২০১৬ সালে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত বৈধ ও সঠিক ছিল। সোমবার একথা জানিয়ে দিয়েছেন দেশটির শীর্ষ আদালত সুপ্রিম কোর্ট।
বিচারপতি এস আব্দুল নাজির, বি আর গবাই, এ এস বোপান্না, ভি রামা সুব্রামনিয়াম, বি ভি নাগরত্না- নিয়ে গঠিত ৫ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চের ৪ সদস্যই সরকারের পক্ষে রায় দিয়েছে। একমাত্র নারী বিচারপতি বি ভি নাগরত্নার অভিমত ছিল সরকারের নোট বাতিলের এই সিদ্ধান্ত সঠিক নয়। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল আরবিআই'এর। এক্ষেত্রে সরকারের হস্তক্ষেপ করার কোনো এখতিয়ার ছিল না। যদিও ৪:১ রায়ের প্রেক্ষিতে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত সঠিক বলে সিলমোহর পড়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে যে পিটিশনগুলি জমা পরে, তা খারিজ করে দিয়ে আদালতের সংখ্যাগরিষ্ঠ বেঞ্চের অভিমত 'নোট বাতিল এর আগে কেন্দ্র ও রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) এর মধ্যে আলোচনা হয়েছিল। এই ধরনের ব্যবস্থা আনার জন্য একটি যুক্তিসঙ্গত সম্পর্ক ছিল। কোন স্বৈরাচারী ভাবধারা এই সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হয়নি।
শীর্ষ আদালতের আরো বক্তব্য, 'নোট বাতিল করার জন্য আরবিআই'এর কোনো স্বাধীন ক্ষমতা নেই। কেন্দ্র এবং আরবিআই এর মধ্যে দীর্ঘ এই আলোচনার পরে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল এবং অর্থনৈতিক নীতি হওয়ায় এই সিদ্ধান্তটি আর বদল করা যাবে না।'
উল্লেখ্য ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় সরকার ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিল করে। এরপর নতুন ৫০০ ও ২০০০ রুপির নোট চালু করা হয়। অন্যদিকে ১০০০ রুপির নোট পুরোপুরি তুলে দেওয়া হয়। নোট বাতিল ঘোষণার পর গোটা দেশে তোলপাড় পড়ে যায়।
এই সিদ্ধান্তের সমালোচনার নামে একাধিক বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দল। এর নেপথ্যে বড়সড় চক্রান্ত রয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয় কোন কোন দলের পক্ষ থেকে।
নোট বাতিলের আইনি বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে মোট ৫৮ টি পিটিশন জমা পরে। পিটিশন গুলিতে দাবি করা হয়েছিল যে নোট বাতিলের জন্য প্রয়োজনীয় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। এবং স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তের কারণে ভারতীয় নাগরিকদের অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। তাই অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করা উচিত। যদিও কেন্দ্রের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় নোট বাতিলের এই সিদ্ধান্ত বাতিল করলে সময়ের পিছনে হাঁটতে হবে।
শীর্ষ আদালতের পক্ষ থেকে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ও এই সম্পর্কিত বৈঠকের রেকর্ড এবং আরবিআই'এর আইনে দেওয়া প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছিল কিনা তাও কেন্দ্রীয় সরকারকে জানাতে বলা হয়েছিল। জবাবে কেন্দ্রীয় সরকারের যুক্তি ছিল সন্ত্রাসবাদে অর্থের যোগান, কালো রুপি এবং কর ফাঁকির মতো সমস্যাগুলির মোকাবিলার করার জন্য নোট বাতিল করা হয়েছিল। পাশাপাশি পুরনো রুপি বাতিল করলে দেশের অর্থনীতিতে স্বচ্ছতা আসবে এবং বিদেশে গচ্ছিত কালো রুপি ফেরত আসবে বলেও দাবি ছিল সরকারের।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল