পাবনায় সংসদ সদস্যের নির্বাচনী শোডাউনকে কেন্দ্র করে গত তিন দিন ধরে ক্লাস বন্ধ রয়েছে বেড়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ধোবাকোলা করনেশন উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজে। গত শনিবার অনুষ্ঠিত শোডাউনের দিনে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের খাওয়া ও রান্নার কাজ করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে গত তিন দিনেও শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে ওই প্রতিষ্ঠানে। জানা গেছে, পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজু নিজের সমর্থক ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের নিয়ে শোডাউনের আয়োজন করেন। গত শনিবারের এই আয়োজনে সুজানগর ও বেড়া এলাকার প্রায় ১৫ হাজার মানুষকে জমায়েত করা হয়। এ সময় তিন হাজার মোটরসাইকেল, তিনশ মাইক্রোবাস, চারশ সিএনজি ভাড়া করে এই শোডাউন করেন তিনি। শোডাউনে অংশ নেওয়া লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি মোটরসাইকেলের জন্য ৫০০ টাকা, প্রতিটি সিএনজি অটোরিকশার জন্য তিন হাজার টাকা, মাইক্রোবাস প্রতি আট হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এই টাকায় যানবাহনের ভাড়া এবং উপস্থিত লোকজনের বকশিশ হিসেবে দেওয়া হয়। ওই বিদ্যালয় মাঠ থেকে নেতা-কর্মীরা নির্বাচনী এলাকা পরিভ্রমণে বের হয়। এসব কাজের প্রস্তুতিতে সকাল থেকেই বন্ধ থাকে শিক্ষা কার্যক্রম। উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকার আধা সরকারি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শোডাউনে আসতে বাধ্য করা হয়। শোডাউনে অংশ নেওয়া এই বিপুল সংখ্যক মানুষের দুপুরের খাবার আয়োজনের জন্য বিদ্যালয় মাঠে ভোর থেকে রান্নার কাজ করা হয় এবং দুপুরে শোডাউন শেষে ক্লাস রুমে তাদের খাওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে খাবারের উচ্ছিষ্ট ও আবর্জনায় ওই বিদ্যালয় ও কলেজের শ্রেণিকক্ষসহ পুরো বিদ্যালয় মাঠ ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পরে। গত তিন দিনেও ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়নি। খাবারের উচ্ছিষ্ট পচে ছড়িয়ে পড়েছে চরম দুর্গন্ধ, বিপাকে পড়েছেন বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকালে বিদ্যালয়ে আসা একাধিক শিক্ষার্থী ক্লাস করতে না পেরে বাড়ি ফিরে যায়। এ সময় সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, এমপি সাহেবের অনুষ্ঠান ছিল শনিবার, সেদিন স্যারেরা স্কুলে আসতে নিষেধ করেছিলেন। রবিবার ও সোমবার ক্লাসে এলেও পচা দুর্গন্ধে ক্লাসে বসে থাকা সম্ভব না হওয়ায় আমাদের ছুটি দিয়ে দেন স্যারেরা। গোলাম মোস্তফা মিয়া ও আবদুল মালেক বাবলুসহ কয়েকজন অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তিনি তো জনগণের ভোটে নির্বাচিত এমপি নন, জনগণের এবং শিক্ষার্থীদের কথা বুঝবেন কী করে। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক জানান, স্কুল-কলেজ বন্ধ রেখে নির্বাচনী শোডাউন আয়োজন মোটেই উচিত হয়নি। তবে পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্যের বাড়ি আমাদের বিদ্যালয়ের সামনে হওয়ায় আমাদের বিষয়টি নিয়ে কিছুই করার নেই, আমরা নিরুপায়।
ধোবাকোলা করনেশন উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবু বকর সিদ্দিক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আবর্জনা পরিষ্কারে চারজন মহিলা কাজ করছেন। আশা করি মঙ্গলবার থেকে ক্লাস যথারীতি শুরু হবে। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শাহজাহান আলী সাজু বলেন, এমপি মহোদয় এই স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবক। তার অনুষ্ঠানে উপস্থিতি দেখে তার প্রতিপক্ষরা একটি অপপ্রচার চালাচ্ছেন। বিদ্যালয়ের কার্যক্রম কিছুটা সাময়িক বিঘ্ন ঘটলেও পরবর্তীতে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে পুষিয়ে দেওয়া হবে বলেও তিনি দাবি করেন।
উপজেলা শিক্ষা বিষয়ক কমিটির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাদের বলেন, একজন সংসদ সদস্য হিসেবে আজিজুল হক আরজু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে এ ধরনের আয়োজন করতে পারেন না। আইন প্রণেতা হয়ে আইন লঙ্ঘন করেছেন তিনি। এটি শিক্ষার প্রতি চরম অবমাননার দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এ বিষয়ে পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজু বলেন, ধোবাখোলা করনেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা আমার সন্তানের মতো। আমার অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা শুনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দিয়েছেন। তিন দিন ক্লাস না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, শনিবার দুই বিষয় ক্লাস হওয়ার পর স্কুল ছুটি দেওয়া হয়। আমার অনুষ্ঠানে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখে কতিপয় লোকজন ভীত হয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।