মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

পিতৃপরিচয় মিলেছে ছাত্রীহলের সেই নবজাতকের

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ছাত্রীহলের এক কক্ষের ট্রাঙ্ক থেকে নবজাতক শিশু উদ্ধারের ঘটনায় তোলপাড় চলছে। ওই নবজাতককে ‘অবৈধ’ দাবি করা জাবির সমালোচনা এখন দেশজুড়ে। কিন্তু চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় সন্তান জন্ম দেওয়া ছাত্রীকে স্ত্রী হিসেবে দাবি করেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র। তিনি নিজেকে মৃত নবজাতকের বাবা হিসেবেও দাবি করেছেন। এদিকে সন্তান প্রসবের পর ভয় পেয়ে নবজাতককে ট্রাঙ্কে লুকিয়ে রেখেছিলেন বলে দাবি করেছেন ওই ছাত্রী। নবজাতকটি পরে হাসপাতালে মারা যায়। হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, রবিবার সংশ্লিষ্ট হলের প্রাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের উপস্থিতিতে নবজাতকের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। এ সময় ওই ছাত্রীর বাবা নবজাতকের নানার পরিচয়ে স্বাক্ষর করে মরদেহ গ্রহণ করেছেন। সন্তান জন্ম দেওয়া ওই ছাত্রী সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উল্লেখ্য, শনিবার বেলা ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা হলের একটি কক্ষের তালাবদ্ধ ট্রাঙ্ক থেকে একটি নবজাতককে উদ্ধার করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক নবজাতককে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত পৌনে ১০টার দিকে নবজাতকটির মৃত্যু হয়। এদিকে নিজেকে ওই ছাত্রীর স্বামী এবং নবজাতকটির বাবা বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শহীদ সালাম বরকত হলের আবাসিক ছাত্র রনি মোল্লা। তিনি জানান, তাদের উভয়ের (তার ও ওই ছাত্রীর) বাড়ি পাবনায়। একই কলেজে (পাবনার শহীদ বুলবুল কলেজ) তারা পড়াশোনা করেছেন। কলেজে পড়ার সময় থেকেই দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার কিছু দিন পর (২০১৭ সালে) তারা বিয়ে করেন। বিয়ের বিষয়টি দুই পরিবার জানত বলেও দাবি করেন তিনি। এদিকে সন্তান জন্ম হওয়ার পর (শনিবার) ‘ভয় পেয়ে’ বাচ্চাকে ট্রাঙ্কে লুকিয়ে রেখেছিলেন বলে দাবি করেছেন ওই ছাত্রী। হলের ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হলের একটি কক্ষে ওই ছাত্রীসহ চারজন থাকতেন। তাদের মধ্যে দুজনের পরীক্ষা শেষ হওয়ায় বেশ কিছু দিন ধরে তারা হলে থাকেন না। আরেক ছাত্রীর ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। তিনি পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তাই বিষয়টি সেভাবে কারও নজরে আসেনি। দুপুরে ওই ছাত্রীর চিৎকার শুনে আশপাশের শিক্ষার্থীরা তার প্রসব বেদনার কথা জানতে পারেন। পরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে এনাম মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করেন। ওই ছাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ওই দিন সকাল থেকে আমার ব্যথা শুরু হয়। রক্তপাত হতে থাকে। এতে ভয় পেয়ে যাই আমি। আমার দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। এ অবস্থায় কী করব ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। রনি মোল্লার (স্বামী) ফোনও বন্ধ পাই। পরে সন্তান প্রসব হয়ে যায়। নবজাতকের নাড়ি ভিতর থেকে ছিঁড়ে যায়। আমি ভয় পেয়ে তাকে ট্রাঙ্কে লুকিয়ে রাখি।’ জানতে চাইলে রনি মোল্লা বলেন, ‘ঘটনার দিন (শনিবার) সকাল থেকে আমি টিউশনিতে ছিলাম। সে (ওই ছাত্রী) হয়তো আমাকে ফোন করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ হয়নি। সন্ধ্যায় খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যাই। সেখানে গিয়ে পরিচয় দিলেও কেউ বিশ্বাস করেনি।’ সারা দিন মুঠোফোন বন্ধ থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার ফোনটাতে সমস্যা আছে। চার্জ থাকে না। তাই বেশির ভাগ সময় ফোনটা বন্ধ থাকে।’ এ ঘটনায় আর কোনো সমালোচনা না করার অনুরোধ জানিয়ে ওই ছাত্রীর মা বলেন, ‘বিয়ের আগে তারা আমাকে জানিয়েছিল। প্রথমে রাজি না হলেও পরে আমরা মেনে নিই। আমার মেয়ে বারবার বলেছে, সে বাচ্চাটিকে মেরে ফেলতে চায়নি। সে ভয় পেয়ে গিয়েছিল। কী করতে হবে বুঝতে পারেনি। তাই এ রকম করেছে।’ এদিকে ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছে হল কর্তৃপক্ষ। কমিটির প্রধান হলটির আবাসিক শিক্ষক রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘আমরা তদন্তের কাজ শুরু করে দিয়েছি। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্তের কাজ শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে পারব।’

সর্বশেষ খবর