শেষ পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অতি গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে। প্রায় নয় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই তিনটি সেতু নির্মাণ হবে শীতলক্ষ্যা, মেঘনা এবং মেঘনা-গোমতী নদীর ওপর বর্তমান সেতুর পাশে। আগামী বছরের জানুয়ারি মাসেই শুরু হচ্ছে এই সেতু তিনটির মূল নির্মাণ কাজ। ইতিমধ্যে টেস্ট পাইলিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতেই তিনটি সেতু যানবাহনের জন্য খুলে দেওয়া হবে। সেতু তিনটি নির্মাণের কাজে নিয়োজিত বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সাইট এলাকায় পুলিশ ও আনসার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
বিগত মহাজোট সরকারের সময় থেকেই কাঁচপুরে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর, সোনারগাঁয়ের অদূরে মেঘনা নদীর ওপর এবং দাউদকান্দিতে মেঘনা-গোমতী নদীর ওপর দ্বিতীয় কাঁচপুর, মেঘনা এবং মেঘনা-গোমতী সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ঝুঁকির মুখে থাকা এই তিনটি সেতুর জরাজীর্ণ অবস্থা এবং সড়কে যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যমান সেতুর পাশেই নতুন তিনটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। সওজের সেতু ব্যবস্থাপনা উইংয়ের একটি সূত্র জানায়, ঝুঁকিপূর্ণ এই তিনটি সেতুর পাশে বিকল্প তিনটি সেতু নির্মাণের জন্য প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১১ সালের প্রথম দিকে। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে জাপান আন্তর্জাতিক কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে তারা তিনটি সেতুই নির্মাণ করার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়। এরই অংশ হিসেবে ২০১২ সালে সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সমীক্ষা কাজ শুরু করে জাইকা। প্রায় এক বছরের বেশি সময় নিয়ে তারা তিনটি নদীর ওপর সমীক্ষা সম্পন্ন করে। বিশেষ করে মেঘনা নদীর গতি-প্রকৃতি, যে স্থানে সেতু নির্মাণ করা হবে বর্ষা মৌসুমে সেখানে পানির গতি নিরীক্ষা করাসহ নদীর সামগ্রিক বিষয়ে সমীক্ষা করে জাইকা। সওজ সূত্র জানায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী নতুন তিনটি সেতু হবে চার লেনের। তবে নতুন সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করার এবং পুরনো সেতু তিনটি মেরামতের পর দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু হবে আট লেনের এবং দ্বিতীয় মেঘনা সেতু ও দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতু হবে ছয় লেনের। কারণ নতুন ও পুরনো এই তিনটি সেতুই উপরের দিকে এক হয়ে যাবে। তবে নিচের দিকে পৃথক থাকবে। এই তিনটি সেতুর মধ্যে কাঁচপুরে শীতলক্ষ্যার ওপর বিদ্যমান সেতুর ভাটিতে, মেঘনায় বর্তমান সেতুর বাম পাশে অর্থাৎ উজানে নির্মাণ হবে দ্বিতীয় মেঘনা সেতু এবং মেঘনা-গোমতীতে নির্মাণ হবে বর্তমান সেতুর ডান পাশে অর্থাৎ ভাটিতে। ইতিমধ্যে সেতু নির্মাণের জন্য নির্ধারিত এই তিনটি স্থানেই টেস্ট পাইলিংয়ের কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান। চলতি মাসের মধ্যেই টেস্ট পাইলিংয়ের কাজ পুরোপুরি শেষ হবে। আগামী জানুয়ারি মাস থেকেই তিনটি সেতুর মূল নির্মাণ কাজ শুরু হবে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০২১ সাল পর্যন্ত সেতু নির্মাণকাজ শেষ করার সময়সীমা নির্ধারণ করা থাকলেও ২০১৯ সালের মধ্যেই এই তিনটি সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। মন্ত্রণালয় ও সওজ সূত্রে জানা গেছে, এই তিনটি সেতু নির্মাণের জন্য ২০১৩ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশ সরকার ও জাইকার মধ্যে প্রথম ধাপে দুই হাজার ৮৯৪ কোটি পাঁচ লাখ টাকার ঋণ চুক্তি সম্পন্ন হয়। ওই বছরের ২৩ এপ্রিল এই প্রকল্পটি একনেক অনুমোদন দেয়। এরপর ২০১৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৩ সালেই নির্মাণকাজ শুরুর কথা ছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় সেই সময় কাজ শুরু করা যায়নি। ২০১৪ সালে এই প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করে। এরপর গত বছরের নভেম্বরে তিনটি সেতু নির্মাণের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওএসজেআই জয়েন্ট ভেঞ্চারের সঙ্গে চুক্তি হয়। এই তিন সেতু নির্মাণ প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে আট হাজার ৪৮৬ কোটি ৯৩ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। প্রকল্প সাহায্য হিসেবে জাইকা অর্থায়ন করবে ছয় হাজার ৪২৯ কোটি ২৮ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। আর সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন হচ্ছে দুই হাজার ৫৭ কোটি ৬৪ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এ প্রকল্পের আওতায়ই বর্তমান কাঁচপুর, মেঘনা এবং মেঘনা-গোমতী সেতুর পুনর্বাসন কাজ করা হবে।
এই তিনটি সেতুতে পুনর্বাসন কাজ শুরু হবে ২০১৯ সালে নতুন তিনটি সেতু নির্মাণ এবং যানবাহনের জন্য খুলে দেওয়ার পর। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে পুনর্বাসন কাজ শুরু হয়ে শেষ হবে একই বছরের ডিসেম্বর মাসে।
কাঁচপুর-মেঘনা-গোমতী সেতুর প্রকল্প পরিচালক সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সাইদুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা আশা করছি তিনটি সেতুর নির্মাণকাজই ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে তিনটি সেতু যানবাহনের জন্য খুলে দেওয়ার পাশাপাশি পুরনো তিনটি সেতুর মেরামত কাজ করা হবে।