সোমবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

আজ ভিডিও কনফারেন্স হাসিনা-মোদির

দুই পর্যায়ে বাংলাদেশ-ভারত পাঁচ প্রকল্পের উদ্বোধন

গৌতম লাহিড়ী নয়াদিল্লি ও সাইদুল ইসলাম চট্টগ্রাম থেকে

আজ ভিডিও কনফারেন্স হাসিনা-মোদির

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুই দেশের প্রকল্প উদ্বোধন করছেন। দুই প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করছেন ভারত থেকে অতিরিক্ত ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের দ্বিতীয় গ্রিড লাইন, আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েল গেজ রেল সংযোগ এবং কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন প্রকল্প।

এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এক নতুন অধ্যায়ে উন্নীত হচ্ছে। আজ এবং আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সময় বিকাল ৪-১৫ মিনিটে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুই পর্যায়ে মোট পাঁচটি ভারত-বাংলাদেশ রেল, বিদ্যুৎ ও ডিজেল পাইপলাইন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন। দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সাউথ ব্লক থেকে বাংলাদেশের গণভবনে দুই প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত হয়ে প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন করবেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে। এ সময়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোখলেসহ পদস্থ অফিসাররা এবং দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এবং ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবও ওই ভিডিও কনফারেন্সে উপস্থিত থাকবেন।

আজ যে প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন হবে তার মধ্যে রয়েছে— ভারত থেকে অতিরিক্ত ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের দ্বিতীয় গ্রিড লাইন, কুলাবাড়া-শাহবাজপুর রেললাইন পুনঃস্থাপন এবং আখাউড়া-আগরতলা রেললাইনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন। ১৮ সেপ্টেম্বর একইভাবে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চতুর্থ-পঞ্চম ঢাকা-টঙ্গী এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর ডবল লাইন উদ্বোধন এবং শিলিগুড়ি নুমালিগড় থেকে পার্বতীপুর ডিজেল পাইপলাইনের উদ্বোধন হবে। এসব প্রকল্প ভারতের লাইন অব ক্রেডিট অর্থে নির্মাণ করা হচ্ছে। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের ভেড়ামারা বিদ্যুৎ গ্রিড লাইন থেকে ৫৪০ মেগাওয়াট এবং ভায়া কুমিল্লা ত্রিপুরার পালাটানা থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসে। বাংলাদেশ দ্বিতীয় হাইপাওয়ার ট্রান্সমিশন লাইন বসিয়েছে। ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ভারত থেকে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা করেছে। নতুন গ্রিড লাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমার থেকে অতিরিক্ত নয় হাজার মেগাওয়াট আমদানির দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করেছে বলে হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে। আখাউড়া-আগরতলা লাইন নির্মিত হবে আগামী দুই বছরের মধ্যে। এতে যেমন উত্তর-পূর্ব ভারতের বাজার বাংলাদেশের পণ্যের জন্য খুলে যাবে তেমনি কলকাতা-আগরতলা দূরত্ব মাত্র ৫০০ কিলোমিটার হয়ে যাবে। ডিজেল পাইপলাইনের মাধ্যমে সরাসরি শিলিগুড়ির নুমালিগড় থেকে পার্বতীপুর ডিজেল সরবরাহ হবে।

কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন : সিলেটের মৌলভীবাজারের কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইনের মূল কাজ উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ১৬ বছর পরিত্যক্ত থাকার পর এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন হচ্ছে। প্রকল্প ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন পুনর্বাসন ও চালুর লক্ষ্যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ট্রেন লাইন পুনর্বাসনে খরচ হবে ৬৭৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দেবে ১২২ কোটি ৫২ লাখ টাকা এবং ভারত সরকার দেবে ৫৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। ৪৪ দশমিক ৭৭ কিলোমিটারের পুরোটাই দ্বৈত গেজ লাইনে পুনর্বাসন করা হবে। এর মধ্যে সাত দশমিক ৭৭ কিলোমিটার লুপ লাইনের কাজ হবে। ট্রেন লাইন পুনর্বাসনের পাশাপাশি ৬টি স্টেশনের মধ্যে জুড়ী, দক্ষিণভাগ, বড়লেখা ও শাহবাজপুর ‘বি’ শ্রেণি এবং কাঁঠালতলী ও মুড়াউল স্টেশন ‘ডি’ শ্রেণিতে পুনঃসংস্কার করা হবে। ভারতীয় রেল নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান কালিন্দি রেলওয়ে পুনর্বাসনের কাজ করবে। কাজ শুরুর পর ২৪ মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথাও রয়েছে।

আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ প্রকল্প : আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পেরও উদ্বোধন করবেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। এ কাজটিও শুরুর দেড় বছরের মধ্যে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ প্রকল্পের ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে ৫ কিলোমিটার ভারতের অংশে রয়েছে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ অংশের ১০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এ টাকার মধ্যে ভারত থেকে অনুদান হিসেবে পাওয়া গেছে ৪২০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। অবশিষ্ট ৫৭ কোটি টাকা সরকারি ফান্ড থেকে ব্যয় করা হবে। এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে দেড় বছর। ভারতের পাঁচ কিলোমিটার অংশে ইতিমধ্যে রেললাইন নির্মাণকাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের দিকে প্রথম স্টেশন হবে আখাউড়া গঙ্গাসাগর। দীর্ঘ ৬৯ বছর পর আবার আখাউড়ার সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলার রেল যোগাযোগ স্থাপন হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর