এক বছরের ব্যবধানে দুই দফা আন্দোলনে মামলা-হামলায় ক্ষতবিক্ষত ২০-দলীয় জোটের প্রধান শরিক বিএনপি। বিশেষ করে গেল ৫ জানুয়ারি থেকে দীর্ঘ প্রায় দুই মাসের আন্দোলনে ঝড় নয়, এক কথায় সিডর বয়ে গেছে জেলা ও মহানগরীর শীর্ষ নেতা থেকে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের ওপর। এখন দলীয়ভাবে তাদের দিকনির্দেশনাসহ আইনি সহায়তা দিয়ে মূল স্রোতে ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। এ ক্ষেত্রে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটিগুলো হালনাদাগ করে ত্যাগী ও যোগ্যদের নেতৃত্বে আনলে স্থানীয়ভাবে দল আরও শক্তিশালী এবং সুসংগঠিত হবে বলে মনে করেন তারা। জেলা ও মেট্রো পুলিশের বিশেষ শাখা সূত্রে জানা যায়, সাম্প্রতিক আন্দোলনে বরিশাল মহানগরীর তিনটি এবং জেলার ১০ থানায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ৪৮ মামলার আসামি এক হাজার ৪৪২ জন। এর মধ্যে ২০৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। এদের কেউ কেউ জামিনে মুক্তি পেলেও নাশতকার অনেক মামলায় এখনো কারান্তরিন অনেকে। আন্দোলনে আগৈলঝাড়ায় কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধের’ বলি হন ছাত্রদলের টিপু ও যুবদলের কবির। মেট্রোপলিটনের ২৩ মামলার দুটির অভিযোগপত্র আদালতে দেওয়া হয়েছে। ২১ মামলা তদন্তাধীন। আর জেলার ২৫ মামলার চার্জশিট হয়েছে ১৭টির। এখনো তদন্তাধীন আট। ৫ জানুয়ারির কালো পতাকা মিছিলের দিন থেকে আত্মগোপনে থাকা মহানগর সভাপতি সাবেক মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ার দুই মামলায় মাসখানেক আগে জামিন নিয়ে দলের রমজানকেন্দি ক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। নাশকতার চার মামলার এক নম্বর আসামি হয়ে জামিন নিয়ে বুধবার সাংবাদিকদের সম্মানে মহানগর বিএনপির ইফতার মাহফিলে প্রথম জনসমক্ষে এসেছেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া। সহকারী জজ আদালতে আগুন দেওয়ার মামলায় দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়েদুল হক চাঁন ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম শাহিন পলাতক দীর্ঘদিন ধরে। উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি মেজবাউদ্দিন ফরহাদের নামে সাম্প্রতিক আন্দোলনে কোনো মামলা না হলেও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর নির্বাচনী এলাকায় নাশকতার তিন মামলার আসামি হয়ে এখনো আত্মগোপনে সাধারণ সম্পাদক আ ক ন কুদ্দুসুর রহমান।
এবারের আন্দোলনে মামলার আসামি হননি দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মেয়র আহসান হাবিব কামাল। সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন আগে দুই মামলার আসামি হলেও এবারের আন্দোলনে তিনি ছিলেন গুলশানকেন্দ্রিক। শীর্ষ নেতৃবৃন্দ আত্মগোপনে থাকায় দক্ষিণ জেলা বিএনপি ভেঙে নতুন কমিটির গুঞ্জন রয়েছে ভেতরে ভেতরে। দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি নিয়ে কিছুটা সমস্যা আছে বলে স্বীকার করেছেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সরোয়ার। জেলাসহ মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো কাউন্সিলের মাধ্যমে হালনাগাদ করার প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
বিএনপির মতোই যবুথবু অবস্থায় অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। ২০০৭ সালে গঠিত মহানগর যুবদলের পাল্টাপাল্টি কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম শাহিন ও সাধারণ সম্পাদক আকতারুজ্জামান শামীম অভিমানে রাজনীতি থেকে নিজেদের প্রায় গুটিয়ে নিয়েছেন। একই সময়ে পাল্টা কমিটির আহ্বায়ক জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া মূল দলের ভাবী সাধারণ সম্পাদক। যুগ্ম-আহ্বায়ক মীর জাহিদুল কবির, কামরুল হাসান রতন, মো. আলাউদ্দিন ও মাহফুজুর রহমান মামলার জালে ফাঁকফোকর গলে চলছেন। দক্ষিণ জেলা যুবদল সভাপতি খাজা মো. ইকবাল রাজনীতির মাঠে নেই। সাধারণ সম্পাদক শাহেদ আকন সম্রাটও অনেকটা নিষ্ক্রিয়। উত্তর জেলা যুবদলের সভাপতিকে আজ পর্যন্ত কেউ স্থানীয় রাজনীতির মাঠে দেখেননি। এবারের আন্দোলনে মামলার আসামি না হলেও ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় একাধিক মামলার আসামি হয়ে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন উত্তর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান মিন্টু। মাসুদ হাসান মামুনকে আহ্বায়ক এবং ১৬ জনকে যুগ্ম-আহ্বায়ক করে জেলা ছাত্রদলের সবশেষ কমিটি হয়েছিল ২০০৭ সালে। একই দিন খন্দকার আবুল হাসান লিমনকে আহ্বায়ক এবং ১৭ জনকে যুগ্ম-আহ্বায়ক করে গঠিত হয় মহানগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি। তিন মাসের ওই কমিটি আজও সম্মেলন করে পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি। এতে আশাহত উঠতি নেতা-কর্মীরা। পাঁচ বছর আগে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সবশেষ কমিটির আহ্বায়ক প্যানেল মেয়র হাজি কে এম শহিদুল্লাহ সহিদ মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি। সাম্প্রতিক আন্দোলনে তিনি ছিলেন নিষ্ক্রিয়। অপর চার যুগ্ম-আহ্বায়কের হদিসই নেই। একই দিন গঠিত মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান টিপু এবং অপর চার যুগ্ম-আহ্বায়কও রাজনীতিতে নেই। এ দলের পদবিধারী নেতারা দলের পরিচয়ে বিব্রত বোধ করেন। সবশেষ কবে কমিটি হয়েছিল এবং নিজে ছাড়া আর কে এই দলের নেতা তাও বলতে পারেননি জেলা কৃষক দলের সভাপতি দাবিদার হাজি আলতাফ হোসেন। মহানগরে কমিটি থাকলেও তার নেতা পদবি ও অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। মহিলা দলের মহানগর কমিটির সভাপতি সাবেক এমপি বিলকিস জাহান শিরিন এখন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি দাবিদার। তাকে সভাপতি ও শামীমা আকবরকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর এবং শাহানাজ সালেহকে সভাপতি ও সাফিনাতুল কোবরাকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলায় মহিলা দলের সবশেষ কমিটি হয়েছিল ২০০৫ সালে। বিগত আন্দোলনে একমাত্র শিরিন ছাড়া মহিলা দলের আর কোনো নেতার হদিস ছিল না। মহিলা দল সাংগঠনিকভাবে মৃতপ্রায় স্বীকার করে সাবেক এমপি বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন না হওয়া এবং শীর্ষ নেতাদের পছন্দ-অপছন্দের কারণেই এখানে মহিলা দল দাঁড়ানোর অবস্থা নেই। সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব দেওয়া হলে মহিলা দলের কার্যক্রম গতিশীল হবে বলে দাবি করেন এই দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক শিরিন।
শিরোনাম
- গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনে জাতিসংঘের অনুমোদন, হামাসের প্রত্যাখ্যান
- আমার ছেলের খুনীর ফাঁসি যেন দেখে যেতে পারি: আবু সাঈদের বাবা
- দিল্লি বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৫, গ্রেফতার আরও এক কাশ্মীরি
- মালয়েশিয়ায় শর্টপিচ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন সাইবারজায়া ইউনিভার্সিটি
- আফ্রিকার ছয় দেশে আছে রুশ সেনার উপস্থিতি: রাষ্ট্রীয় টিভি
- ‘খালেদা জিয়াকে দেশের সেরা জয় উপহার দিতে চাই’
- উইঘুর যোদ্ধাদের চীনের কাছে হস্তান্তর করবে সিরিয়া
- ‘একটি দল ক্ষমতায় যেতে প্রলাপ বকছে’
- সিরিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় পাশে থাকবে চীন
- বগুড়ায় কোলগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে জরাজীর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান
- শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে যা বলল ভারত
- মোংলায় জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকরণ বিষয়ক সমন্বয় সভা
- আকাশ প্রতিরক্ষা ও যুদ্ধবিমান চুক্তি চূড়ান্ত করতে ফ্রান্সে জেলেনস্কি
- অস্ট্রেলিয়ায় বিএনপির জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উদযাপন
- ভারতের চা, মশলা, আমসহ কয়েকটি পণ্যে শুল্ক প্রত্যাহার করলেন ট্রাম্প
- নওগাঁর মান্দায় ধানের শীষে ডা. টিপুর নির্বাচনী পথসভা
- পাঙ্গাস পোনা শিকারের দায়ে জেলের কারাদণ্ড
- পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি মিলন কারাগারে
- রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
- নির্বাচনের আগেই হাসিনাকে দেশে এনে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দাবি সারজিসের
বিএনপির চ্যালেঞ্জ কর্মী ধরে রাখা
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
প্রিন্ট ভার্সন
এই বিভাগের আরও খবর