রবিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

নতুন সচিবে মুখরিত সচিবালয়

এ মাসে বিদায় আরও কয়েকজনের চুক্তিতে নিরুৎসাহিত, প্রশাসন গতিশীল রাখতে নজর নীতিনির্ধারক মহলের

নিজামুল হক বিপুল

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকে নিরুৎসাহিত করায় প্রশাসনের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। ফলে নতুন বছরের শুরুতেই প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয় নতুন সচিবদের উপস্থিতিতে মুখর হয়ে উঠেছে। ডিসেম্বরের শেষ দুই সপ্তাহে অন্তত ডজনখানেক সচিব অবসরোত্তর পিআরএলে গেছেন। চলতি মাসেও পিআরএলে যাবেন আরও কয়েকজন। এতে নতুনদের পদোন্নতির সুযোগ হবে। এ ছাড়া যেসব মন্ত্রণালয় এখনো শূন্য আছে সেগুলোতেও নতুন কর্মকর্তারা সচিব পদে নিয়োগ পাবেন বলে জানা গেছে।  গত কয়েক বছর ধরে প্রশাসনে সচিব এবং সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের নিয়মিত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছিল। যা নিয়ে প্রশাসনের নিচের দিকের এবং পদোন্নতি প্রত্যাশী কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষ বিরাজ করছিল। একই সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে অস্থিরতাও ছিল প্রশাসনের ভিতরে। দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের কর্মকর্তারা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বন্ধের দাবি করছিলেন। খুব প্রয়োজন না হলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ না দিতে সরকারের উচ্চপর্যায় পর্যন্ত লিখিতভাবে জানিয়ে আসছিল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাসোসিয়েশনও। অবশেষে এ বছর এসে তাদের সেই দাবির প্রতি মনোযোগী হয়েছে সরকার।

এবার যখন একসঙ্গে অনেক কর্মকর্তার পিআরএলে যাওয়ার কথা, ঠিক তখন তাদের প্রায় প্রত্যেকেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়ার জন্য নানারকম দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে। কেউ কেউ একেবারে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত তদবির করেন চুক্তিভিত্তিক স্বপদে থাকার জন্য। কিন্তু সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এ ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় তদবিরকারী কর্মকর্তাদের প্রায় সবাইকে একসঙ্গে পিআরএলে যেতে হয়েছে। তারপরও দু-একজন যে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাননি তা নয়। তবে এই সংখ্যা তুলনামূলক কম। এ কারণে গত সপ্তাহে একসঙ্গে অন্তত সাতজন অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতি পেয়ে সচিব হয়েছেন। নতুনদের এমন পদোন্নতিতে সচিবালয় যেমন মুখর, ঠিক তেমনি সবার মধ্যে এক ধরনের উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে। নতুনদের মধ্যে যারা পদোন্নতির আশায় আছেন তাদের মধ্যেও প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। গত মাসের শেষ সপ্তাহে সচিব পদে যারা পদোন্নতি পেয়েছেন তাদের অনেকে আজ থেকে নতুন কর্মস্থলে বসবেন। অবশ্য গত সপ্তাহেই দুই-তিনজন দায়িত্ব নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের ৩১ তারিখে অবসরে যাবেন ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুল হান্নান। আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসানের নিয়মিত চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১০ জানুয়ারি। ইতিমধ্যে তার জায়গায় নিয়োগ পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ (অতিরিক্ত সচিব) তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। একইভাবে আজ থেকে অবসরে যাওয়া জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন ধর্ম সচিব মো. আনিছুর রহমান। এ ছাড়া চুক্তিতে থাকা অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ২ জানুয়ারি। তার জায়গায় আগামীকাল থেকে ওই পদে যোগ দেবেন দুই বছরের চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া সিনিয়র সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। যিনি জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব পদ থেকে অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। সরকার তার অবসরোত্তর ছুটি স্থগিত করে তাকে এই পদে নিয়োগ দিয়েছে। এর বাইরে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহিবুল হকের অবসরোত্তর ছুটি স্থগিত করে তাকে আরও এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। তিনি ওই মন্ত্রণালয়েরই দায়িত্বে থাকবেন। এ ছাড়াও আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) মো. ফারুক হোসেন, ১৫ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এস এম আরিফ-উর রহমান, ২২ ফেব্রুয়ারি ইআরডি সচিব মনোয়ার আহমেদ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুস সামাদ অবসরে যাবেন।

সর্বশেষ খবর