শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাঁশের সাঁকোয় দুই যুগ পার

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্ ও মোশাররফ হোসেন বেলাল, সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে ফিরে

বাঁশের সাঁকোয় দুই যুগ পার

বাঁশের সাঁকো ভর করে জীবন কাটছে ১৫ গ্রামের প্রায় অর্ধ লাখ মানুষের। এরই মধ্যে দুই যুগের বেশি পার হয়ে গেছে, কিন্তু বাঁশের সাঁকো যায়নি। আর এ সাঁকোর জন্য গ্রামের মানুষ প্রতি বছর ব্যয় করছে প্রায় লাখ টাকা। এই সঙ্গে একটি ভালো সেতুর জন্য চলছে আবেদন-নিবেদন, কিন্তু টনক নড়ছে না দায়িত্বশীলদের। এ চিত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের পানিশ্বর ও চুণ্টা ইউনিয়নের। দুই ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে জাফর খাঁ নদ। নদ পার হতেই যত সমস্যা। এ নদ দুই ইউনিয়নের ১৫ গ্রামের মানুষের এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা। নদের উত্তর পাড়ে রয়েছে পানিশ্বর উচ্চবিদ্যালয়, পানিশ্বর মাদানিয়া দাখিল মাদ্রাসা, শাখাইতি আকবরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তারাখলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নাইলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শোলাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শীতাহরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। দক্ষিণে রয়েছে পানিশ্বর সামসুল আলম উচ্চবিদ্যালয়, বেড়তলা উচ্চবিদ্যালয় ও বেড়তলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজারো শিক্ষার্থী যাতায়াতে কঠিন সমস্যায় ভুগছে। জাফর খাঁ নদের উত্তরে নাইলা থেকে চুণ্টা পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার কাঁচা এবং দক্ষিণে শোলাবাড়ী থেকে বেড়তলা পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার পাকা সড়ক। কিন্তু স্থায়ী সেতু না থাকায় দুই পাড়ের মানুষের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ নেই।

স্থানীয়রা জানান, তারা ২৫ বছর ধরে ওই নদের ওপর বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে আসছেন। প্রতি বছর সাত-আট মাসের জন্য লাখ টাকা ব্যয়ে এ সাঁকো তৈরি করতে হয়। সেই সাঁকো দিয়েই পানিশ্বর ইউনিয়নের পানিশ্বর, শাখাইতি, নাইলা, শোলাবাড়ী, দেওবাড়িয়া, বিটঘর, সিমনা, শীতাহরণ, বড়ইবাড়ী ও বেড়তলা এবং চুণ্টা ইউনিয়নের চুণ্টা, বড়বল্লা, তারাখলা, রসুলপুর ও নয়াহাটি গ্রামের স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। মাঝেমধ্যে সাঁকো থেকে পড়ে অনেকে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। বর্ষার সময় পানির তোড়ে সেতু ভেঙে যায়। তখন চার-পাঁচ মাস সেতুই থাকে না। দিনে নৌকা থাকলেও রাতের আঁধারে সাঁতার কেটে নদ পার হতে হয়।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রতি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নেতারা প্রতিশ্রুতি দেন ‘নদের ওপর পাকা সেতু হবে। এলাকাবাসীর দুর্ভোগ কমবে।’ কিন্তু নির্বাচনের পর তারা সে প্রতিশ্রুতি বেমালুম ভুলে যান। নাইলা গ্রামের বৃদ্ধ আবদুল খালেক বলেন, ‘১০ মাস আগে আমার স্ত্রী জামেলা খাতুন এ সেতু পার অইতে গিয়া পইড়া গেছিল। মাসখানেক পর মইরা গেছে। শাখাইতি গ্রামের জহিরুল হকের স্ত্রী লুত্ফা বেগমও সেতু পার অইতে গিয়া নিচে পইড়া আহত হইছেন।’ এ ব্যাপারে শাখাইতি গ্রামের ইউপি সদস্য আবদুল হালিম জানান, তিনি দুই বছর আগে সেতু থেকে পড়ে পা ভেঙেছেন। নাইলা গ্রামের বৃদ্ধ কৃষক ইব্রাহিম মিয়া বলেন, ‘আমরা খুব কষ্টে আছি। বর্ষার সময় নৌকা বোঝাই করে আমাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য সরাইল উপজেলা সদর, আশুগঞ্জসহ বিভিন্ন হাটে নেওয়া যায়। অন্য সময়ে তা সম্ভব হয় না।’ পানিশ্বর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দ্বীন ইসলাম বলেন, ‘নদের উত্তর পাড়ের ৩০ হাজার মানুষ এই নদ পার হয়ে উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াত করেন। কিন্তু এখানে স্থায়ী সেতু না থাকায় সবার সমস্যা হয়। তাই ওই বাঁশের সাঁকোর জায়গায় একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণ জরুরি।’ সরাইল উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান বলেন, ‘এখানে অন্তত ৫০ মিটার সেতু নির্মাণ করতে হবে, যা উপজেলা পরিষদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই বিশেষ বরাদ্দের প্রয়োজন।’ ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান জিয়াউল হক মৃধা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সেতু নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীসহ কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার ডিও লেটার দিয়েছি। আশা করি শিগগিরই পাকা সেতু নির্মাণ হবে।’

সর্বশেষ খবর