রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

১৫ বছর পর মা ছেলের মিলন

মনিরুল ইসলাম মনি, সাতক্ষীরা

১৫ বছর পর মা ছেলের মিলন

এ যেন আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া। দীর্ঘ ১৫ বছর পর মাকে খুঁজে পেলেন আল আমিন। মা-ছেলের মহামিলনের দৃশ্য দেখে চাঁদনীমুখো গ্রামের মানুষও মুছল চোখের পানি।

চাঁদনীমুখো সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের একটি গ্রাম। গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম জানালেন, খানিকটা অসহায় অবস্থায় চাঁদনীমুখো বাজারের একটি টিনের চালাঘরে একাকী বসে থাকতেন বৃদ্ধা আবেদা বেগম(৬৯)। তার নাম-পরিচয় কারও জানা ছিল না। তবে তিনি নিয়মিত নামাজ পড়তেন। পথচারীরা তাকে খাবার দিত। এই মাকে এখন খুঁজে পেয়েছেন তার সন্তান বাগেরহাটের আল আমিন। বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার ঘরখোল গ্রামের আল আমিন জানান, তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা এত দিন মায়ের জন্য চোখের পানি ফেলেছেন। এখন তার মাকে পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছেন। তিনি জানান, ১৫ বছর আগে এক ঝড়ের রাতে তার মা আবেদা বেগম নিখোঁজ হন। এর আগে তার মস্তিষ্কে বিকৃতি দেখা দেয়। নিখোঁজ হওয়ার পর দীর্ঘদিন ধরে তাকে খোঁজাখুঁজি করা হচ্ছিল। মাইকিং করা, থানায় জিডি, সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন; নানাভাবে চেষ্টা করেও মাকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তবে তার বিশ্বাস ছিল তার মা বেঁচে রয়েছেন। তিনি যেখানে যেতেন সেখানেই চারদিকে মায়ের সন্ধান করতেন। কোথাও কোনো সন্ধান পাচ্ছিলেন না। আল আমিন জানান, শুক্রবার তিনি বাগেরহাট থেকে একটি বিয়ের দাওয়াতে সাতক্ষীরার গাবুরায় আসেন। সেখানেও তিনি তার মায়ের খোঁজখবর নিচ্ছিলেন। বিয়ের আনন্দে সবাই যখন মাতোয়ারা তখন আল আমিন জানতে পারেন চাঁদনীমুখো বাজারে এক বৃদ্ধা থাকেন যিনি কথা বলতে পারেন না। সবাই তাকে পাগলি বলে ডাকে, তাকে খাবার দেয়। আল আমিন জানান, খবর পেয়েই তিনি বিয়েবাড়ি থেকে ছুটে যান ওই বাজারে। গিয়ে দেখেন মা বসে আছেন। বহুদিন পর মাকে সামনে পেয়ে তিনি জড়িয়ে ধরেন। মাও অস্ফুট স্বরে বিড়বিড় করে কী যেন বলতে থাকেন। দুজনের চোখেই তখন অঝোরে পানি ঝরছে। তা দেখতে দেখতে গ্রামবাসীর চোখেও ফুটে উঠল অশ্রুকণা। আল আমিন বলেন, ‘মাকে হারিয়ে আমরা চার ভাই ও দুই বোন একপর্যায়ে খুব হতাশ হয়ে পড়ি।’ সে হতাশা কাটিয়ে উঠে আল আমিন তার মাকে নিয়ে মহানন্দে ফিরে যান গ্রামের বাড়ি মোংলা উপজেলার ঘরখোলে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর