বুধবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বন্দরের জায়গা দখল করে স’মিল

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

বন্দরের জায়গা দখল করে স’মিল

চট্টগ্রাম বন্দরের জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে স’মিল-বস্তি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

চট্টগ্রাম বন্দরের মনোহরখালী ও অভয়মিত্র ঘাট বন্দর আবাসিক এলাকায় বন্দরের জায়গায় গড়ে উঠেছে অবৈধ স’মিল ও বেশকিছু দোকানপাট। এলাকার সাধারণ মানুষের পাশাপাশি স’মিলের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বন্দর আবাসিকে বসবাসরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও। রাত-দিন গাছ চিরাইয়ের বিকট শব্দ, গাছভর্তি ট্রাক প্রবেশসহ নানা কারণে দুই আবাসিকের স্কুল-কলেজপড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরাও সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার  বলে অভিযোগ রয়েছে। বন্দর কলোনি মসজিদের মুসল্লিরাও রয়েছেন বেকায়দায়। স’মিলটির কারণে ঘুরপথ দিয়ে দৈনিক পাঁচবার মসজিদে যেতে হয় মুসল্লিদের। এ ছাড়া মসজিদের পাশে বন্দরের বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজে গড়ে তোলা কয়েকটি ঘরের আশপাশে আরও ঘর তুলে অবৈধভাবে ভাড়া দিয়েছেন পিডিবির কিছু অসাধু কর্মকর্তা। এতেও বিড়ম্বনায় পড়তে হয় মুসল্লিদের।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও আবাসিকে বসবাসরতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্দরের ২০ শতকেরও বেশি জায়গা লিজের নামে দখলে রেখেছেন নুর খান, মোহাম্মদ ইদ্রিস ও ফয়সাল নামের তিন ব্যক্তি। মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকেই এসব জায়গা তাদের পূর্ব পুরুষ বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে শুধু বসবাসের জন্য লিজ নেন। কিন্তু তারা দীর্ঘদিন ধরে বসবাসের পাশাপাশি ওই জায়গায় গড়ে তুলেছেন স’মিল, মাছের প্রসেসিং কেন্দ্র, ফার্নিচারের দোকান, মুদির দোকান, কোচিং সেন্টারসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। তবে লিজের শর্তানুযায়ী বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনে যখন ছেড়ে দিতে নোটিস করবে, বিনা অজুহাতে লিজ গ্রহণকারীরা জায়গাগুলো ছেড়ে দিতে বাধ্য থাকবে বলে উলে­খ রয়েছে। বন্দরের আবাসিক প্রয়োজনে এই জায়গাটিতে বহুতল ভবনের নকশা অনুমোদন হওয়ার পর বসবাসকারীদের জায়গা ছেড়ে দেওয়ার নোটিস দেওয়া হয় ২০১২ সালে। এতে দখলদারিরা কর্ণপাত না করায় পড়ে  আরও এক দফা নোটিস দেওয়া হয়। এতে তারা উচ্চ আদালতে গিয়ে মামলা করলে আদালত প্রথমে স্থিতাবস্থা জারি করলেও পরে উভয়পক্ষের শুনানি শেষে মামলাটি খারিজ করে লিজ বাতিলের আদেশ দেন। সরেজমিন জানা যায়, অভিযুক্ত নুর খান স’মিল ছাড়াও বন্দরের জায়গায় ভাড়ায় চালান চা-দোকান, ফার্নিচারের দোকান ও কোচিং সেন্টার। মোহাম্মদ ইদ্রিস ও ফয়সাল বন্দরের এই আবাসিকের কাছে বন্দরের জায়গায় গড়ে তুলেছেন আবাসিক কলোনি বা বস্তি। যা এখন ইদ্রিস কলোনি নামে পরিচিত। বন্দর সূত্র জানায়, স’মিল ও অবৈধ স্থাপনাগুলো সরিয়ে বন্দরের জায়গা ছেড়ে দেওয়ার জন্য একাধিকবার নোটিস করলে নুর খান, ইদ্রিস ও ফয়সালরা উল্টো বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেন। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ে ২০১৪ সালে তারা হেরে যান এবং লিজ বাতিল হয়। এরপরও দখলদাররা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এবং বন্দরের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে দখল বজায় রেখে এসব স্থাপনার উচ্ছেদ কার্যক্রম বিলম্ব করানো হচ্ছে। বন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবুল হাশেম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ওই অবৈধ স’মিল ও অন্যান্য স্থাপনা উচ্ছেদে আইনি কোনো বাধা নেই। তবে পূজা এবং শেখ জামাল আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টের জন্য এখন পুলিশ ফোর্সের সংকট রয়েছে। তাই আগামী ১০ দিনের মধ্যে ওই এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। এ বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়া আছে।’  জানতে চাইলে নুর খান বলেন, ‘জায়গাগুলো আমাদের বাপ-চাচার আমলে লিজ নেওয়া। তারাও ভোগদখল করে গেছেন, কখনো কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু ইদানীং বন্দরের কিছু সিবিএ নেতা আমাদের পেছনে লেগেছে। মামলা করার পর তারা দমে গেছে, এখন আর সমস্যা হচ্ছে না।’

সর্বশেষ খবর