বুধবার, ২২ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

বাজিমাত করছে ‘বাজিরাও মাস্তানি’

মোস্তফা মতিহার

বাজিমাত করছে ‘বাজিরাও মাস্তানি’

ঈদ মানেই আনন্দ। ঈদ মানেই বাঁধভাঙা উল্লাসে মেতে ওঠার দুরন্তপনা। আর উৎসবের উল্লাসে যদি নতুন পোশাক না থাকে তাহলে উৎসবের বর্ণাঢ্য রংটাই যেন ফিকে হয়ে যায়। নিজেদের

রাঙানোর জন্য নতুন নতুন বাহারি পোশাকের প্রয়োজনীয়তা চলে আসছে শতাব্দীর পর শতাব্দী। ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করেই সাধারণত আনন্দের ফুলঝুরিটা বেশি পরিলক্ষিত হয় সারাবিশ্বে। ঈদের আনন্দে নতুন মাত্রা যোগ করতে নতুন পোশাকের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেই নিত্যনতুন ডিজাইনেরও আবির্ভাব ঘটিয়েছে দোকানদাররা। এবারের ঈদেও পোশাকের ক্ষেত্রে ডিজাইনের বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে রাজধানীর সবচেয়ে বড় কেনাকাটার স্থান নিউমার্কেট এলাকাকেই বেছে নেয় ফ্যাশনপ্রিয় ঈদ উৎসব অনুরাগীরা। নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্তদের ভরসার জায়গা নিউমার্কেট এলাকার মার্কেটগুলো। ফ্যাশনপ্রিয়দের ঈদের পোশাকের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যেই দোকানগুলোতে শোভা পাচ্ছে নিত্যনতুন ও মনকাড়া ডিজাইনের বাহারি পোশাক। বিশেষ করে মেয়েদের পোশাকের ক্ষেত্রেই এ এলাকার দোকানগুলো প্রতিদিনই নিত্যনতুন ডিজাইনের সমাহার ঘটাচ্ছে। নিউ সুপার মার্কেট, গাউছিয়া সুপার মার্কেট, নূর ম্যানসন, চাঁদনী চক ও ইস্টার্ন মল্লিকা মার্কেটকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হচ্ছে এখানের ঈদ বাজার। এসব মার্কেটের দোকানিরা তাদের ঈদের পোশাকের সমাহারে ডিজাইনকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। পোশাক থেকে শুরু করে ব্যাগ, কসমেটিক্স ও জুতা সবধরনের পণ্যের জন্যই প্রসিদ্ধ এ এলাকার দোকানগুলো। ২০১৪ সালে পাখি ও ২০১৫ সালে ফ্লোর টাচ ফ্যাশনপ্রিয় তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে ছিল। এবারের ঈদের কালেকশনে বাজারে প্রাধান্য পাচ্ছে বাজিরাও মাস্তানি, পরী, সারারা, নিরজা, প্রেমরতন ধানপায়ে, বহুত কিয়া সালমান, উর্কি চালি পাক পাঙ্খুরি, তাম্বুরা, হাকুয়া, জারকা, ট্যামাবাজ, মাম্মালিও, দিলওয়ালে, প্রাচী, সিসা, সিল্কিনা, জায়না, মিরা, ইন্ডিয়ান রাগা, ইন্ডিয়ান রেবন, রানী ইত্যাদি। তবে ‘বাজিরাও মাস্তানি’ই এবারের ঈদের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। নাম ও ডিজাইনের দিক থেকে আকর্ষণ থাকলেও দামের দিক দিয়ে এ পোশাক ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যেই রাখা হয়েছে বলে জানান কয়েকজন দোকানদার। দাম, ডিজাইন ও মানের দিক দিয়ে ‘বাজিরাও মাস্তানি’ এবারে সর্বাধিক তরুণীর মন কাড়ছে। রাস ফ্যাশনের তুষার সাহা জানান, এবারের সবচেয়ে লেটেস্ট কালেকশন বাজিরাও মাস্তানি বিক্রি করছে মাত্র ৩ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে। তবে ছোঁয়া ফ্যাশনের প্রোপাইটর মো. জহিরুল ইসলাম বাবু দাবি করেছেন তাদের দোকানে রয়েছে ঈদুল ফিতরের সবচেয়ে দামি পোশাক। পরী নামের থ্রি পিস তারা বিক্রি করছেন ২৩ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকায়, রানী বিক্রি করছেন ২৩ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকায়, গারারা ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায়। তাদের দোকানের সব পোশাকই ইন্ডিয়ান বলেও জানান। ছোঁয়া ফ্যাশনের মালিক জানান, মানুষ এখন আর দেশি জিনিস কিনতে চায় না। বেশি দাম দিয়ে ইন্ডিয়ান প্রোডাক্ট কিনতে চায়। তবে বিভিন্ন ডিজাইনের বাহারি পোশাকের আগমনের পর এখনো বাঙালি নারীদের মাঝে শাড়ির জন্য রয়েছে ভিন্ন রকমের আবেগ।

বিভিন্ন ধরনের ড্রেস কেনার পরও ফ্যাশনপ্রিয় নারীরা আটপৌরে শাড়িকেও অঙ্গে জড়াতে বেশি ভালোবাসেন। শাড়ির প্রতি নারীর দুর্বলতার কারণে নানা ডিজাইন ও রঙের শাড়ির সমাহার ঘটিয়েছেন দোকানদাররা। এপ্লিক, কুশিকাটা, ফেসবুক, স্টার, ডিকশনারি, ইন্ডিয়ান কাতান, অপেরা কাতান, আয়েশা টাকিয়া, মনিপুরী পাড়, জর্জেট চুলবুনি ইত্যাদি শাড়িতে তরুণীদের ঈদ অনেক বেশি আনন্দময় হয়ে উঠবে বলে মনে করেন প্যারাডাইস টেক্সটাইলের বিক্রয়কর্মী মোহাম্মদ মোস্তাক আহমেদ। তরুণীদের পোশাকের পাশাপাশি বাচ্চাদের পোশাকের ক্ষেত্রেও বৈচিত্র্য আনা হয়েছে বলে জানালেন গাউছিয়া মার্কেটের আঁখি ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী আশরাফ উদ্দিন চঞ্চল। তিনি জানালেন, ছোট্ট সোনামণিদের কথা বিবেচনা করে বিভিন্ন ডিজাইনের কিডস পোশাকের সমাহার ঘটিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘টুনি, প্লাড্ডু, খুশি, হিরো, রংবাজ, ওসোনা, জামাই বাবু-৪২০, শাহজাদা, পাগলা হাওয়া, রংমহল, পাগলি, খোকাবাবু ইত্যাদি। আর দামও নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তদের হাতের নাগালেই রয়েছে বলেও জানান তিনি। এই এলাকার শপিং মলগুলো ছাড়াও নিম্নবিত্তদের সাদ ও সাধ্যের কথা চিন্তা করে ফুটপাথের দোকানদাররাও কম মূল্যে বাহারি ডিজাইনের পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। ঈদের পোশাকের সঙ্গে মানানসই কসমেটিক্স, ব্যাগ ও জুতার সমাহারও রয়েছে এ এলাকার মার্কেটগুলোতে। আর কসমেটিক্স রয়েছে দেশি লোকাল প্রোডাক্ট থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক সব ব্র্যান্ডের। সাদ ও সাধ্যের অপূর্ব সমন্বয় ঘটছে বলে সব শ্রেণির মানুষের কাছে সমাদৃত নিউমার্কেট এলাকার গাউছিয়া, চাঁদনী চক ও নিউ সুপার মার্কেট।

সর্বশেষ খবর