মিরাজের রাতে নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে পূর্ববর্তী নবী ও রাসুল (আ.)-এর সাক্ষাৎ হয়। এ সময় তাঁরা নবীজি (সা.)-এর ইমামতিতে নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে উপস্থিত নবী-রাসুলরা আল্লাহর প্রশংসা করেন। কিন্তু সবার প্রশংসার ভেতর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রশংসাটাই ছিল সর্বোত্তম।
নিম্নে কয়েকজন নবী-রাসুলের স্তুতিবাক্যসহ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর স্তুতিবাক্য উল্লেখ করা হলো।
ইবরাহিম (আ.)-এর প্রশংসা : তিনি বলেন, ‘সব প্রশংসা সেই পবিত্র সত্তার জন্য, যিনি আমাকে তাঁর বন্ধু বানিয়েছেন আর আমাকে বিশাল রাজত্ব দান করেছেন। আর ইমাম ও নেতা বানিয়েছেন। তিনি আমার জন্য আগুনকে শীতল ও শান্তিদায়ক করেছেন। ’
মুসা (আ.)-এর প্রশংসা : তিনি বলেন, ‘সব প্রশংসা সেই মহান সত্তার, যিনি বিনা মাধ্যমে আমার সঙ্গে কথা বলেছেন এবং ফিরাউনের সম্প্রদায়ের ধ্বংস ও নিশ্চিহ্নকরণ, বনি ইসরাঈলের পথ প্রদর্শন করার দায়িত্ব আমার ওপর ন্যস্ত করেছেন। আমার সম্প্রদায়ের মধ্যে এমন এক গোষ্ঠী তৈরি করেছেন, যারা সত্যপন্থী, সৎপথ প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করে থাকে। ’
দাউদ (আ.)-এর প্রশংসা : তিনি বলেন, ‘সব প্রশংসা সেই পবিত্র সত্তার জন্য, যিনি আমাকে বিশাল সাম্রাজ্য দান করেছেন, আমাকে জাবুর শিখিয়েছেন, লোহাকে আমার জন্য নরম করেছেন, পাহাড় ও পাখিকুলকে আমার প্রতি আকৃষ্ট করে দিয়েছেন যে আমার সঙ্গে তারা তাসবিহ পাঠ করে। আমাকে বিদ্যা ও জ্ঞান দান করেছেন এবং মনোমুগ্ধকর বক্তব্য পেশ করার যোগ্যতা দান করেছেন। ’
সুলায়মান (আ.)-এর প্রশংসা : তিনি বলেন, ‘সব প্রশংসা সেই মহান সত্তার, যিনি বায়ু, শয়তান ও জিনকে আমার অনুগত করেছেন, যাতে তারা আমার নির্দেশমতো চলে এবং পাখির ভাষা আমাকে শিখিয়েছেন। আর মানুষ, জিন, পশু, পাখির সৈন্যদের আমার অনুগত করেছেন। আমাকে এমন রাজত্ব দান করেছেন যে আমার পরে আর কাউকে এরূপ দেওয়া হবে না; আর যে রাজত্ব সীমাহীন। ’
ঈসা (আ.)-এর প্রশংসা : তিনি বলেন, ‘সব প্রশংসা সেই পবিত্র সত্তার, যিনি আমাকে তাঁর বাক্য দ্বারা সৃষ্টি করেছেন—আদম (আ.)-এর মতো আমাকে পিতা ছাড়া সৃষ্টি করেছেন। পাখি তৈরি করার, মৃতকে জীবিত করার এবং কুষ্ঠরোগী ও জন্মান্ধকে নিরাময় করার মুজিজা দান করেছেন। তিনি আমাকে ইঞ্জিল কিতাব দান করেছেন, আমাকে ও আমার মাকে শয়তানের প্রভাব থেকে নিরাপদ রেখেছেন, আমাকে আসমানে উঠিয়ে নিয়েছেন এবং অবিশ্বাসীদের সাহচর্য থেকে আমাকে পবিত্র রেখেছেন। ’
মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রশংসা : তিনি বলেন, ‘সব প্রশংসা সেই মহান সত্তার, যিনি আমাকে সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছেন এবং সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী বানিয়েছেন। আমার প্রতি পবিত্র কোরআন নাজিল করেছেন। যাতে তিনি দ্বিনের সব নিদর্শন বিস্তারিত বা ইঙ্গিতে বর্ণনা করেছেন। আমার উম্মতকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং উম্মতকে প্রথম (মর্যাদায়) ও শেষ (আত্মপ্রকাশে) বানিয়েছেন। আমার বক্ষ উন্মোচন করেছেন এবং আমার স্মরণকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করেছেন। আমাকে বিজয়ী ও সর্বশেষ বানিয়েছেন। ’
রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর প্রশংসা বাক্য শেষ করার পর ইবরাহিম (আ.) সব নবীর উদ্দেশ্যে বলেন, এসব মর্যাদার কারণেই মুহাম্মদ তোমাদের চেয়ে অগ্রগামী। (সিরাতে মোস্তফা, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা ২৯৮)
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন