বুধবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য

যাত্রীবাহী বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ে নগর পরিবহনে নতুন নৈরাজ্য শুরু হয়েছে। সম্প্রতি সরকার ঘোষিত ভাড়ার হার উপেক্ষা করে সিটি সার্ভিসের অধিকাংশ বাস অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। এ নিয়ে প্রতিদিনই পরিবহন কর্মীদের সঙ্গে যাত্রীদের বাকবিতণ্ডা, হাতাহাতির ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে বিআরটিএর অভিযানের প্রতিবাদে পুরো নগরবাসীকে জিম্মি করে বাস বন্ধ রাখে পরিবহন শ্রমিকরা। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।   সম্প্রতি গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রেক্ষাপটে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি এলাকায় যাত্রীবাহী বাসের ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ১০ পয়সা হারে বাড়ানো হয়। কিন্তু এ সুযোগ নিয়ে পরিবহন কর্মীরা বাড়তি ভাড়ার দুই-তিন গুণ অতিরিক্ত আদায় করে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে বলা হয়, রাজধানীর ৮৭ শতাংশ বাস যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী অবশ্য স্বীকার করেছেন, ৪০ ভাগ বাসে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। একাধিক যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, বিআরটিএর নির্ধারিত কিলোমিটার প্রতি ১০ পয়সা হারে ভাড়া বাড়লে নগরীর যে কোনো রুটে সর্বোচ্চ ৩-৪ টাকা ভাড়া বাড়তে পারে। কিন্তু পরিবহন শ্রমিকরা যাত্রীদের কাছ থেকে ১০-১৫ টাকা পর্যন্ত বেশি আদায় করছেন। সড়ক পরিবহনের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর একজন উপ-পরিচালক বলেন, সর্বশেষ যে ভাড়া বেড়েছে তাতে সিটি সার্ভিসের সর্বোচ্চ গন্তব্যে মোট দূরত্বের জন্য প্রায় সাড়ে চার টাকার মতো ভাড়া বাড়তে পারে। এর বেশি বাড়ালে সেটা অবৈধ। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, যাত্রীদের কাছ থেকে এর চেয়ে অনেক বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, সাভার ইপিজেড থেকে নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের দূরত্ব ৪৬ কিলোমিটার। সর্বশেষ ভাড়া যোগ করে কিলোমিটার প্রতি ১ দশমিক ৭০ টাকা হিসেবে এই পথের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৮ টাকা। কিন্তু এই রুটে চলাচলকারী বাসগুলো ৯০-৯৫ টাকা আদায় করে। সিটি সার্ভিসের অধিকাংশ রুটই ২০-২৫ কিলোমিটার দূরত্বের। সে হিসাবে আগের ভাড়ার সঙ্গে নতুন ভাড়া আড়াই টাকা যোগ হতে পারে। কিন্তু পরিবহন শ্রমিকরা ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেশি আদায় করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মিরপুর থেকে মতিঝিলে অফিস করেন এমন একজন বাস যাত্রী বলেন, প্রতিবারই ভাড়া বাড়ানোর সময় পরিবহন কর্মীরা নতুন কৌশল নেয়। তারা কিছু সময়ের জন্য বাসটিকে ‘সিটিং সার্ভিস’ হিসেবে চালান। পরে যাত্রীরা অভ্যস্ত হয়ে গেলে আবার আগের অবস্থাতেই ফিরে যায়। বাস যাত্রীদের সবকিছুই মেনে নিতে হয়। গত কয়েক বছরে নগরীতে বাড়তি যাত্রী চাহিদার বিপরীতে গণপরিবহন না বেড়ে বরং কমে গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটির (মেট্রো আরটিসি) বাস রুটের তালিকা অনুযায়ী ১৬৬টি রুটে ৭ হাজার ৩৬২টি গাড়ির সিলিং থাকলেও বর্তমানে অর্ধেকের বেশি রুটে যানবাহন নেই। সিটিতে চলছে চার হাজারের কিছু বেশি বাস। এ সুযোগেই যাত্রীদের জিম্মি করে সিটিং-ডাইরেক্ট করে বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে পরিবহন কোম্পানিগুলো। উপরন্তু রাজধানীর যানজটের কারণে বাসের ট্রিপ সংখ্যা কমে যাওয়ায় বিপাকে রয়েছে পরিবহন কোম্পানিগুলোও। গত কয়েক বছরে নগরীর বিভিন্ন রুটে প্রায় তিন হাজার বাস মিনিবাস বন্ধ হয়ে গেছে। এসব প্রেক্ষাপটে নতুন ভাড়া নির্ধারণের সুযোগে বেশি ভাড়া আদায় করছে বাস মালিকরা।  উল্লেখ্য, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৫২ আসনের বাসের ন্যূনতম ভাড়া ৭ টাকা এবং মিনিবাসের ন্যূনতম ভাড়া ৫ টাকা ধার্য করা হয়। কিন্তু কাউন্টারের বাসগুলোর অধিকাংশ পিকআওয়ারে গাদাগাদি করে যাত্রী নিলেও ন্যূনতম ভাড়ার হার মানছে না। তাদের কোনো বাস সার্ভিসেরই ১৫ টাকার নিচে টিকিট নেই। সূত্র জানায়, মোটরযান অধ্যাদেশে সিটিং সার্ভিস নামে কোনো সার্ভিসের উল্লেখ নেই। বাস মালিকরা তাদের সুবিধার্থে এই ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছেন। কিন্তু পিকআওয়ারে প্রায় দ্বিগুণ যাত্রী নিলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ক্ষেত্রে তাদের কোনো ছাড় নেই। এ নিয়ে প্রতিদিনই নগরীর বিভিন্ন রুটে যাত্রীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের ঝগড়া-বিতণ্ডার ঘটনা ঘটছে। বিআরটিএর কর্মকর্তারা আশা করছেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই ভাড়া নিয়ে সংকট কেটে যাবে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ন্ত্রণে নগরীতে বেশকয়েকটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে বিআরটিএ।

 

 

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর