৬ জুন, ২০২৩ ১৩:৫৫

ভারতে ট্রেন দুর্ঘটনা: ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা জানালেন বাংলাদেশি মিনহাজ

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

ভারতে ট্রেন দুর্ঘটনা: ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা জানালেন বাংলাদেশি মিনহাজ

ভারতে গিয়েছিলেন চিকিৎসা করাতে। কিন্তু তা তো হলোই না উল্টো ভয়ংকর অভিজ্ঞতা, একরাশ আতঙ্ক, মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে দেশে ফিরতে হচ্ছে মোহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিনকে। 

দক্ষিণ পূর্ব ভারতের তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ের গ্লোবাল হেলথ সিটি হাসপাতালে নিজের চিকিৎসা করাতে যাচ্ছিলেন ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার উথুরা মরচী গ্রামের বাসিন্দা ৩১ বছর বয়সী মিনহাজ। তার সাথে ছিলেন, ছোট ভাই হুমায়ুন কবির (২৭) ও স্ত্রী আজমিন আক্তার (২১)। 

কিন্তু কয়েক সেকেন্ডেই সবকিছু ওলট-পালট। চোখের সামনে মুমূর্ষু যাত্রীদের হাহাকার, আর্তনাদ, ছিন্নভিন্ন লাশ, ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাত্রীদের জিনিসপত্র; এক কথায় ধ্বংসস্তূপ। কোনরকমে বেঁচে ফিরেছেন। বিশ্বাসই করতে পারছেন না তিনি জীবিত। আসলে কথায় আছে না 'রাখে আল্লাহ, মারে কে!' 

মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখা মিনহাজ জানালেন তার জীবনের সেই ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা। 

শুক্রবার সন্ধ্যায় হাওড়ার শালিমার থেকে চেন্নাইগামী ১২৮৪১ আপ করমন্ডল এক্সপ্রেস ছাড়ার পরই সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ ওড়িশার বালাসোর জেলার বাহানাগা বাজার রেলস্টেশনের কাছে দুর্ঘটনার মুখে পড়ে সেটি। সেই ট্রেনের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বি-৩ বগিতে ছিলেন তারা তিনজন। ওই বগিতেই ছিলেন দুই বিএসএফ জওয়ান, এক নারী পুলিশসহ অনেকেই। ট্রেনে যেতে যেতেই তাদের সাথে খোশ গল্পে মেতে ওঠেন মিনহাজ। আর তখনই ছন্দপতন! 

বর্তমানে কলকাতার নিউমার্কেটের একটি হোটেলে পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে আছে মিনহাজ। 

সোমবার সেখানেই মিনহাজ জানান  'আমি যে ফের বেঁচে বাংলাদেশ ফিরে যেতে পারবো, সেই পরিস্থিতি ছিল না। শালিমার স্টেশন থেকে ৩.২৫ মিনিটে ট্রেনটা ছাড়ে। এরপর বালেশ্বর স্টেশনে ট্রেনটি দাঁড়ায় এবং কয়েকজন যাত্রী ওঠানামা করে। এরপর স্টেশন ছাড়তেই ট্রেনের গতিবেগ স্বাভাবিকের থেকে বেশি হয়ে যায়। আমরা তখন নিজেদের আসনে বসে একে অপরের সাথে গল্প করছিলাম। হঠাৎ করে ট্রেনটা বিকট শব্দ হয়, মনে হচ্ছিল এক একটা বোমা বিস্ফোরণ হচ্ছিল। আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আসনের পাশে থাকা লোহার হাতলটা শক্ত করে ধরে থাকি। হঠাৎ করেই ট্রেন একপাশে কাত হয়ে গেল। চারিদিক থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসতে থাকে, তখনই বুঝতে পারলাম কিছু একটা হয়েছে। তখন মনে হয়েছে আমি আর হয়তো বেঁচে ফিরে যেতে পারব না।' 

তিনি আরো জানান, 'দুর্ঘটনার পরেই ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয় সেটি হেলে পড়ে। হঠাৎ করি বিদ্যুৎ চলে যায় ভিতরে অন্ধকার বাইরে ও কিছু দেখা যাচ্ছিল না। এরপর জানলার কাঁচ ভেঙে বেড়ানোর চেষ্টা করি, কিন্তু সেটা ভাঙতে না পারায়, এমার্জেন্সি গেট দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসি।' 

ওই দিন সন্ধ্যা ৭ টা নাগাদ দুর্ঘটনার কয়েক মিনিট পরেই বাহানাগা বাজার এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে আসে, জানালার কাঁচ ভেঙে মুমূর্ষ ও আহত যাত্রীদের ট্রেন থেকে বের করে অ্যাম্বুলেন্স বলে চিৎকার করতে থাকে। কেউ আবার পাশের লাইন দিয়ে আহতদের পাঁজা করে তুলে নিয়ে দৌড়াতে থাকে। তখন মনে হল যে দুর্ঘটনাটা বড় মাপের।' 

দুর্ঘটনার পরেই নিজের ভাই এবং ভাই বউকে নিয়ে পাশেই একটি বাড়িতে যান মিনহাজ। সেই বাড়িতে তাদের নিরাপদে রেখে ফের দুর্ঘটনাস্থলে চলে আসেন তিনি। উদ্দেশ্য একটাই, দুর্ঘটনাগ্রস্থ মুমূর্ষ আহত যাত্রীদের পাশে দাঁড়ানো। উদ্ধার কাজে হাত লাগানো। অনেকটা সেই ভৌতিক সিনেমার মতো। মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালিয়েই বগির ভিতর আহত অবস্থায় পড়ে থাকা মানুষের সন্ধান করতে থাকেন, সেই সাথে চিৎকার করে খোঁজ নিতে থাকেন ওই ট্রেনে কোন বাংলাদেশি যাত্রী আহত হয়ে হয়েছেন কিনা। ততক্ষণে স্থানীয় মানুষদের পাশাপাশি উদ্ধারকার্যে কাজে হাত লাগায় রেলের কর্মকর্তারা, ফায়ার সার্ভিস এবং স্থানীয় পুলিশ। মিনহাজও নিজের সাধ্যমত চেষ্টা করে সেইসব দুর্গত, মুমূর্ষ রোগীদের কিছুটা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে। 

তিনি জানান, 'চারিদিক থেকে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার। তখন নিজেকে মনে হচ্ছিল ভয়ংকর একটা বিপদের হাত থেকে আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইলের ফ্লাশ লাইট জ্বালিয়ে উদ্ধার অভিযান চলে। পরে আলোর ব্যবস্থা করা হয়।' 

বাংলাদেশের মরচি ব্লাড ডোনেশন সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মিনহাজ জানান  'আমি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে কাজ করি। আমি নিয়মিত রক্ত দিই, এপর্যন্ত ১৬ বার রক্ত দিয়েছি। দুর্গত মানুষদের জন্য কয়েক হাজার বোতল রক্তের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তাই মনে হল আল্লাহ যেহেতু আমাকে সুস্থ রেখেছেন তাই আমি ওই দুর্গত মানুষদের পাশে কেন দাঁড়াবো না? সেই তাগিদ থেকেই আমি ফের সেখানে ছুটে আসি। এরপর রাত পৌনে তিনটা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে ছিলাম। চিৎকার করে ডাকছিলাম, খোঁজ নিচ্ছিলাম যে বাংলাদেশের কোন বন্ধু বা ভাই ওই ট্রেনে আটকে পড়েছিলেন কিনা। যেসব দুর্গত যাত্রীরা অসহায় পড়েছিলেন একা একা যেতে পারছিলেন না তাদেরকে কিছুটা সহায়তা করি।' 

সে এও জানায়  'আমি একটা বগিতে ঢুকেছিলাম। মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে খুঁজতে গিয়ে দেখি কারো মস্তিষ্ক থেকে ঘিলু বেরিয়ে গেছে, কারো শরীরে কাটা দাগ- ওটা দেখে আমার খুব ভয় লেগেছে। সাথে সাথে আমি উদ্ধারকারীদের খবর দিই। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়েছিল যে কাটিং মেশিন দিয়ে লোহা কেটে তাদেরকে বের করতে হয়।' 

দুর্ঘটনাগ্রস্থ ওই করমন্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটিতে একাধিক বাংলাদেশি ছিল বলেও জানাযন মিনহাজ। এরমধ্যে অন্তত ১৫ জনের সাথে তার পরিচয় হয়েছিল হাওড়া স্টেশনে। ওই দিন বিকালে হাওড়া স্টেশনে থেকে ট্রেনে ওঠার আগে প্রায় ১০-১৫ জন বাংলাদেশের সাথে তার পরিচয় হয়েছিল। ফলে বাহানাগ বাজার স্টেশন এর কাছে দুর্ঘটনার পরেই তাদেরকে খোঁজার চেষ্টা করেন মিনহাজ। কারণ তার ধারণা ছিল যদি তাদের কোন দুর্ঘটনা ঘটে থাকে, সেক্ষেত্রে তিনি তাদেরকে সেবাটা দিতে পারবেন।  
 
কিন্তু দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে একটা সময় তিনিই শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে মিনহাজ। এমনকি হাতে মোবাইল থাকলেও মন সায় দেয়নি কোন ছবি তোলার। 

শুক্রবার ওই ট্রেন দুর্ঘটনার পরই স্থানীয় এক বাড়িতে ওঠার পরে রাত তিনটা নাগাদ অসুস্থ হয়ে পড়েন তার ভাই বউ আজমিন আক্তার। এরপর অ্যাম্বুলেন্স করে সেখান থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বাহানাগা জেলা হাসপাতালে। 

দুর্ঘটনার পর দুই দিন কেটে গেলেও ঘুরতে ফিরতে সেই দৃশ্য বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। স্বাভাবিকভাবে ট্রেনের প্রতিও একটা ভীতি জন্মেছে মিনহাজের। আর সেই কারণে রেলের তরফে দুর্গত যাত্রীদের বিনামূল্যে বালাসোর থেকে হাওড়া পর্যন্ত ট্রেন পরিষেবা চালু থাকলেও এই ট্রেনে চাপেননি মিনহাজ ও তার পরিবারের বাকি দুই সদস্য।  

কিন্তু এই ভীতি কি দূর হওয়ার? উত্তরে সে জানায় 'আগামী দিনে হয়তো ট্রেনে উঠতে হবে কিন্তু এই ভীতি চিরদিন রয়ে যাবে মনের ভিতর। সেই ভীতি নিয়ে ট্রেনে চড়তে হবে।' 

তিনি জানাযন, 'বাহানাগা হাসপাতালে চিকিৎসা করার পর ওখান থেকে ট্যাক্সি করে পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুরে আসি। সেখান থেকে বাসে করে শনিবার রাত সাড়ে নটা নাগাদ ধর্মতলায় পৌঁছাই। আর ধর্মতলা থেকে কলকাতার নিউ মার্কেটের হোটেল।' 

এদিন নিউ মার্কেটের হোটেলে বসে তার সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, একসময় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন মিনহাজ। একটু থমকে তিনি বলেন  'সকলের দোয়া অনুপ্রেরণার কারণে আজ আমি বেঁচে আছি কথা বলতে পারছি। সাধারণত সিনেমায় আমরা এই ধরনের ঘটনা দেখতে পাই কিন্তু আজ বাস্তবে দেখলাম। আল্লাহ আমাদের সকলকে বাঁচিয়ে রেখেছে। আগামীকাল (মঙ্গলবার) সকালেই বাংলাদেশে ফিরে যাবো।' 

দুর্ঘটনার পরের দিনের আরেকটি ছোট্ট অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করে মিনহাজ জানান। 'শনিবার বাহানাগা হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা করিয়ে যখন ফের ওই রাস্তা দিয়ে ফিরছিলাম, তখন দেখছিলাম লাশগুলির পাশেই মোবাইল গুলো স্তুপ করে রাখা আছে। সেখানে বারবার রিংটোন বাজছে। তাদের পরিজনরা কেউ হয়তো ফোন করছে। কিন্তু তিনি জানেন না যে তাদের প্রিয় মানুষটি আজ আর এই পৃথিবীতে নেই। এ দৃশ্য দেখে কিছুক্ষণের জন্য স্তম্ভিত হয়ে যাই, ইচ্ছা করছিল যে মোবাইল দিয়ে একটা ছবি করি রাখি, কিন্তু পারলাম না।' 
 
ওইদিনের দুর্ঘটনার পরেই একটু স্বাভাবিক হয়ে বাংলাদেশে মা,বাবা সহ পরিবারকে ফোন করে দুর্ঘটনার বিষয় জানান। পরে কলকাতার বাংলাদেশ উপদূতাবাসের সাথেও যোগাযোগ করেন তারা। মিনহাজের সাথে যারা বাংলাদেশ থেকে ভারতে কলকাতা এসেছিলেন, তাদের বিস্তারিত তথ্যও দূতাবাসের কাছে তুলে দেন মিনহাজ। যদিও তাদের মধ্যে অনেকেই দেশে ফিরে গেছেন, কেউ বা পরে ভেলোরে চলে গেছেন।  যদিও তাদের কেউই আহত হননি। 

অন্যদিকে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া কামরা, উপড়ে যাওয়া লাইন, ট্রেনের মধ্যে ছিন্নভিন্ন লাশ দেখে কার্যত ট্রমার মতো অবস্থা হয় মিনহাজের ভাই বউ আজমিন আক্তারের। শুক্রবার পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয় যে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। শারীরিক আঘাত না পেলেও মানসিকভাবে এতটাই ভেঙে পড়েছেন কথা বলার অবস্থায় নেই তিনি। কোনভাবেই ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনার কথা স্মরণ করতে চাইছেন না আজমিন। 

সোমবার তিনি জানান 'গাড়ির ভিতর বসে ছিলাম, হঠাৎ করে দুর্ঘটনা এই খবর জানতে পেরে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। এরপর পাশে একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। তারপরে হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমাকে স্যালাইন দেওয়া হয়। দুর্ঘটনার কথা মনে পড়লেই তার হার্টের সমস্যা দেখা দেয়।' এদিন সকালে কলকাতার ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের ধারে মুকুন্দপুরের শংকর নেত্রালয় যাওয়ার আগে তিনি বলেন 'এর আগেও আমি একবার ভেলোরে শঙ্কর নেত্রালয় গিয়েছিলাম। তবে এবারের যা অভিজ্ঞতা হল আমার আর ওখানে যেতে মন চাইছে না। মুকুন্দপুরে আমার রেটিনা সমস্যা দেখিয়ে কলকাতা থেকেই দেশে ফিরে যাব।' 

একই মনের অবস্থা হুমায়ুন কবিরের। তিনি বলেন, 'ওই দৃশ্য আর মনে করতে ইচ্ছা করছে না। আল্লাহর রহমতে আমরা দেশে ফিরে যাচ্ছি। এটাই অনেক।'  

ময়মনসিংহের মিনহাজ উদ্দিনের পরিবারের তিন সদস্য ছাড়াও এখনো পর্যন্ত ওই ট্রেনে সফরকারী বাংলাদেশের একাধিক যাত্রীর সন্ধান মিলেছে। এর মধ্যে রাজশাহীর বাসিন্দা মো. রাসেলুজ্জামান (২৭) দেশে ফিরে গেছেন। পাবনার বাসিন্দা মো. আসলাম শেখ (৩৩), খুলনার বাসিন্দা রুপা বেগম খান এবং ঢাকার দুই বাসিন্দা খালেদ বিন আওকাত (৫০) ও মোহাম্মদ মোক্তার হোসেন (৩৫), গোপালগঞ্জের বাসিন্দা সাজ্জাদ আলি, মোর্শেদ আলম (৪৫) কুমিল্লার মনসুর আলি সবাই কলকাতায় ফিরে এসেছেন। এছাড়াও গাজীপুরের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন ও পারভিন আক্তার- উভয়েই চিকিৎসার জন্য ফের ভেলোরে চলে গেছেন। 

এদিকে আপ করমন্ডল এক্সপ্রেস কিংবা ডাউন যশবন্তপুর-হামসাফার এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনায় মুমূর্ষু বাংলাদেশী যাত্রী বা ওই ট্রেন গুলিতে সফরকারি বাংলাদেশীদের সন্ধান পেতে কার্যত ঘাম ছুটছে কলকাতার বাংলাদেশ উপদূতাবাস কর্তৃপক্ষের। বাংলাদেশী নাগরিকরা সাধারণত কলকাতা থেকে এজেন্ট মারফত ট্রেনের টিকিট করে থাকে। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সফরকারি যাত্রীদের নিজেদের নামের বদলে এজেন্টের দেওয়া নামে টিকিটগুলি বুকিং দেওয়া হয়, এমনকি এক নাম্বারেএর একাধিক টিকিট দেয়া হয়। ফলে যে কোনো রকম দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে রেল কিংবা সরকার কারো কাছেই যাত্রীদের প্রকৃত তথ্য থাকে না। আর এই ক্ষেত্রেও ঠিক একই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে উপদূতাবাস কর্তৃপক্ষ। 

উপরাষ্ট্র দূত আন্দালিব ইলিয়াস জানান  'আমি অনুরোধ করবো বাংলাদেশ থেকে যারা কলকাতায় এসে ট্রেনে করে অন্য কোন রাজ্যে সফর করেন, সে ক্ষেত্রে তারা যেন নিশ্চিত করেন যে টিকিটটি তাদের নিজেদের নামে হয়েছে, সম্ভব হলে তাদের নিজেদের মোবাইল নাম্বারটা যেন সেখানে নিবন্ধন করেন। কারণ ট্রেনের যাত্রী তালিকায় কেবলমাত্র যাত্রীদের নাম এবং তার পাশে মোবাইল নম্বরটি দেওয়া থাকে। ট্রেন দুর্ঘটনার পর আমরা যখন আহত যাত্রীদের নাম পাই, সেই নামের সাথে রেলের তরফে দেওয়া যাত্রী তালিকার সাথে কোন মিল নেই। কারণ তাদের অনেকেই ট্রাভেল এজেন্ট মারফত অন্য কোন ব্যক্তির নামে সেই টিকিট কিনেছেন ফলে সেই ব্যক্তির নাম দেওয়া আছে। এমনও হয়েছে যে একাধিক যাত্রীর একই ফোন নাম্বার দেওয়া রয়েছে। কিন্তু এর পরিবর্তে যাত্রীরা যদি টিকিট কাটার সময় তাদের নিজেদের নাম এবং ফোন নাম্বার দিয়ে টিকিটটি সংগ্রহ করতেন সেক্ষেত্রে খুব সহজেই আমরা তাদের গতিবিধি বা ট্র্যাক করার কাজটা অনেক সহজ হয়ে যেত। পাশাপাশি সেইসব যাত্রীদের কাছেও বিষয়টি অনেক নিরাপদ হতো। কারণ কোন দুর্ঘটনা ঘটলে এবং দুর্ঘটনা ব্যক্তি অন্য কোন নামে ট্রেনে সফর করলে সেক্ষেত্রে প্রকৃত ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়াটা কোন কোন ক্ষেত্রে অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। এর জন্য দায়ী যাত্রীদের অসচেতনতা।' 


বিডি প্রতিদিন/নাজমুল 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর