৩০ মে, ২০২৩ ০৭:৫০

হাজিদের নিয়ে ব্যবসা নয়

মো. আবু তালহা তারীফ

হাজিদের নিয়ে ব্যবসা নয়

মিডিয়ায় কিংবা পত্রিকার পাতায় দেখা যায় রাস্তায় হাজি সাহেবদের কাঁদতে। হজ করার উদ্দেশ্যে বের হয়ে তাদের হজ ক্যাম্পে বা রাস্তায় কান্নাকাটি অথবা মানববন্ধন ও মিছিল করতে দেখলে আমাদের লজ্জা হয়। অধীর অপেক্ষায় কাক্সিক্ষত ফ্লাইট পেলেও অনিশ্চয়তায় থাকেন অনেক হাজি। এখনো চিন্তায় তাদের ঘুম নষ্ট করে কর্মকর্তাদের কাছে গিয়ে জুতা ক্ষয় করে নিশ্চিত হচ্ছেন না তাদের পছন্দের ফ্লাইটটি। স্বামী-স্ত্রী একই ফ্লাইটে স্বপ্নের হজ করতে যেতে পারবেন কি! রয়েছে সন্দেহ। হাজিদের কান্নার সঙ্গে রয়েছে হজ ব্যবস্থাপনার অবহেলা। হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে অনেক পক্ষ জড়িত। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও মন্ত্রণালয় যেমন ধর্ম, বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বিমান, ট্রাভেল এজেন্সি, হাব, হজ অফিস। সব পক্ষের কাজের সুসমন্বয় না হওয়ায় হাজি সাহেবানদের নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। ভিসা পেতে বিলম্ব, ভিসার প্রিন্ট নিতে যান্ত্রিক ত্রুটি, হজ এজেন্সির প্রতারণা, হজ অফিসের কর্মকর্তাদের অবহেলা, বাংলাদেশ বিমান ও সৌদি ফ্লাইট বাতিল ইত্যাদির কারণে হজযাত্রীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। সম্মানিত হাজি সাহেবরা শুধু দেশেই অবহেলিত হয়ে প্রতারিত হচ্ছেন না; প্রাথমিক পর্যায়ে হাজি সাহেবরা এজেন্সি কর্মকর্তাদের চমকপ্রদ সেবাগুলোর কথা শুনে আকৃষ্ট হন। কিন্তু বাস্তবতাটা ভিন্ন। হাজিদের সৌদি আরবে পৌঁছানোর পর এজেন্সির কথার সঙ্গে কাজের কোনো মিল থাকে না। সেখানে অসংখ্য হাজি সাহেবকে দেখা যায় কাঁদতে। তারা সঠিক সময়ে খাবার পাচ্ছেন না। যে হোটেলে থাকার কথা বলে টাকা নিয়েছে, সেখানে না রেখে নিম্নমানের বাসস্থানে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সাতজন থাকতে পারে এমন রুমে রাখা হচ্ছে প্রায় ২০ জনের মতো। তাদের জন্য থাকছে না পর্যাপ্ত গোসলের স্থান। হারাম শরিফে ও মদিনার কাছে রাখার কথা বললেও এমন স্থানে রাখা হচ্ছে, যেখান থেকে এসে বায়তুল্লাহ ও মসজিদে নববীতে নামাজ আদায় করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া এজেন্সি কর্মকর্তারা ‘অতিরিক্ত খরচ হয়েছে’, ‘আমাদের লস হচ্ছে’ ইত্যাদি বলে আবার হাজি সাহেবদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে নিচ্ছেন। এমনকি হজ এজেন্সি অতিরিক্ত মুনাফার আশায় হাজিদের জিম্মি করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

এ দেশের বেশির ভাগ হাজি অর্ধশিক্ষিত। এ কথা মনে রেখে তাদের উপযোগী সেবা নিশ্চিত করে হজ ব্যবস্থাপনায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে। হজসংক্রান্ত যাবতীয় সংবাদ যেমন মেডিকেল চেকআপের সময়, ফ্লাইট নম্বর, তারিখ ও সময় ইত্যাদি মোবাইলের মাধ্যমে হাজি সাহেবানদের জানানো প্রয়োজন হজ কর্তৃপক্ষের। হাজিদের উচিত আগে যারা হজ করতে গিয়েছিল, তাদের পরামর্শ গ্রহণ করে সঠিকভাবে হজে গমন করা। হাজিদের উন্নত ও আন্তরিক সেবাদানের জন্য হজসেবায় নিয়োজিত সব পক্ষকে যত্নবান হওয়া সব দিক থেকেই দায়িত্ব এবং কর্তব্য। আল্লাহর মেহমানদের নিজেদের ব্যবসার উপলক্ষ না করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হজসেবা প্রদানে নিয়োজিত সব পক্ষেরই হাজি সাহেব আন্তরিকতাপূর্ণ উন্নত সেবাদান, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা, অপরিচিত স্থানগুলো দেখিয়ে দেওয়াটা সেই দায়িত্বে পড়ে। হাজিদের সেবাদানের জন্য দুই দেশে অধিকসংখ্যক তথ্যানুসন্ধান কেন্দ্র স্থাপনসহ যেখানে দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মী সার্বক্ষণিক সেবা দান করলে তাদের চোখের পানি আর পড়তে দেখা যাবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

 

বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর