৩ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৮:০৬

শিলচরে বঙ্গবন্ধু কর্নার ও বঙ্গবন্ধু গার্ডেন উদ্বোধন করলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

শিলচরে বঙ্গবন্ধু কর্নার ও বঙ্গবন্ধু গার্ডেন উদ্বোধন করলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ভারতের আসাম রাজ্যের শিলচরে অবস্থিত ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি (এনআইটি) এর ড. এ পি জে আব্দুল কালাম লার্নিং এন্ড রিসোর্স সেন্টারে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ এবং লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধু গার্ডেন উদ্বোধন করা হয়েছে। 

শনিবার সকালের দিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি এবং এনআইটি শিলচরের ডাইরেক্টর প্রফেসর রজত গুপ্ত ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু গার্ডেন’ উদ্বোধন করেন । 

এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাই কমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান। 

শিলচরের এনআইটি সেন্টারে বঙ্গবন্ধু কর্নার এবং বঙ্গবন্ধু গার্ডেনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ভূপেন হাজারিকা অডিটোরিয়ামে আয়োজিত আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মোমেন বঙ্গবন্ধু কর্নার গড়ে তোলার জন্য ভারত সরকারের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, "ভারত সরকারের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান তথা দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ডিজিটাল লাইব্রেরিতে মুজিব কর্নার স্থাপন করায় এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের সংগ্রাম, তার আদর্শ ও স্বপ্ন সম্পর্কে আরো বেশি জানার সুযোগ সৃষ্টি হলো। একইসাথে তারা বাংলাদেশের দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস এবং ভারত সরকার কীভাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছে সেগুলোও জানতে পারবে।" 

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অভিমত, "বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে যে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে, সেসব তথ্যও তারা জানার সুযোগ পাবে।"

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, "আমাদের উভয় দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ভাষা মোটামুটি একইরকম। সেদিক থেকে আমাদের নাড়ীর বন্ধন আর সুদৃঢ় হবে। আমরা ধর্ম, বর্ণ, সংস্কৃতি, গোষ্ঠী সবকিছুর ঊর্ধ্বে থেকে মানুষ হচ্ছে সব থেকে বড়-এতে আমরা বিশ্বাস করি। মানুষে মানুষে সুসম্পর্ক থাকলে কোন কিছু আর আমাদের মাঝে বাধা হয়ে থাকবে না। আর বঙ্গবন্ধু কর্নার আমাদের সেই প্রত্যাশা পূরণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে’ বলে উল্লেখ করেন ড. মোমেন।

এনআইটি, শিলচরে স্থাপিত মুজিব কর্নারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন তার লিখিত ও সম্পাদিত বঙ্গবন্ধু,  বাংলাদেশ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের উন্নয়ন বিষয়ক কিছু বই উপহার দেন। মুজিব গার্ডেন উদ্বোধনের পর সেখানে তিনি গাছের চারাও রোপন করেন।

উদ্বোধনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহিবুর রহমান মানিক এমপি, ইকবালুর রহিম এমপি, গাজী মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ এমপি, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী, এনআইটি শিলচরের শিক্ষকমণ্ডলী, সিলেটের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। উপস্থিত ছিলেন এনআইটি শিলচরে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরাও। 

উল্লেখ্য, প্রথমবারের মতো আয়োজিত দুই দিনের এই শিলচর-সিলেট উৎসবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করছে। প্রতিনিধিদল শুক্রবার সকালে সড়ক পথে সিলেটের শেওলা সীমান্ত দিয়ে ভারতের সুতারকান্দি আইসিপিতে পৌঁছালে সেখানে ভারতের বিএসএফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্বাগত জানান। পরে সেখান থেকে তারা আসামের শিলচরে পৌঁছেন। 

এর আগে আসামের কাছাড় জেলার শিলচর পুলিশ গ্রাউন্ডে আয়োজিত দু’দিনব্যাপী শিলচর-সিলেট উৎসবের প্রথমদিন শুক্রবার সন্ধ্যায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। 

এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শিলচর-সিলেট উৎসব বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে আরো সুদৃঢ় করবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "শিলচর-সিলেট উৎসব আমাদের অভিন্ন সংস্কৃতি, ভাষা, শিল্প-সাহিত্য, পারস্পরিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা ও আমাদের অভিন্ন অর্জনগুলো উদযাপনের গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে।" 

এই উৎসব নিয়মিত আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারতের বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে বলে আশা প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। 

ভারতের সাথে বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির সাথে বাংলাদেশের বহুমাত্রিক সম্পর্কের কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "ভৌগলিকভাবে পাশাপাশি অবস্থান, ঐতিহাসিকভাবে ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক বন্ধন, ভাষা, শিল্প-সাহিত্য, রন্ধন ঐতিহ্য ও দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্কের মতো বহুবিধ কারণে দু'দেশের সুসম্পর্ক পর্যায়ক্রমে আরো সুদৃঢ় হচ্ছে।" 

তিনি আরো বলেন, "প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তার সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি কার্যকরভাবে প্রয়োগের ফলে ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে সার্বিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখেছে যা ভারতীয় নেতৃত্বের দ্বারাও স্বীকৃত ও প্রশংসিত হয়েছে।"  

মোমেন বলেন, "আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারলে দু'দেশের জনগণ উপকৃত হবে।"

অনুষ্ঠানে অপর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারত সরকারের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সংস্কৃতি, পর্যটন ও উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি, সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আসাম সরকারের আবগারি ও মৎস্য মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য, পরিবহন মন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোয়ারী এবং ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার মুস্তাফিজুর রহমান। 

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মিজোরামের রাজ্যপাল কাম্বাপতি হরি বাবু, শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায় প্রমুখ। 

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর