শনিবার, ২ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

নবীনগরের নান্দনিক মাটির তৈজসপত্র

কেমন আছেন সাভারবাসী - ৭

মোস্তফা কাজল, সাভার থেকে ফিরে

নবীনগরের নান্দনিক মাটির তৈজসপত্র

আবুল, তাহের, মিজান, ইকবাল ও রশিদ রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভার উপজেলার স্মৃতিসৌধের কাছে নবীনগরে বিক্রি করেন মাটির তৈরি নান্দনিক তৈজসপত্র। এখানে বছরের পর বছর এসব মাটির সৌন্দর্যমন্ডিত দ্রব্য বিক্রি করে সবার কাছে এ স্থানকে পরিচিত করে তুলেছেন সাভারের ১২ যুবক। আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিন দিন কমে যাচ্ছে পেশাদার কুমারের কদর।

এখানে পাওয়া যায় মাটির তৈরি ঘর সাজানোর নানা ধরনের উপকরণ। এ স্থানটিতে অর্ধশত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। মাটির হাঁড়ি-পাতিল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের চাহিদা কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ পেশা থেকে ছিটকে পড়তে বাধ্য হয়েছেন বহু কুমার। বংশীয় ধারায় নতুন কুমার জন্ম না হওয়ায় দিন দিন কমে যাচ্ছে মৃৎশিল্পের চাহিদা। তবে বৈশাখ এলেই গোটা দেশ বাঙালিয়ানায় বিকশিত হয়। তখন আবার মাটির জিনিসের চাহিদা তুঙ্গে ওঠে।

সিন্ধু সভ্যতা থেকেই এ অঞ্চলের মানুষের মাটির তৈরি তৈজসপত্র ব্যবহারের প্রমাণ আছে। উপমহাদেশে মাটির হাঁড়ি-পাতিল ও বাসনকোসনের ব্যবহার ছিল চোখে পড়ার মতো। সে সব ব্যবহার কমতে শুরু করে। বর্তমানে বেড়েছে ধাতবদ্রব্যের তৈরি তৈজসপত্র উৎপাদন ও ব্যবহার। সিরামিক্স, লোহা, প্লাস্টিক আর অ্যালুমিনিয়ামের যুগে হারিয়ে যেতে বসেছে মৃৎশিল্প। যেটুকু টিকে আছে তার পুরোটাই ক্রেতাদের শখ আর কুমারদের বংশের ধারা টিকিয়ে রাখার তাগিদে। ব্যবসায়ীরা জানালেন, মাটির তৈরি জিনিসপত্র এখন ঢাকা ও তার আশপাশে কম জায়গায়ই পাওয়া যায়। সাভার ও ধামরাই উপজেলায় হাতেগোনা কয়েকজন কুমার আছে। যারা এই ব্যবসায়ীদের কয়েকজনের চাহিদা পূরণ করতে পারে। এছাড়া কিছু উপকরণ আসে বরিশাল ও পটুয়াখালী থেকে। এর মধ্যে ব্রাশ উল্লেখযোগ্য। তবে সাভারে যে কুমার একেবারেই নেই, তা নয়। এ উপজেলার হিন্দু অধ্যুষিত কয়েকটি এলাকায় এখনো টিকে আছে ঐতিহ্যের এ পেশাটি। শিশির পাল, সন্দ্বীপ পালদের হাত ধরে এখানে তৈরি হচ্ছে হাঁড়ি-পাতিল, বাসন ও ঘর সাজানোর নানা শখের জিনিসপত্র। কুমার পাওয়া গেল সাভারের মৃৎ ও কুটির শিল্প বাজারেও। রামেন্দ্র চন্দ্র পাল (৫৮) জানান, এটি তার বাবা-দাদা থেকে পাওয়া পেশা। তবে এখন তিনি হতাশ। এখন ব্যবসা নেই। মানুষ অ্যালুমিনিয়াম, প্লাস্টিকের জিনিস ব্যবহার করে। মাটির জিনিস ব্যবহার করতে চায় না। চাহিদা কমে যাওয়ায় বংশীয় পেশায় আসার ধারা ভেঙেছে বলে মনে করেন রামেন্দ্র চন্দ্র। আয় কমে গেছে বলে বর্তমান প্রজন্মের ছেলেরা এ পেশায় যুক্ত হতে চাচ্ছে না। রামেন্দ্র চান না তার সন্তানরা এ পেশায় আসুক। বাজারে আসা ক্রেতাদের অনেকেই রাজধানী ও স্থানীয় উপজেলার বাসিন্দা। আর তারাই এ বাজারের নিয়মিত ক্রেতা। সাইফুল-শিরিন দম্পতিও এখানকার নিয়মিত ক্রেতা। সাইফুল বলেন, ‘মাটির জিনিসপত্র সুন্দর লাগে। ঘরের সৌন্দর্য বর্ধনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এসব কারণে মাঝে মধ্যে এখান থেকে কিনে নিয়ে যাই।’ ঢাকা থেকে মেহরাব ও তার তিন বন্ধু এসেছেন ফুলদানি ও নানা অবয়ব কিনতে। মেহরাব বলেন, ‘ঘর গোছাতে এসব নান্দনিক তৈজসপত্রের প্রয়োজন হয়। মাটির জিনিস ছাড়া আর কী আছে যা দিয়ে বাঙালি তার মনের ভাবটা পুরোপুরি প্রকাশ করবে? তাই কিছু মাটির তৈরি জিনিসপত্র নিচ্ছি। এগুলো আসলেই অসাধারণ।’

সর্বশেষ খবর