মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

অস্তিত্ব সংকটে হাতি

মোস্তফা কাজল

অস্তিত্ব সংকটে হাতি

অস্তিত্ব সংকটে বাংলাদেশের হাতি। গত এক দশকে নানা কারণে দেড় শতাধিক হাতির মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের বন এলাকায় ২২০ থেকে ৩৫০টি হাতির অস্তিত্ব রয়েছে। এ অবস্থায় হাতির জাত রক্ষায় মাসব্যাপী কর্মসূচি নিয়ে আজ থেকে কাজ করবে বন অধিদফতরের বন্যপ্রাণী ও সংরক্ষণ বিভাগ। কর্মসূচির  মধ্যে রয়েছে যেসব এলাকায় হাতি রয়েছে সেখানে জনসাধারণের চলাচল সীমিত করা, পর্যাপ্ত খাবারের জোগান দেওয়া, প্রজনন সময়ে নিরাপত্তা প্রদান করা ইত্যাদি। কয়েক দিন আগে বন্যার পানিতে ভেসে আসা ভারতীয় হাতির অকাল মৃত্যুর কারণে এমন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে বন বিভাগ। বন সংরক্ষক ড. তপন কুমার দে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে হাতির জাত রক্ষায় আজ থেকে মাসব্যাপী কর্মসূচি শুরু হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বাংলাদেশে স্থায়ী বন্যহাতির আবাসস্থল হচ্ছে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ, বাঁশখালী, পটিয়া ও রাঙ্গুনিয়া; কক্সবাজার জেলার ফাসিয়াখালী, রামু, উখিয়া ও টেকনাফ; বান্দরবান জেলার লামা ও আলীকদম; রাঙামাটি জেলার কাউখালী, কাপ্তাই ও লংদু এবং খাগড়াছড়ি জেলাসহ দেশের ১১টি বন বিভাগে এদের বিচরণ করতে দেখা যায়। ড. রেজা খানের জরিপ অনুযায়ী, ১৯৮০ সালে বাংলাদেশে বন্যহাতির সংখ্যা ছিল ৩৮০টি। ২০০০ সালে ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ডের গবেষণা অনুযায়ী বাংলাদেশে বন্যহাতির সংখ্যা ২৩৯টি। সর্বশেষ ২০০৪ সালে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন)-এর করা জরিপে পাওয়া যায় ২২৭টি। পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্টত বোঝা যায়, বাংলাদেশে হাতির সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। আইইউসিএনের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, বন বিভাগের চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলে হাতি আছে ৩০ থেকে ৩৫টি। কক্সবাজার উত্তর ও দক্ষিণ বিভাগ মিলিয়ে ৮২ থেকে ৯৩টি। বান্দরবানে ১২ থেকে ১৫টি এবং লামা বিভাগে ৩৫ থেকে ৪০টি হাতি। এ ছাড়া কক্সবাজার উত্তর বিভাগে ৭ থেকে ৯টি এবং দক্ষিণ বিভাগে ৩০ থেকে ৩৫টি হাতি রয়েছে। আর অভিবাসী হাতির সংখ্যা ৮৪ থেকে ১০০টি। বাংলাদেশে হাতি কমে যাওয়ার ৯টি কারণ আইইউসিএনের গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বনাঞ্চল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া, খাদ্য সংকট, চলাচলের পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়া, যত্রতত্র জনবসতি গড়ে ওঠা, চোরাই শিকারিদের নিষ্ঠুরতাসহ আরও কয়েকটি কারণ। তবে ভয়ঙ্কর হচ্ছে চোরাই শিকারিদের উপদ্রব। ২০০১ থেকে ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই পর্যন্ত শুধু বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার ৬টি উপজেলার সংরক্ষিত বনাঞ্চলে দাঁত ও হাড়গোরের জন্য ১৫২টি হাতি হত্যা করা হয়।

দুই প্রজাতির বৈশিষ্ট্য : পৃথিবীতে দুই প্রজাতির হাতি রয়েছে। এশিয়ান ও আফ্রিকান। যদিও শারীরিকভাবে দেখতে প্রায় একই রকম তবু এদের মধ্যে জৈবিক পার্থক্য রয়েছে। বাংলাদেশের হাতি এশিয়ান প্রজাতির। সাধারণত এশিয়ান হাতি ৬-১১ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। আফ্রিকান হাতি হয় ৬-১৩ ফুট। গড় ওজন এশিয়ান হাতির যেখানে ২-৫ টন, আফ্রিকান হাতির সেখানে ২-৭ টন। এশিয়ান হাতির গায়ের রং বেশ ফরসা ও মসৃণ হয়। আফ্রিকান হাতির গায়ের রং কালচে ও কুঁচকানো। কানের আকৃতি দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় কোনটা আফ্রিকান আর কোনটা এশিয়ান। আফ্রিকান হাতির আছে প্রকাণ্ড কান যা দিয়ে প্রচণ্ড গরমে বাতাস করে নিজের গা নিজেই জুড়িয়ে নিতে পারে। পক্ষান্তরে এশিয়ান হাতির ছোট কান। পেটের আকৃতিতেও দেখা যায় ভিন্নতা। এশিয়ান হাতির পেট, গলা থেকে নিচের দিকে অনেকটা সমান। আর আফ্রিকানদের বেলায় গলা থেকে পেট ক্রমান্বয়ে নিচের দিকে ঝুলে পড়ে। এশিয়ান হাতিদের বুকের পাঁজরের হাড় এক জোড়া কম অর্থাৎ আফ্রিকান হাতির রয়েছে ২১ জোড়া হাড় আর এশিয়ান হাতির ২০ জোড়া। আফ্রিকান স্ত্রী-পুরুষ উভয় হাতির প্রলম্বিত দাঁত আছে, কিন্তু এশিয়ান হাতির ক্ষেত্রে শুধু পুরুষ হাতির এই দাঁত দেখা যায়। এশিয়ান হাতির শুঁড় তুলনামূলক একটু শক্ত ও শুঁড়ের শেষ প্রান্তে একদিক সামান্য বর্ধিত থাকে আঙ্গুলের মতো। যা তাকে যে কোনো জিনিস শক্তভাবে ধরতে সাহায্য করে। আফ্রিকান হাতির শুঁড়ের শেষ প্রান্তে দুদিকে বর্ধিত থাকে। খাদ্য পছন্দের তালিকায় এশিয়ান হাতি বেশি পছন্দ করে ঘাস পক্ষান্তরে আফ্রিকান হাতির পছন্দ পাতা। একটি হাতির গড় আয়ুষ্কাল ৬০-৭০ বছর।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর