শুক্রবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা
করোনা আক্রান্তের চিকিৎসা

নির্ধারিত সময়ের আগেই বসুন্ধরায় হাসপাতাল

যত দিন প্রয়োজন তত দিন ব্যবহার করবে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্ধারিত সময়ের আগেই বসুন্ধরায় হাসপাতাল

করোনা রোগীদের জন্য আইসিসিবিতে চলছে অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণের কাজ। গতকাল তোলা ছবি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশের করোনা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। এ অবস্থায় করোনা রোগীর চিকিৎসায় নির্ধারিত সময়ের অন্তত পাঁচ দিন আগেই ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি, বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) দুই হাজার শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ সম্পন্ন করতে চায় স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। ইতিমধ্যে আসতে শুরু করেছে রোগীর শয্যা। শুরু হয়েছে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শয্যা বসানোর কার্যক্রম। সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে এসে গেছে সাবস্টেশন। উল্লেখ্য, কভিড-১৯ বিপর্যয় শেষ না হওয়া পর্যন্ত এবং সরকারের যত দিন ব্যবহারের প্রয়োজন শেষ না হবে তত দিন আইসিসিবিকে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়েছে। আর ১৫ দিনের মধ্যে আইসিসিবিকে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে রূপ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে গত ১২ এপ্রিল কাজ শুরু করেছে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। গতকাল সকালে নির্মাণাধীন হাসপাতাল চত্বরে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুল হামিদ বলেন, বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে দুই হাজার শয্যার হাসপাতাল নির্মাণে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। আমরা বসুন্ধরা গ্রুপের কাছে কৃতজ্ঞ যে, তারা এখানে দিন-রাত কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে। ট্রেড সেন্টারে পাঁচ দিনেই হাসপাতালের কাজ ৬০ শতাংশের বেশি সম্পন্ন হয়েছে। ২০-২২ এপ্রিলের মধ্যে আমাদের কাজ সম্পন্ন করতে চাচ্ছি। এরপর স্বাস্থ্য অধিদফতরকে বুঝিয়ে দেওয়ার দু-এক দিনের মধ্যেই চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে আজই (গতকাল) সাবস্টেশন চলে আসবে। জেনারেটর আসবে দুই দিনের মধ্যে। বেড আসা শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা লকডাউন, দোকানপাট বন্ধ। এ সময়ে মালপত্র আনাও আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি নির্ধারিত সময়ের আগেই হাসপাতাল নির্মাণ শেষ করতে। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী সার্বক্ষণিক কাজের খোঁজখবর নিচ্ছেন। 

আইসিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম জসীম উদ্দিন বলেন, একক জায়গা হিসেবে দেড় লাখ স্কয়ার ফুটের দেশের সবচেয়ে বড় ট্রেড সেন্টারটি হাসপাতালে রূপ দিতে সব ধরনের উপকরণ ও সরঞ্জাম চলে এসেছে। এখন শুধু স্থাপনের কাজ চলছে। যেভাবে কাজ চলছে তাতে ২০-২১ তারিখের মধ্যে বেডগুলো সংযুক্ত করা সম্পন্ন হয়ে যাবে। আশা করছি ২৪-২৫ তারিখের দিকে সেবা কার্যক্রম শুরু হবে। এ ছাড়া সবচেয়ে বড় কনভেনশন হলটিতে ৭১ বেডের আইসিইউ করতে আজ থেকে বেড বসানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আইসিইউ ইউনিটের জন্য যেসব কারিগরি সমস্যা ছিল, বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে বুধবার তা সমাধান করে দেওয়া হয়েছে। রোগীর কাপড়-চোপড় জীবাণুমুক্ত করতে তুরস্ক থেকে একটা ওয়াসপ্লান্ট আনা হচ্ছে। দুই হাজার স্কয়ার ফুট জায়গায় এটা বসানো হবে। যতদূর জানি, বিদেশ থেকে আমদানি করা সরঞ্জামগুলো এখন দেশের পথে। তিনি বলেন, কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা গ্রুপের একটি শতভাগ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এখান থেকে কোম্পানির অনেক বড় আয় হতো। সেটা বন্ধ করে করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য সরকারকে দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, করোনা সংক্রমণে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে সরকারকে আইসিসিবিতে পাঁচ হাজার শয্যার একটি সমন্বিত অস্থায়ী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মতি দিলে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল পরিদর্শন করে হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। নানা হিসাব-নিকাশ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সেখানে দুই হাজার শয্যার হাসপাতাল ও ৭১ শয্যার আইসিইউ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। আইসিসিবির সুবিশাল চারটি কনভেনশন হল ও একটি এক্সপো ট্রেড সেন্টারে দেশের অন্যতম বৃহৎ এ হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে সরকারের স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর।

সর্বশেষ খবর