বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

গ্যাংয়ের দ্বন্দ্বেই খুন স্কুলছাত্র আদনান

আরও আট কিশোর আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর উত্তরা থেকে স্কুল ছাত্র আদনান কবির হত্যায় জড়িত গ্যাং গ্রুপের দুই দলনেতাসহ আট সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১। তারা হলেন— ডিসকো বয়েজ গ্যাং গ্রুপের দলনেতা শাহরিয়ার বিন সাত্তার সেতু ওরফে রায়হান আহমেদ সেতু ওরফে ডিসকো সেতু, বিগবস গ্যাং গ্রুপের দলনেতা আক্তারুজ্জামান ছোটন, শাহীনুর রহমান, রমজান মোবারক, সেলিম খান, ইব্রাহিম হোসেন ওরফে সানি, মিজানুর রহমান সুমন ও জাহিদুল ইসলাম জুইস। র‌্যাব বলছে, জুইস সরাসরি আদনানকে আঘাত করে আর বাকিরা পরিকল্পনা থেকে শুরু করে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে, মঙ্গলবার রাতে উত্তরার সেক্টর-১৪, রোড-১৭ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই আটজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে তিনটি চাকু, দুটি চাপাতি, দুটি রড, তিনটি স্প্রে কালার বোতল, দুটি স্কুল ব্যাগ এবং চার পুরিয়া গাঁজা উদ্ধার করা হয়। এ বিষয়ে গতকাল সকালে কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই উত্তরার একাধিক গ্যাংয়ের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কোন্দল হচ্ছিল। এরই জেরে ‘নাইনস্টার’ গ্রুপের নেতা তালাচাবি রাজুকে আক্রমণ করতে চেয়েছিল ‘ডিসকো বয়েজ’ ও ‘বিগবস গ্যাংয়ে’র সদস্যরা। তবে তাকে না পেয়ে ওই দলের আদনান কবিরকে হত্যা করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। তিনি বলেন, টার্গেট রাজু ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেলে এই দুই গ্রুপের সদস্যরা ধারালো অস্ত্র ও হকিস্টিক দিয়ে নাইনস্টার গ্রুপের সদস্য আদনানকে আঘাত করে। এতেই আদনানের মৃত্যু হয়। বিগবস গ্রুপটি ডিসকো বয়েজের সহযোগী হিসেবে কাজ করে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নাইনস্টার গ্রুপ ও ডিসকো বয়েজ গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ৩ জানুয়ারি উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের ব্রিজের ওপর ডিসকো বয়েজ ও বিগবস গ্রুপের সদস্যরা নাইনস্টার গ্রুপের দলনেতা রাজুকে মারধর করে। প্রতিউত্তরে ৫ জানুয়ারি আজমপুর ফুটওভারব্রিজের গোড়ায় নাইনস্টার গ্রুপের সদস্যরা বিগবস গ্রুপের ছোটনকে আক্রমণ করে। এরপর থেকেই রাজুকে হত্যার পরিকল্পনা করে ডিসকো গ্যাং ও বিগবস গ্রুপের সদস্যরা। তবে রাজু ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেলে আদনানের ওপর তার ঝাল মেটানো হয়। ৬ জানুয়ারি উত্তরায় হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে ও দেহের বিভিন্ন স্থানে স্ক্রু ঢুকিয়ে স্কুলছাত্র আদনানকে হত্যা করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে শাহরিয়ার ও ছোটন আদনান হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। জুইস উত্তরা স্কুল অ্যান্ড কলেজে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জুইস জানিয়েছে, সে নিজের মুখে কাপড় বেঁধে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আদনানের ওপর হামলা চালান। উত্তরার ট্রাস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আদনানের মৃত্যুর পর তার বাবা কবির হোসেন উত্তরা পশ্চিম থানায় নয়জনের নাম উল্লেখসহ আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরমধ্যে চারজন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন উত্তরা পশ্চিম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুর রাজ্জাক। মুফতি মাহমুদ খান আরও বলেন, উত্তরা ও আশপাশের এলাকায় ৩০টির মতো ছোট-বড় গ্যাং রয়েছে। এসব গ্যাংয়ের বর্তমান সদস্যসংখ্যা শতাধিক। গ্যাংয়ের সদস্যরা উঠতি বয়সী তরুণ ও কিশোর। তারা উচ্চ, মধ্য ও নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে এসেছে। গ্যাংয়ের মূল লক্ষ্য এলাকাভিত্তিক আধিপত্য বিস্তার। তারা এলাকার স্কুল-কলেজে র?্যাগিং, ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদকসেবন, ছিনতাই, উচ্চ শব্দে মোটরসাইকেল ও গাড়ি চালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, অশ্লীল ভিডিও শেয়ারের মতো কাজ করে। অনেক সময় এলাকার নিরীহ ও মেধাবী তরুণ-কিশোরদের জোর করে গ্যাংয়ে আসতে বাধ্য করা হয়। ফেসবুকে এক গ্রুপ অন্য গ্রুপকে হুমকি দেয়। আইডি হ্যাক করে। এসব গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি দেখা হচ্ছে। তবে র‌্যাবের একার পক্ষে এ কাজ সম্ভব নয়। অভিভাবকদেরও এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে।

সর্বশেষ খবর