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট কপিল সিব্বল, অভিষেক মনু সিংভি, রাজীব দাভেন প্রমুখ। এ পিটিশনে যেমন সাম্প্রতিক বিলের সংশোধনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, ঠিক সেভাবেই ১৯৯৫ সালের মূল ওয়াক্ফ আইনের বিরুদ্ধে হিন্দু পক্ষের দায়ের করা দুটি পিটিশন রয়েছে, আবার আইনটির—পর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশও চেয়েও কেউ কেউ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। আবেদনকারীদের মধ্যে রয়েছে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিআই, রাষ্ট্রীয় জনতা দল, জনতা দল ইউনাইটেড, আসাদুদ্দিন ওয়াইসির ‘অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন’, জগনমোহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেস, অভিনেতা বিজয়ের ‘তামিলগা ভেত্রি কাঝাগাম’-এর মতো রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দসহ অন্য কিছু মুসলিম সংগঠন।
এদিন শীর্ষ আদালত মূলত তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দেন। প্রথমত. যতদিন পর্যন্ত এ মামলা চলছে, ততদিন অবধি আদালত কর্তৃক ওয়াক্ফ ঘোষিত সম্পত্তি ‘ডিনোটিফাই’ (রদবদল) করা যাবে না।
দ্বিতীয়ত. কোনো সম্পত্তি ওয়াক্ফ নাকি সরকারি, সংশ্লিষ্ট জেলা শাসকের নির্দেশে তদন্ত চলাকালে সেই সম্পত্তি ওয়াক্ফ বলে গণ্য করা হবে না বলে সংশোধন আইনে যেটা উল্লেখ রয়েছে, এখন সে নির্দেশ কার্যকর হবে না। তৃতীয়ত. ওয়াক্ফ বোর্ড এবং কেন্দ্রীয় ওয়াক্ফ কমিটির সব সদস্যকে মুসলিম হতে হবে। এ ক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম সরকারি কর্মকর্তারা বা কোনো পক্ষের প্রতিনিধি হওয়ার দরুন যারা আপনাআপনি বোর্ডের সদস্যপদ পান। তাদের ক্ষেত্রে ধর্মপরিচয় বাধ্যতামূলক নয়।
সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতাকে প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন-‘হিন্দুদের দাতব্য ট্রাস্টের বোর্ডে মুসলিমদের কি জায়গা হবে? সংবিধানের ২৬ নম্বর ধারায় ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে। এটা সব সম্প্রদায়ের জন্যই প্রযোজ্য।’
উল্লেখ্য, ২ এপ্রিল ভারতের লোকসভায় পাস হয় বিতর্কিত ‘ওয়াক্ফ (সংশোধন) বিল-২০২৫’। পরদিন ৩ এপ্রিল রাজ্যসভায় এ বিল পাস হয়। ৫ এপ্রিল সে বিলে দেশটির রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর স্বাক্ষরের পর তা আইনে পরিণত হয়। ৮ এপ্রিল থেকে গোটা দেশে কার্যকর হয় ওয়াক্ফ আইন।
যদিও এ আইনের প্রতিবাদে গোটা ভারতেই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বা বিক্ষোভ হলেও পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে তা সহিংসতার চেহারা নেয়, তাতে তিনজনের মৃত্যু হয়। পাশাপাশি পুলিশ ও ট্রেন লক্ষ করে পাথর নিক্ষেপ, সম্পত্তি নষ্ট, বাড়ি-দোকান ভাঙচুর, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, গুলি চালানোর মতো ঘটনা ঘটে।