৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০৮:০৯

পবিত্র মেরাজের মাস রজব

এম এ মান্নান

পবিত্র মেরাজের মাস রজব

রজব ইসলামের ইতিহাসে একটি গৌরবান্বিত মাস। এ মাসের ২৭ তারিখের রাতে মেরাজে আল্লাহর দিদার লাভ করেন রসুলুল্লাহ (সা.)। মেরাজ শব্দের অর্থ ওপরে ওঠা বা ঊর্ধ্বলোকে গমন। রসুলুল্লাহ (সা.)-কে মহান আল্লাহ পৃথিবী থেকে ঊর্ধ্বলোকে নিয়ে বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত করে যে সম্মান দিয়েছেন, ইসলামের ইতিহাসে তা মেরাজ বা ঊর্ধ্বলোকে ভ্রমণ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, মেরাজের ঘটনা কবে সংঘটিত হয়েছে এ সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনা থাকলেও বেশির ভাগ বর্ণনা দ্বারা বোঝা যায়, রসুল (সা.)-এর নবুয়ত প্রাপ্তির পাঁচ থেকে ১২ বছরের মধ্যে মেরাজ সংঘটিত হয়েছে। আল্লাহর অসীম কুদরত মেরাজের রাত নানান কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। 

পুণ্য এই রাতে মুহাম্মদ (সা.) মহান আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সৌভাগ্য লাভ করেন। নবুয়তের কয়েক বছর পর রজবের এক শুভরাতে কাবার হাতিম থেকে বোরাকযোগে ঊর্ধ্বাকাশে গমন এবং আল্লাহর দিদার ও সান্নিধ্য লাভ করেন। এ পুণ্যরাতে মুসলমানের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হয়। রসুল (সা.)-এর অসংখ্য মাজেজার মধ্যে মেরাজ অন্যতম। মেরাজের রাতে রসুল (সা.)-এর মক্কা থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস ও বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে ঊর্ধ্বাকাশে গমন, সপ্ত আকাশ ভ্রমণ, নবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, বেহেশত-দোজখ দর্শন ও সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত গমন, সিদরাতুল মুনতাহা থেকে রফরফের মাধ্যমে আরশে আজিমে গমন, সেখান থেকে লা-মাকান ভ্রমণ এবং আল্লাহর দিদার ও সান্নিধ্য লাভ এবং সেখান থেকে পুনরায় মক্কায় আগমনের ঘটনা ঘটে। এ বিস্ময়কর সফর বা ভ্রমণকেই এক কথায় মেরাজ বলা হয়। মেরাজের সফরে দুটি পর্ব রয়েছে। একটি হলো মক্কা মুকাররমা থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত সফর। অন্যটি হলো বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে বিভিন্ন আসমানে আরোহণ ও ভ্রমণ। প্রথম পর্বকে ইসরা আর দ্বিতীয় পর্বকে মেরাজ বলে। অর্থাৎ মক্কা মুকাররমা থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত সফর হলো ইসরা বা রাতের সফর আর বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে সাত আসমানে ভ্রমণ হলো মেরাজ বা ঊর্ধ্বলোকে ভ্রমণ। ইসরা বা রাতের সফর এবং মেরাজ বা ঊর্ধ্বলোক ভ্রমণ উভয় সফর একসঙ্গেই হয়েছিল। 

রসুল (সা.)-এর মেরাজ ছিল বাস্তব- শারীরিক ও আধ্যাত্মিক ঘটনা। মেরাজের কথা আল কোরআনের সুরা বনি ইসরাইলের প্রথম আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাতের বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি। যাতে আমি তাকে কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দিই। নিশ্চয় তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল।’ সুরা নজমের ১ থেকে ১৭ নম্বর আয়াতে মেরাজের বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। রসুল (সা.)-এর হাদিসেও মেরাজ সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। রসুল (সা.) মক্কার কাবাঘর থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস, সেখান থেকে সপ্ত আকাশ পাড়ি দিয়ে সিদরাতুল মুনতাহা, তার ওপর ৩৬ হাজার বছরের পথ পাড়ি দিয়ে আরশে গমন করেন এবং সেখান থেকে ৭০ হাজার নুরের পর্দা অতিক্রম করে একেবারে দিদারে এলাহিতে পৌঁছেন। প্রতি আকাশে ফেরেশতারা তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। প্রতি আকাশে অবস্থানরত নবীদের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। প্রত্যেক নবী বিশ্বনবীকে সাদর সম্ভাষণ জানান। জিবরাইল (আ.) প্রত্যেক নবীর সঙ্গে তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর রসুল (সা.) এমন এক ময়দানে পৌঁছেন যেখানে ভাগ্যলিপি লেখার আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। এরপর তিনি ‘সিদরাতুল মুনতাহা’ দেখেন, যেখানে আল্লাহর নির্দেশে সোনার প্রজাপতি এবং বিভিন্ন প্রকার প্রজাপতি ইতস্তত ছোটাছুটি করছিল। এরপর তিনি বায়তুল মামুরও দেখতে পান। বায়তুল মামুর হলো সপ্তম আসমানে অবস্থিত একটি মসজিদ। যেখানে প্রতিদিন ৭০ হাজার ফেরেশতা আল্লাহকে সিজদা করে। যারা একবার সেখানে প্রবেশ করে তারা কিয়ামত পর্যন্ত আর কখনো সিজদা করার সুযোগ পাবে না। এরপর রসুল (সা.) জান্নাত ও জাহান্নাম স্বচক্ষে দেখেন। সেখানে আল্লাহ তাঁর প্রিয় রসুলকে নামাজ উপহার দেন। আল্লাহর সঙ্গে কথা বলে পুনরায় মক্কায় উপস্থিত হয়েছিলেন রসুল (সা.)। এটি সম্ভব হয়েছিল আল্লাহর কুদরতে। অতীতেও আল্লাহ অনেক অসম্ভব সম্ভব করেছেন। যেমন বিশ্বাসীদের আদিপিতা হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে আল্লাহ নমরুদের অগ্নিকান্ড থেকে রক্ষা করেন এবং অগ্নিকান্ডের মধ্যে বেহেশতি পরিবেশ সৃষ্টি করে তাঁকে জীবিত রাখেন। মাছের পেটের ভিতর জীবিত রেখেছিলেন হজরত ইউনুস (আ.)-কে। ফেরাউনের হাত থেকে বাঁচাতে হজরত মুসা (আ.)-এর জন্য নীল দরিয়ায় রাস্তা করে দিয়েছেন। হজরত ইসা (আ.)-কে আল্লাহ আকাশে নিয়ে গেছেন এবং তাঁকে আবার এ পৃথিবীতে পাঠাবেন। মেরাজের মাধ্যমে আল্লাহ রসুল (সা.)-কে দেখা দিয়ে তাঁকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি উম্মতে মোহাম্মদীকেও বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন। মেরাজের রাতে বেশি ইবাদত-বন্দেগি করা উচিত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই তৌফিক দান করুন।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

সর্বশেষ খবর