মঙ্গলবার, ২২ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

শান্তিনিকেতনে সাজ সাজ রব, হাসিনা-মোদি যাচ্ছেন ২৫ মে

কলকাতা প্রতিনিধি

কাজ শেষ, এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় দিন গুনছে বাংলাদেশ ভবন। আগামী ২৫ মে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত ধরে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হতে চলেছে ‘বাংলাদেশ ভবন’-এর।

স্বাভাবিকভাবেই শান্তিনিকেতন জুড়ে এখন সাজ সাজ রব। সেই সঙ্গে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের সফর উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও আঁটসাঁট করা হয়েছে। বিশ্বভারতী বিদ্যালয়ের আম্রকুঞ্জ, গৌরপ্রাঙ্গণ, উপাসনা গৃহসহ শান্তিনিকেতনের বিভিন্ন চত্বরে পর্যটকদের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সূত্রে খবর মঙ্গলবার থেকেই কার্যত   বিশ্বভারতীয়র দখল চলে যাবে নিরাপত্তা এজেন্সিগুলোর হাতে। নিরাপত্তার কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশের একাধিক রাস্তায় যান চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। ইতিমধ্যেই মোদির নিরাপত্তা প্রদানকারী সংস্থা স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ (এসপিজি) এবং শেখ হাসিনার নিরাপত্তা প্রদানকারী সংস্থার তরফে দফায় দফায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে। বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজকলি সেন ও বিশ্বভারতীর নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গেও দফায় দফায় বৈঠক করছেন কলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের কর্মকর্তারা। বাংলাদেশের সঙ্গে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের লক্ষ্যেই শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া জমি এবং বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া ২৫ কোটি টাকা অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে এই ভবনটি। দ্বিতীয় তলা বিশিষ্ট বাংলাদেশ ভবনটিতে থাকছে ৪৫৩ আসনের বিশাল অডিটরিয়াম, এ ছাড়াও মিউজিয়াম, ক্লাসরুম, লাইব্রেরি, ফ্যাকাল্টি রুম, সেমিনার হল, ক্যাফেটরিয়াসহ থাকছে বিশাল আয়োজন। বাংলাদেশের শিলাইদহে থাকাকালীন বিশ্বকবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের রচিত কবিতা, গান ও বিভিন্ন মুহূর্তের ছবিসহ বাংলাদেশের ইতিহাস স্থান পাবে এখানে। ঠাঁই পাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের ইতিহাস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, দুই দেশের সম্পর্কে সাংস্কৃতিক বোঝাপড়া নিয়ে গবেষণাধর্মী কাজ করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে এটি। সুযোগ থাকবে গবেষণাধর্মী নানা কাজ করার ক্ষেত্রেও। ২৫ মে সকাল ৯টা নাগাদ কলকাতার নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছোঁবে শেখ হাসিনাকে বহনকারী বাংলাদেশের বিশেষ বিমান ‘বোয়িং ৭৩৭-৮০০’। বিমানবন্দর থেকে ভারতীয় বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে করে শান্তিনিকেতনে পৌঁছবেন তিনি। শান্তিনিকেতনে পৌঁছে প্রথমে রবীন্দ্রভবনে কবি গুরুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর চলে যাবেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে। সেখানে উপস্থিত থাকবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিসহ বিশিষ্টজনরা। সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের প্রশংসাপত্র তুলে দেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সেখানেও থাকছে বিশেষত্ব। ছাতিমপাতা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে সেই প্রশংসাপত্র, যা তৈরি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থীরা। সমাবর্তন অনুষ্ঠানেই বিশ্বভারতীর শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। ওই অনুষ্ঠানের পরই চলে আসবেন পাশেই ‘বাংলাদেশ ভবন’-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে। মোদিকে সঙ্গে নিয়েই ওই ভবনের উদ্বোধন করবেন শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠান শেষে মোদির সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে উপস্থিত থাকবেন। এরপর বিকালেই শেখ হাসিনা ও মোদি দুজনেই শান্তিনিকেতন ত্যাগ করবেন। মোদি যাবেন দিল্লি। অন্যদিকে বিকাল সাড়ে ৩টা নাগাদ কলকাতায় পৌঁছবেন শেখ হাসিনা। কলকাতায় একটি ইফতার পার্টিতে অংশ নেবেন এবং কলকাতায় রাত্রিবাস করবেন তিনি।

পরদিন ২৬ মে আসানসোলের কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সফরে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। ওইদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে তাঁকে সাম্মানিক ডিলিট উপাধি দেওয়া হবে। ওইদিন সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে দুর্গাপুরের কাছে অন্ডালের কাজী নজরুল ইসলাম বিমানবন্দরে নামবে শেখ হাসিনাকে বহনকারী বাংলাদেশের ওই বিশেষ বিমান। এরপর সেখান থেকে সড়ক পথে কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবেন। সাম্মানিক ডিলিট নেওয়া ছাড়াও সেখানে বক্তব্য রাখবেন তিনি। অনুষ্ঠান শেষ করেই তিনি ফিরে আসবেন কলকাতায়। বিকালে তিনি কলকাতার নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু মিউজিয়াম পরিদর্শনে যাবেন। এরপর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শনে যাবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। রাত ৮টা ৩০ মিনিট নাগাদ কলকাতা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন শেখ হাসিনা। এদিকে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে তৈরি দুর্গাপুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। কারণ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌজন্যেই পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার দুর্গাপুরের কাজী নজরুল ইসলাম বিমানবন্দরে নামতে চলেছে প্রথম আন্তর্জাতিক বিমান। তাই বিমানবন্দরের মধ্যেই শেখ হাসিনার ছবিসহ একাধিক বড় মাপের ব্যানার লাগানো হয়েছে। বর্তমানে এই বিমানবন্দর থেকে দিনে একটি বিমান চলাচল করে। এয়ার ইন্ডিয়ার সেই বিমানটি দুর্গাপুর থেকে সরাসরি দিল্লিতে যায়। কিন্তু আন্তর্জাতিক বিমানের স্বাদ পায়নি এই বিমানবন্দর। স্বাভাবিকভাবেই শেখ হাসিনার আগমনের অপেক্ষায় দিন গুনছে অন্ডালের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে আমন্ত্রণ জানানো হলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যাবেন কি না তা নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সূত্রে খবর পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সহিংসতাকে কেন্দ্র করে মোদি উদ্বেগ প্রকাশ করায় ওই অনুষ্ঠানে মোদিকে এড়াতে পারেন মমতা। যদি তাই হয়, সে ক্ষেত্রে ২৫ মে সন্ধ্যায় কলকাতায় যেখানে শেখ হাসিনা রাত্রিবাস করবেন সেখানে কিংবা পরদিন ২৬ তারিখ বিকালে কলকাতার নেতাজি ভবন বা জোড়াসাঁকোতে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।

সর্বশেষ খবর