শুক্রবার, ২৭ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

মাটি কাটা ডাকাতদের কবলে ডাকাতিয়া

নদীর কান্না

ফারুক আল শারাহ, লাকসাম (কুমিল্লা)

মাটি কাটা ডাকাতদের কবলে ডাকাতিয়া

লাকসামে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ডাকাতিয়া -বাংলাদেশ প্রতিদিন

শুধু দখল আর দূষণ নয়, মাটি হরিলুটের মহোৎসবে ডাকাতি হয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যের ডাকাতিয়া নদী। লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদীর দুই পাড়ে মাটি কাটার প্রতিযোগিতা চলছে। অসাধু চক্র সুযোগ বুঝে মাটি কেটে নিলেও প্রশাসন কার্যকর কোনো অ্যাকশন নিতে পারছে না। চলতি শুষ্ক মৌসুমে ওই তিন উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ডাকাতিয়া প্রায় শুকিয়ে যাওয়ায় অসাধু চক্র এমন অপতৎপরতায় নেমেছে।

জানা যায়, ডাকাতিয়া নদী কুমিল্লার অন্যতম ঐতিহ্য। বর্ষায় নদীর কলতানে মুখরিত হয় পুরো এলাকা। ভ্রমণপিয়াসীদের আনন্দে নদীর ঐতিহ্য ফুটে ওঠে। ইরি-বোরো মৌসুমে নদীর দুই পাড়ের লাখ লাখ কৃষকের একমাত্র ভরসা ডাকাতিয়া। এ নদীতে শুধু দখল আর দূষণ নয়, ফিল্মি স্টাইলে মাটি ডাকাতি চলছে। বর্ষায় প্রবল স্রোত থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে বুকে পলি জমে পানিশূন্য হয়ে পড়ে নদী। ডাকাতিয়ার পানি কমতে থাকার সুযোগে বিভিন্ন স্থানে অসাধু চক্র কোনো অনুমতি ছাড়াই ড্রেজার মেশিন বসিয়ে মাটি নিয়ে যায়। ইতিপূর্বে এ-সংক্রান্ত অসংখ্য সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। প্রশাসন তাৎক্ষণিক নামমাত্র অ্যাকশনে গেলেও পুনরায় মাটি ডাকাতির হিড়িক পড়ে যায়। চলতি শুষ্ক মৌসুমে বিভিন্ন স্থানে ডাকাতিয়া প্রায় শুকিয়ে যাওয়ায় নদীর দুই পাড়ে নজর পড়েছে মাটিডাকাতদের। এ এলাকায় মাটির মূল্য ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় চক্রটি লুট করছে ডাকাতিয়ার মাটি। লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোটের বিভিন্ন স্থানে সরেজমিন গিয়ে মাটি হরিলুটের দৃশ্য চোখে পড়ে।

লাকসাম পৌরশহরে বাতাখালী, কলেজ রোড, উত্তর বাজার, পেয়ারাপুর, উপজেলার চুনাতি, সাতবাড়িয়া, ইছাপুরা, সিংজোড়, হামিরাবাগ, কালিয়াপুর এলাকায় এবং মনোহরগঞ্জ ও নাঙ্গলকোটে রাতে ও দিনে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালী মহল। বাতাখালী এলাকায় নদীর পাড়ে মাটি তুলে নিয়ে বাড়ি ভরাট ও বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করায় সম্প্রতি উপজেলা ভূমি অফিসে অভিযোগ করেন স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিরা। ইতিমধ্যে প্রশাসন ঘটনাস্থল গিয়ে নদীর পাড়ে মাটি কাটার সত্যতা পেয়ে সরঞ্জাম নিয়ে আসে। এ সময় মাটিকাটা শ্রমিকরা পালিয়ে যান। এ ঘটনার পর চার-পাঁচ দিন মাটি কাটা বন্ধ থাকলেও ওই এলাকায় প্রায়ই মাটি কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অসাধু চক্রটি শুক্র ও শনিবারসহ সরকারি ছুটির দিনকে টার্গেট করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। ওই দিনগুলোতে অফিস বন্ধ থাকায় প্রশাসন কোনো অ্যাকশনে যেতে পারে না। অপরিকল্পিতভাবে ডাকাতিয়ার যত্রতত্র মাটি কাটায় বর্ষায় নদীর স্বাভাবিক গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে পার্শ্ববর্তী সড়ক, ঘরবাড়ি, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কঠোর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে অসাধু চক্রের মাটি কাটার অপতৎপরতা বন্ধ হচ্ছে না। নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয় থেকে সরকারি অনুমতি ছাড়া মাটি কাটার বিধান থাকলেও প্রভাবশালীরা এর কোনো তোয়াক্কা না করে অবাধে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। ডাকাতিয়া নদীতে মাটি ডাকাতির হরিলুট চললেও সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসের তহশিলদার নির্বিকার বলে সচেতন মহলের অভিযোগ। লাকসাম পৌরসভার প্যানেল মেয়র-২ আবদুল আলিম দিদার বলেন, ডাকাতিয়া নদীতে অবাধে মাটি কাটা চলছে। এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে নদীটি অস্তিত্ব হারাবে। সরকার ডাকাতিয়ার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে বলে তিনি জানান। লাকসাম উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উজালা রানী চাকমা বলেন, কিছু এলাকায় ডাকাতিয়া নদী থেকে মাটি কাটার অভিযোগ এসেছে। কয়েক দিন আগে নদী থেকে মাটি কাটার সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সহযোগিতায় ডাকাতিয়া নদীর দুই পাড়ের দখলদারদের উচ্ছেদের লক্ষ্যে কাজ শুরু করবেন বলে তিনি জানান। এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য পাউবো, কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলীর টেলিফোনে একাধিকবার কল করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সর্বশেষ খবর