রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৩ ০০:০০ টা

জলবায়ু তহবিল নিয়ে রশি টানাটানি

মন্ত্রী বললেন দুই বিষয়কে এক করা সঠিক হবে না

জলবায়ু তহবিল নিয়ে রশি টানাটানি

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন জলবায়ু তহবিলের কর্তৃত্ব নিতে চলছে রশি টানাটানি। জলবায়ু তহবিলের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর রশি টানটানির বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। কমিশন তাদের ওই সমীক্ষা প্রতিবেদনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পকে জলবায়ু প্রকল্প হিসেবে উল্লেখ করে তহবিলের অর্থ বরাদ্দে অনিয়মের কথা বলেছে। অথচ পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় বলছে, পরিকল্পনা কমিশন জলবায়ু তহবিল ও উন্নয়ন বরাদ্দকে এক করে ফেলেছে। যার সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই।

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশের জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থায়নে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন তহবিল-বিসিসিআরএফ (বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ রিজিলিয়েন্স ফান্ড) গঠন করে। ফান্ডে ইতোমধ্যে অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক, ডিএফআইডি, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড ও ইউএসএইড ১৮৯.৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান দিয়েছে। এই তহবিল থেকে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টি বোর্ড ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয়, বন অধিদফতর, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের জন্য একটি করে প্রকল্প অনুমোদন করেছে। আর সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে গঠিত বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ডে গত চার বছরে আড়াই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে এই টাকা থেকে এক হাজার ৪২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩৯টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। পিকেএসএফের মাধ্যমে দেশের ৬৩টি এনজিওকে ২০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের এক সমীক্ষায় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার বিষয়টিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের কাজের এখতিয়ারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। এটা করা কোনোমতেই সমীচীন হবে না বলে ইতোমধ্যে জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা অভিমত প্রকাশ করেছেন। পরিবেশ মন্ত্রণালয় বলছে, পরিকল্পনা কমিশনের সমীক্ষায় বিভ্রান্তিকর তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ওই সমীক্ষায় বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ রিজিলিয়েন্স ফান্ড ও বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড থেকে গৃহীত কার্যক্রমের সঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় গৃহীত কার্যক্রমকে এক করে ফেলা হয়েছে। অথচ প্রকল্প বাস্তবায়ন গতিশীল করার জন্যই এই জলবায়ু তহবিলকে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাইরে রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা কার্যক্রমের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ই আইনগত ও কার্যবিধিগত যথাযথ প্রতিষ্ঠান। কেউ কেউ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে অজ্ঞতাপ্রসূত এক করে দেখার ফলে অনেক ক্ষেত্রে কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়নে আইনগত জটিলতা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে।

তিনি বলেন, পরিকল্পনা কমিশনের রিপোর্টে দুই বছর আগের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে ২০-২৫ শতাংশ বাস্তবায়ন অগ্রগতির কথা বলা হয়েছে। অথচ বর্তমানে যা ৭০-৮০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অধীনে হলে এই বাস্তবায়ন অগ্রগতি অর্জন করা সহজ হতো না। সুতরাং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বরাদ্দের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডকে একীভূত করা সঠিক হবে না। এতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যাবে না।

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জলবায়ু পরিবর্তন, অভিযোজন ও প্রশমন সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা করতে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো ২০২০ সালের মধ্যে প্রায় ১০ কোটি ডলার বরাদ্দে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ তার নিজস্ব তহবিল কতটা স্বচ্ছ ও কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে, তা পর্যবেক্ষণ করছে জাতিসংঘসহ ধনী দেশগুলো। বাংলাদেশ সফলভাবে এই তহবিল ব্যবস্থাপনা করতে পারলে ধনী দেশগুলো বাংলাদেশকে অর্থ দেওয়া শুরু করবে। তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, বেশ কয়েকটি এনজিও চাচ্ছে ইউএনএফসিসি সরকারকে তহবিল না দিয়ে সরাসরি তাদেরকে অর্থ বরাদ্দ দিক।

 

 

সর্বশেষ খবর