রাজধানীর কমলাপুরে ট্রেনের পরিত্যক্ত বগির ভিতর থেকে আসমা আক্তার (১৬) নামে এক মাদ্রাসাছাত্রীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। উদ্ধারের পর গতকাল সকালে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, আসমাকে তার প্রেমিক হত্যা করেছে। পুলিশেরও ধারণা, আসমাকে হত্যা করা হয়েছে। এদিকে পুরান ঢাকায় সাব্বির হোসেন রাফি (১৭) নামে এক কলেজছাত্রের এবং গুলশানে তাসকিয়া নোহাস ফারিয়া (২৮) নামে এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।
নিহত ছাত্রীর চাচা রাজু জানান, আসমার বাবার নাম আবদুর রাজ্জাক। তাদের বাড়ি পঞ্চগড় সদরের সিনপাড়া গ্রামে। সে স্থানীয় খান বাহাদুর মাদ্রাসা থেকে এবার এসএসসি পাস করেছে। রবিবার সকাল থেকে তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে তার ব্যক্তিগত ডায়েরিতে বাঁধন নামে এক ছেলের নাম পাওয়া যায়। জানা গেছে, বাঁধনের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। একই দিন সকাল থেকে বাঁধনকেও পাওয়া যাচ্ছিল না। আসমাকে ফুঁসলিয়ে ঢাকায় এনে নির্যাতনের পর বাঁধনই হত্যা করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। ঢাকা রেলওয়ে থানার এসআই আলী আকবর জানান, গতকাল সকালে বলাকা এক্সপ্রেসের একটি পরিত্যক্ত বগির টয়লেটে লাশ দেখে পুলিশকে খবর দেন কয়েকজন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আসমার ব্যাগে থাকা মোবাইল নম্বর থেকে তার পরিচয় শনাক্ত করা হয়। তার শরীরে ধস্তাধস্তির চিহ্ন রয়েছে। গলার চারদিকে কালো গোলাকৃতির দাগ ছাড়াও শরীরের একাধিক স্থানে নীল-ফোলা জখম রয়েছে। এটি হত্যাকা- বলেই প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। তবে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে কি না এবং মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। এদিকে কলেজছাত্র সাব্বির হোসেন রাফির চাচা জামাল সরদার বলেন, পুরান ঢাকার করাতিটোলার একটি বাসায় থাকতেন রাফি। তিনি বিএএফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজে এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। গতকাল সকালে দাঁত ব্রাশ করতে করতে বাসার ছাদে যান রাফি। তিনতলা ভবনের ছাদে রেলিং ছিল না। অসতর্কতায় সেখান থেকে তিনি নিচে পড়ে যান। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গে ারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাজু মিঞা জানান, রাফি যে ভবন থেকে পড়ে গেছেন সেই ভবনের নিচতলাতেই তাদের বাসা। পরিবারের বরাত দিয়ে ওসি বলেন, রাফি সব সময় মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকতেন। ফেসবুক এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইন্টারনেটে আসক্ত ছিলেন তিনি। এ কারণে রাতে বাবা-মা তাকে বকাঝকা করেন। এরই জের ধরে অভিমান করে সকালে তিনি ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেন। অন্যদিকে গতকাল বিকালে গুলশানের নিকেতনের একটি বাসা থেকে তাসকিয়া নোহাস ফারিয়ার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ ও পরিবার বলছে, এটি আত্মহত্যা। ফারিয়ার ভাই ফারহান ইসলাম জানান, তাদের বাড়ি সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে। তারা নিকেতন ৮ নম্বর রোডের একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। আট মাস আগে আমেরিকা প্রবাসী সৈয়দ ফারমান রেজার সঙ্গে ফারিয়ার বিয়ে হয়। রেজা বর্তমান আমেরিকায় আছেন। স্বামীর সঙ্গে ফারিয়ার মোবাইলে ঝগড়া হয়। এ নিয়ে গতকাল দুপুরে নিজ কক্ষের ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেন ফারিয়া। কিন্তু এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে তাদের বাসায় কাজের মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। এই খবরে এলাকাবাসী বাড়ি ঘিরে মিছিল করতে থাকেন। পরে পুলিশ এসে তার বোনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। গুলশান থানার এসআই শামীম হোসেন জানান, কাজের মেয়ের আত্মহত্যার খবরে শত শত লোক ওই বাসা ঘেরাও করেন। প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় ফারিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে উপস্থিত জনতাকে বলা হয়, কাজের মেয়ে নয়, আত্মহত্যা করেছেন এই বাসার মেয়ে। স্বামীর সঙ্গে ঝগড়ার কারণে ফারিয়া আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন বলে জানান এসআই শামীম। তিনি বলেন, তবে ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।