বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রক্সিতে জীবন শেষ

মির্জা মেহেদী তমাল

প্রক্সিতে জীবন শেষ

২০০৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি আলী আকবর সুমন। পরদিন তার পাশের গ্রামের একটি হাওরের কচুরিপানার নিচে থেকে উদ্ধার করা হয় তার মৃতদেহ। এ ঘটনায় নিহত সুমনের ভাই আলী আহসান সুহেল বাদী হয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলা অনুসন্ধান শেষে পুলিশ নয়জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটভুক্ত আসামিরা ছিলেন হাউসা গ্রামের মৃত মছকন্দর আলীর পুত্র দরাছ মিয়া ওরফে গয়াছ (৩৪) ও তার স্ত্রী রুজিনা বেগম (৩২) এবং গয়াছের অন্য তিন ভাই মকব্বির আলী (৪০), মিরাস আলী (৩৬) আকুছ আলী (৩৮), একই গ্রামের আইয়ুব আলীর পুত্র লোকমান (২৮), আছকির আলীর পুত্র মানিক মিয়া (৪০), আবদুল মতিনের পুত্র মো. ইকবাল হোসেন বকুল (২৬) ও মৃত বোদাই মিয়ার পুত্র আশুক আলী (৩০)। দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১২ সালের ২০ জুন আলোচিত আলী আকবর সুমন হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক দিলীপ কুমার দেবনাথ। মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি নয়জনের মধ্যে তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদ  দেয় আদালত। তারা হলেন হাউসা গ্রামের মৃত মছকন্দর আলীর পুত্র দরাছ মিয়া ওরফে গয়াছ (৩৪) ও তার স্ত্রী রুজিনা বেগম (৩২), আবদুল মতিনের পুত্র মো. ইকবাল হোসেন বকুল (২৬)। যাবজ্জীবন দ প্রাপ্ত তিন নম্বর আসামি বকুল জেল খাটতে চান না। কারণ তার বিদেশ যাওয়ার সব প্রস্তুতি শেষ। কিন্তু কীভাবে তিনি দেশ থেকে পালাবেন, এর পথ খুঁজছেন। বকুল জানতে পারেন, একজনের জেল আরেকজন খাটতে পারে নাম পাল্টে। বকুল সেপথে এগোনোর চিন্তা করেন। কিন্তু লোক পাবেন কোথায়? কয়েকদিনের মধ্যেই পেয়ে গেলেন তেমন একজনকে। রিপন আহমদ ভুট্টো। সিলেট নগরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সৈয়দ মুগনী আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ও একজন ট্রাকচালক। সিলেট সদর উপজেলার মোগলাগাঁও ইউনিয়নের চানপুর গ্রামের আলী আকবর সুমন হত্যা মামলার আসামি ইকবাল হোসেন বকুলের নামে যাবজ্জীবন কারাদ প্রাপ্ত আসামি হিসেবে জেলে রয়েছেন ভুট্টো। তিন মাসের মধ্যে জামিনে মুক্তি পাবেন, এ ভরসায় বকুলের নামে জেল খাটতে রাজি হয়েছিলেন ভুট্টো। কিন্তু আসামির প্রক্সি দিতে গিয়ে ১৪ মাস ধরে জেল খাটছেন ভুট্টো। বকুলের নামে ভুট্টো জেল খাটছেন, কারা কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে এখন নিশ্চিত থাকলেও আসল সাজাপ্রাপ্ত আসামি বকুল কোথায়- এ প্রশ্নের উত্তর জানতে গেলে জানা যায়, ইকবাল হোসেন বকুল আছেন সৌদি আরবে। জরুরি প্রয়োজনে দেশে ফেরার দরকার পড়লে ভুট্টোকে বকুল সাজিয়ে আত্মসমর্পণের ব্যবস্থা করেন বকুলের ভাই শিক্ষানবিস আইনজীবী শামীম আহমদ। তাকে তিন মাসের মধ্যে জামিনে বের করার কথা থাকলেও ভুট্টো ১৪ মাস ধরেই জেলে। বকুলের ভাই মকবির আলী জানান, তার ভাই ইকবাল হোসেন বকুল সৌদি আরবে আছেন। ভিসা নবায়নের সময় তিনি দেশে আসেন, এখন আবার সৌদি আরবে চলে গেছেন। বকুলের বদলে কেন জেলে- এ প্রশ্নের জবাবে ভুট্টো প্রথমে জানান, সাদা পোশাকের পুলিশ তাকে বকুল হিসেবে আটক করতে আসে, তখন তিনি নিজের নাম ভুট্টো বললেও তারা হত্যার ভয় প্রদর্শন করে তাকে বকুল হিসেবে আটক করে কারাগারে পাঠায়। তবে একপর্যায়ে তিনি জানান, তিন মাসের মধ্যে তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করা হয়েছিল, কিন্তু ১৪ মাসেও তিনি মুক্তি পাননি। সিলেট জালালাবাদ থানার পুলিশ জানায়, সুমন হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি বকুল ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর আত্মসমর্পণ করেন, এর পর থেকে তিনি আদালতের নির্দেশে কারাগারে। আদালতে দাখিল করা ওকালতনামায়ও নাম লেখা ইকবাল হোসেন বকুল, কারা কর্তৃপক্ষও নিশ্চিত হয়েই ভুট্টোকে বকুল ভেবে কারাগারে রাখেন। ভুট্টো কারা কর্তৃপক্ষের কাছেও তার নাম ও স্বাক্ষর বকুল হিসেবে করেছেন বলেও জানান সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. ছগির মিয়া। তিনি বলেন, সে কারাগারে আসার সময় প্রথমে তার নাম ইকবাল হোসেন বকুল বললেও এখন বলছে তার নাম রিপন আহমদ ভুট্টো। এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর