শুক্রবার, ৬ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

হত্যার ৯ বছর পর জানা গেল স্ত্রীই ঘাতক

নিজস্ব প্রতিবেদক

চাঞ্চল্যকর সুজন হত্যার নয় বছর পর জানা গেল সাবেক স্ত্রী আছমা আক্তার ইভাই তার খুনি। গ্রেফতার করা হয় ইভাসহ তার দুই ভাই মো. আরিফুল হক ওরফে আরিফ ও মো. রানা ওরফে বাবুকে। গত শনিবার ইভাকে কুমিল্লার লাকসাম থানার মধ্য ইছাপুরে তার বর্তমান শ্বশুরবাড়ি থেকে এবং আরিফ ও বাবুকে গ্রেফতার করা হয় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার দাপা ইদ্রাকপুর থেকে। সুজনের সাবেক স্ত্রী ও তার দুই শ্যালককে জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য পেয়েছে পিবিআই। নিহত সুজন গ্রিলের মিস্ত্রির কাজ করতেন।

২০১১ সালের ১৮ মার্চ রাজধানীর দক্ষিণ রাজারবাগের বাগপাড়া শেষমাথা খাল থেকে সুজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তার পরিবারের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় সবুজবাগ থানায় একটি মামলা করা হয়। গত ৭ বছর মামলাটির সুরাহা না করতে পারায় মামলাটি পিবিআইর কাছে হস্তান্তর হয়। ওই মামলার তদন্তে সুজনের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটন করে পিবিআই। এতে সুজনের সাবেক স্ত্রী ইভাসহ তার দুই ভাইয়ের সম্পৃক্ততা পেলে তাদের গ্রেফতারে এমন তথ্য বেরিয়ে আসে। পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) বিশেষ পুলিশ সুপার মো. বশির আহমেদ জানান, ২০০৮ সালে সুজনের সঙ্গে ইভার বিয়ে হয় এবং ২০০৯ সালে ইভা সুজনকে ডিভোর্স দেন। ডিভোর্সের পরও সুজন প্রায়ই ইভাকে দেখার জন্য তাদের এলাকায় আসা যাওয়া করতেন। এদিকে ইভার সঙ্গে সুজনের বিয়ের আগেই স্থানীয় ছেলে ফাইজুল ইভাকে পছন্দ করতেন। ফাইজুল ছিলেন ইভার বড় ভাই আরিফের বন্ধু। ফাইজুল বিভিন্ন সময় ইভাদের বাসায় আসা-যাওয়া করতেন। এ ঘটনা নিয়ে ফাইজুল এবং ইভার বড় ভাই আরিফের সঙ্গে সুজনের বিভিন্ন সময় তর্কবিতর্ক ও হাতাহাতি হয়।

সুজনকে হত্যা করার ৭/৮ দিন আগে ফাইজুল সুজনকে মারধর করেন। ২০১১ সালের ১৩ মার্চ সন্ধ্যার পর আরিফ, ফাইজুল তাদের বন্ধু কুটি ও কালা বাবু ইভাদের বাসার সামনে মাঠে বসে সুজনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী ১৪ মার্চ সন্ধ্যায় আরিফ তাদের বাসার পাশের চায়ের দোকান থেকে একটি সাদা পলিথিন ব্যাগ নেন। ফাইজুল ও আরিফ লাঠি নিয়ে খালপাড় বালুর মাঠের দিকে যেতে থাকেন। এরই মধ্যে কুটি ও কালা বাবুও চলে আসে। রাত ৮টার দিকে কুটি সুজনকে খালপাড় বালুর মাঠে নিয়ে আসে। বিভিন্ন কথাবার্তার একপর্যায়ে ফাইজুল সুজনকে পেছন থেকে হাত দুটি আটকে ধরে। কুটি পলিথিন ব্যাগটি সুজনের মাথার ওপর থেকে গলায় ঢুকিয়ে দিয়েই গিঁট দিয়ে ফেলে। আরিফ ও কালা বাবু লাঠি নিয়ে সুজনকে পেটাতে থাকে। সুজন মারা গেছে নিশ্চিত হয়ে তার লাশ খালে ফেলে দেয়। ১৮ মার্চ সকালে ইভার বাড়ির পেছনে খালের ভিতর অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির লাশ পাওয়া যায়। লোকজনের মুখে শুনে আরিফ লাশ দেখতে যায়। লাশ দেখে সুজনকে সে চিনতে পারে। পরে সে ভয় পেয়ে যায় এবং ফাইজুল, কালা বাবু ও কুটির সঙ্গে যোগাযোগ করতে গিয়ে দেখে তারা আগেই এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। এ ঘটনায় সুজনের বাবা থানায় মামলা করলে পরের দিন আরিফ ও তার ছোট ভাই বাবু কেরানীগঞ্জে তাদের আত্মীয়ের বাসায় চলে যায়।

তাদের বোন ইভা তাদের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর চলে যায়। ২/৩ দিন পর তাদের বাবা-মাও গ্রামের বাড়িতে চলে যান। পরে দীর্ঘদিন ধরে তারা পালিয়ে থাকে। মামলা হওয়ার পর সবুজবাগ থানা পুলিশ আসামি কুটি, ফাইজুল ও কালা বাবুদের গ্রেফতার করে। কিন্তু ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। মামলাটি প্রথমে সবুজবাগ থানা পুলিশ ও পরে ডিবি প্রায় ৭ বছর তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেয়। তারপরও ঘটনার প্রকৃত রহস্য ও ঘটনায় জড়িত অভিযুক্ত পলাতক আসামি ইভা, আরিফ ও বাবু গ্রেফতার না হওয়ায় এবং পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে সুজনের বাবা মো. আবদুল মান্নান না-রাজির আবেদন করেন। পরে আদালত পিবিআইকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেয়।

সর্বশেষ খবর