করোনা মহামারি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জ্বালানি মূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ডলার ঘাটতি এবং জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্ত ‘অনিচ্ছাকৃত’ খেলাপিরা ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ পাবেন এবং তাদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এসব ঋণ গ্রহীতাদের আলাদা করতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে কমিটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতা, প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা ও আর্থিক ব্যবস্থা পুনর্গঠনের লক্ষ্যে চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি ব্যবসা পুনর্গঠন ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার নীতি সহায়তা কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকের ঋণ আদায় নিশ্চিত করার পাশাপাশি পুনর্গঠনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোকে সচল ও লাভজনক করতে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে যাচাই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করতে ঋণদাতা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে কমিটি, যাতে তারা ঋণ পরিশোধে ছাড় সুবিধা পেতে পারে। গণ অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর গঠিত কমিটির কাছে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পরিশোধের সুযোগ চেয়ে অনেক বড় শিল্প এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে, কারণ তারা বকেয়া এবং শ্রেণীকৃত ঋণ শোধ করতে চায়। সূত্র বলছে, অন্তত ৬০টি বড় কোম্পানি ইতোমধ্যে তাদের শ্রেণীকৃত ঋণ পুনঃতফসিলের জন্য আবেদন করেছে। এ ছাড়াও দীর্ঘমেয়াদে ঋণ পরিশোধ সুবিধার জন্য আবেদন প্রক্রিয়ায় রয়েছে আরও অনেক বড় শিল্প ও ব্যবসায়ী গ্রুপ। ঋণ পুনরুদ্ধার কমিটি ইতোমধ্যে ৪০টির মতো আবেদন পর্যালোচনা করেছে, যেগুলোর অনাদায়ি ঋণের পরিমাণ ৩০০ কোটি টাকা থেকে ৮ হাজার কোটি টাকার মধ্যে বলে সূত্র জানিয়েছে।
ঋণ পুনরুদ্ধার কমিটির এক সদস্য বলেন, শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদন যাচাই করছি। কয়েক শ কোটি টাকার অনাদায়ি বা শ্রেণীকৃত ঋণ সংক্রান্ত প্রায় ৫০টি আবেদন আমরা যাচাই করেছি। শিল্প ও ব্যবসায়ী কোম্পানিগুলো ঋণ পরিশোধে আমাদের কাছে দীর্ঘমেয়াদে সময় চেয়ে তাদের আয় এবং পরিকল্পনা জমা দিয়েছে, আমরা তাদের প্রতিশ্রুতির উপযুক্ত প্রমাণ পেলে পুনঃতফসিলের আবেদন অনুমোদন দেব। কমিটির এই সদস্য বলেন, বড় গ্রহীতারা ঋণ পরিশোধে ৫ থেকে ১০ বছরের সময়সীমার পাশাপাশি কম হলেও এক বছরের গ্রেস পিরিয়ড চেয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকে কিস্তিতে মূল টাকা পরিশোধের শর্তে সুদ মওকুফের আবেদনও করেছে। সূত্র জানায়, কমিটি ইতোমধ্যে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে নেওয়া বেনামি ঋণও পর্যালোচনা করেছে। বৈঠকে ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মতামত তুলে ধরেছে। এর আগে, ৩০ জানুয়ারি গঠিত কমিটি গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে দেশি-বিদেশি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। কমিটি বড় বড় বেনামি বা শ্রেণীকৃত ঋণ গ্রহীতারা ইচ্ছাকৃত নাকি অনিচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি তা পর্যালোচনা করে। কমিটি মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জ্বালানি মূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ডলার ঘাটতি এবং জুলাই অভ্যুত্থানের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ‘অনিচ্ছাকৃত’ খেলাপিদের আলাদা করতে প্রত্যেক ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে অনুরোধ করেছিল। কমিটির আরেক সদস্য বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক চর্চার বাইরে গিয়ে ঋণ গ্রহীতাদের কোনো কিছু চাপিয়ে দেব না। প্রতিবেশী কয়েকটি দেশের মডেল পর্যালোচনা করার পর ব্যাংকগুলোর কাছে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসাগুলোকে কিছুটা সময় দেওয়ার অনুরোধ করব। তিনি আরও বলেন, যেসব ব্যবসা শিল্প খাতে অবদান রাখে, কর্মসংস্থান তৈরি করে এবং উপরোক্ত পাঁচটি (মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জ্বালানি মূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ডলার ঘাটতি এবং জুলাই অভ্যুত্থান) কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের নিজেদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে ব্যাংকের সহায়তা পাওয়া উচিত। আমরা আশা করি, ব্যাংকগুলো অনিচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের নির্বাচনে আমাদের পাশে থাকবে এবং তাদের কিছুটা স্বস্তি দেবে। তিনি বলেন, যেসব শিল্প ও প্রতিষ্ঠান তাদের নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কমিটি তাদের পুনরুদ্ধারে নীতি সহায়তা দেওয়ার জন্য অগ্রাধিকার দেবে।