জাহিদুল ইসলাম স্বপন। তিনি ঢাকার উত্তরার একটি ইসলামিক স্কুলে পড়েন। পাঠ্য বই পড়ে তিনি জানতে পেরেছেন, মসজিদের মিনার মূলত আজান দেওয়ার স্থান। পূর্বযুগে মসজিদের মিনার থেকেই আজান দেওয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে মুয়াজ্জিন মসজিদের মিনারে উঠে আজান দেন না। স্বপনের প্রশ্ন হলো, বর্তমানে মুয়াজ্জিনরা মিনারে উঠে আজান দেন না কেন?
প্রাজ্ঞ আলেমরা বলেন, ইসলামের প্রাথমিক যুগে মিনার তৈরি করা হতো সেখান থেকে আজান দেওয়ার জন্য, যেন দূর-দূরান্ত পর্যন্ত আজানের ধ্বনি পৌঁছে যায়। এটাই ছিল সাহাবায়ে কিরাম ও তাদের পরবর্তীদের আমল। তারা সাধারণত মসজিদের বাইরে এসে মিনারে বা অন্য কোনো উঁচু স্থানে আরোহণ করে আজান দিতেন।
যেমন নাজ্জার গোত্রের এক নারী সাহাবি বলেন, মসজিদে নববীর নিকটবর্তী বাড়িগুলোর মধ্যে আমার বাড়ি ছিল সবচেয়ে উঁচু। বেলাল (রা.) সেখানে আরোহণ করে আজান দিতেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৯)
আবদুল্লাহ ইবনে শাকিক (রহ.) বলেন, সুন্নাহ হচ্ছে আজান মিনার থেকে দেওয়া এবং ইকামত মসজিদের ভেতরে দেওয়া। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ২৩৪৫)
এসব হাদিস ও বর্ণনার ওপর ভিত্তি করে ফকিহ আলেমরা মিনার বা অন্য কোনো উঁচু স্থান থেকে আজান দেওয়া সুন্নত এবং মসজিদের ভেতর থেকে আজান দেওয়া মাকরুহ বলছেন।
তবে বর্তমান যুগের ফকিহরা শর্ত সাপেক্ষে মসজিদের ভেতর থেকে আজান দেওয়া বৈধ বলেন। তারা বলেন, মসজিদের ভেতর থেকে আজান দেওয়া মাকরুহ হওয়ার মূল কারণ হলো, আওয়াজ দূরে না পৌঁছা। কিন্তু বর্তমানে যেহেতু সাধারণত মাইকে আজান দেওয়া হয় এবং মসজিদের ভেতর থেকে দিলেও দূর-দূরান্ত পর্যন্ত আওয়াজ পৌঁছে যায়, তাই মসজিদের ভেতর থেকে আজান দেওয়া মাকরুহ হবে না। তবে এ ক্ষেত্রে আলেমরা একটি সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেন, তা হলো পূর্বসূরি আলেমদের সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে মসজিদের মিনারে মাইক স্থাপন করা, যাতে দূর-দূরান্তে আজানের ধ্বনি ছড়িয়ে পড়ে। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, যদি মসজিদের বাইরে বা মিনারে উঠে আজান দেওয়ার সুযোগ থাকে তাহলে সেটাই উত্তম।
আর যদি সে সুযোগ না থাকে, তাহলে মুয়াজ্জিন মসজিদের ভেতরে থেকে আজান দেবেন এবং মসজিদের মাইক বাইরে সেট করা থাকবে। এ ক্ষেত্রে উত্তম হলো আজানের জন্য পৃথক কক্ষ থাকা, যেখান থেকে মুয়াজ্জিন আজান দিতে পারবেন। (কিতাবুল আসার : ১/১১৫, আলগায়া : ২/২২৭, আর রদ্দুল মুহতার : ১/৩৮৪) আল্লাহ সর্ববিষয়ে সবচেয়ে ভালো জানেন।