বুধবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা
মেরুকরণে দুই দলের রাজনীতি

খালেদা মুক্তি পেলে ডিসেম্বরে বিএনপির কাউন্সিল

শফিউল আলম দোলন

খালেদা মুক্তি পেলে ডিসেম্বরে বিএনপির কাউন্সিল

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে আগামী ডিসেম্বরে দলের ৭ম জাতীয় কাউন্সিলের আয়োজন করা হতে পারে। বছরের শেষ মাসের প্রথমার্ধকে সম্মেলনের সময় হিসেবে নির্ধারণের চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। সেভাবেই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় সেভাবেই দেশব্যাপী কাজ চলছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সম্মেলন একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা দল গোছাচ্ছি। বিভিন্ন জেলায় মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোও নিয়মানুযায়ী গঠন করা হচ্ছে। সম্মেলন তো অবশ্যই হবে। কবে হবে সেটা সময়মতো জানা যাবে।’ দলীয় নেতারা জানান, বিএনপির বিভিন্ন জেলা ও মহানগর কমিটি ছাড়াও মূল দলের বিভিন্ন শাখা এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ছাড়াও জাতীয়তাবাদী কৃষক দল, জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দল ও জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।

দলীয় নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির ২৫টির মতো জেলা কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। সেগুলোর পুনর্গঠনের কাজ চলছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক কৌশলকে সামনে রেখেই বিএনপিকে এবার ঢেলে সাজানো হচ্ছে। সে প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইতিমধ্যেই ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, লালমনিরহাট, খাগড়াছড়ি ও মেহেরপুর- এই পাঁচটি জেলায় পূর্ণাঙ্গ এবং নীলফামারী জেলায় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্যদিকে, মেয়াদোত্তীর্ণ জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে, রাজশাহী বিভাগের নাটোর, বগুড়া ও পাবনা। রংপুর বিভাগের পঞ্চগড়। খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা। বরিশাল বিভাগের বরিশাল উত্তর জেলা, বরিশাল মহানগর ও পিরোজপুর জেলা। ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহ উত্তর ও দক্ষিণ জেলা। ঢাকা বিভাগের গাজীপুর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ। সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ। চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা, চাঁদপুর, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা এবং কক্সবাজার জেলা। দলের সহদফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, গঠনতন্ত্র অনুসারে প্রতি দুই বছর পর জেলা বিএনপির কমিটি গঠনের বিধান রয়েছে। জানা গেছে, আগামী ডিসেম্বরের আগেই দল এবং তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি গঠন করা হবে। এবারের কমিটি থেকে অনেক পরিচিত মুখও বাদ পড়ে যেতে পারেন। তবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে ত্যাগী ও যোগ্য ব্যক্তিদের যথাযথ মূল্যায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সারা দেশে দলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি পুনর্গঠনের বিষয়টি আসলে চলমান প্রক্রিয়ারই অংশ। বেশিরভাগ জেলার কমিটি গঠনের কাজই ‘ম্যাডাম’ জেলে যাওয়ার আগেই সম্পন্ন করেছিলেন। যেগুলো বাকি আছে- সেগুলোর পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। আর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি তিন বছর পর পর দলের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে এটাই তো স্বাভাবিক। এবারও তা অবশ্যই অনুষ্ঠিত হবে। দলের একাধিক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী ডিসেম্বরে কারামুক্ত বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়েই দলের জাতীয় কাউন্সিল তথা জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করতে চান তারা। এর মধ্যে দেশে ফিরতে না পারলে বিগত দুটি সম্মেলনের মতো এবারও স্কাইপির মাধ্যমেই সুদূর লন্ডন থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অংশ নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ সম্পর্কে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা আশা করি আমাদের আগামী জাতীয় কাউন্সিল ‘দেশনেত্রী’ বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই করব। তার আগে তাঁকে আমরা কারামুক্ত করে আনব এবং বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই এদেশে আবার মানুষের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। এর আগে ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় বিএনপির সর্বশেষ ও ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলন। তার আগে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়েছিল দলটির পঞ্চম জাতীয় সম্মেলন।

সর্বশেষ খবর