বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, রাষ্ট্রপতির নামে জারিকৃত জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংশোধন) আদেশ নির্বাচনকে ঘিরে অনিশ্চয়তা অনেকটা দূর করলেও তা অনেক গুরুতর সাংবিধানিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। স্পষ্টতই এই আদেশের মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক পক্ষকে আস্থায় নেয়ার প্রচেষ্টা রয়েছে। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের এই প্রচেষ্টাকে ইতিবাচক হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
আজ রবিবার সকালে সেগুনবাগিচায় সংহতি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে সাইফুল হক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার বিদ্যমান যে সংবিধান অনুযায়ী শপথ নিয়েছেন ও ১৫ মাস ধরে ক্ষমতায় আছেন তারা সংবিধান সংশোধন নিয়ে কোন সাংবিধানিক আদেশ দিতে পারেন কিনা এবং এই আদেশ বিদ্যমান সংবিধানকে অস্বীকার করার সামিল কিনা এই প্রশ্নও বড় হয়ে উঠেছে। বস্তুত: এই ধরনের আদেশ অন্তর্বর্তী সরকারের ম্যান্ডেট ও এক্তিয়ারের বাইরে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ও জনআকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একইদিনে গণভোট অনুষ্ঠানের পদক্ষেপকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, এই পদক্ষেপ ইতিবাচক হলেও গণভোটের জন্য উত্থাপিত বিষয়াবলীর উপর একটি শব্দে মতামত প্রদান অস্বাভাবিক ও ঝুঁকিপূর্ণ। যে চারটি ভাগে ভাগ করে গণভোটের বিষয়াবলী উল্লেখ করা হয়েছে কেবল একটি উত্তরে হ্যাঁ বা না বলা যথেষ্ট জটিল প্রক্রিয়া। ভোটারেরা যদি দুটি বিষয়ে হ্যাঁ, বা দুটি বা একটি বিষয়ে না বলতে চান তাদের জন্য বিকল্প কি? এইভাবে গণভোটের আসল উদ্দেশ্য অর্জন করা যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
তিনি বলেন, জুলাই সনদকে ঝুঁকির মধ্যে নিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই; তা হবে আত্মঘাতী। তিনি ঝুঁকি এড়াতে সংবিধান সংশোধনের যেসব বিষয়ে সকল দলের মতৈক্য রয়েছে কেবল সেসব বিষয়ে গণভোট অনুষ্ঠানের দাবি জানান। তিনি বাকি বিষয়সমূহ পরবর্তী নির্বাচিত পার্লামেন্টের উপর ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে সাইফুল হক বিশেষভাবে উল্লেখ করেন যে, বিদ্যমান সাংবিধানিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতির নামে সাংবিধানিক আদেশ জারি করার কোন সুযোগ নেই। বাস্তবিকভাবে এই আদেশ ভবিষ্যতে জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার প্রতিনিধিত্বকারী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে পার্লামেন্টকে পাশ কাটিয়ে সংবিধান সংশোধনের বিপজ্জনক নজির হিসাবে ব্যবহৃত হবার রাস্তা খুলে দিয়েছে। এবং এই পথে পরোক্ষভাবে সাংবিধানিক কর্তৃত্ববাদ আবার ফিরে আসার জমিনও খানিকটা প্রশস্ত করে দিল।
তিনি আরও বলেন, সরকার আপাতত: সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে যে পথ অনুসরণ করলো তা ভবিষ্যতে বড় সাংবিধানিক ও শাসনতান্ত্রিক সংকটের জন্ম দেবে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব বিষয়গুলোকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ সংশোধনে দ্রুত কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান, মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাক, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সিকদার হারুন মাহমুদ, সাইফুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সংগঠক বাবর চৌধুরী, ঢাকা মহানগর নেতা সালাউদ্দিন, যুবরান আলী জুয়েল, আরিফুল ইসলাম আরিফ, মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত