শুক্রবার, ১৮ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

মৃত্যুর খবর বাড়ছেই

৪৫ দিনের মধ্যে সর্বাধিক মৃত্যু, ঢাকায় ৬৮% কভিড রোগীই ডেল্টায় আক্রান্ত, সংক্রমণ বেড়েছে চার বিভাগে

নিজস্ব প্রতিবেদক

মৃত্যুর খবর বাড়ছেই

করোনাভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যু বেড়েই চলেছে। চলতি মাসের প্রথম সাত দিনে (১ থেকে ৭ জুন) মোট মারা গেছেন ২৫০ জন। গত সাত দিনে (১১ থেকে ১৭ জুন) মারা গেছেন ৩৫৬ জন। দুই সময়ের ব্যবধানে মোট মৃত্যু বেড়েছে ১০৬ জন। দৈনিক মৃত্যু বেড়েছে ১৫ জনের বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৬৩ জন, যা ৪৫ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে আইসিইউ ও অক্সিজেন সংকটের কারণেও করোনা রোগীর মৃত্যু বাড়ছে। অনেকের মৃত্যু হচ্ছে বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুও বেড়েছে। এদিকে ঢাকা থেকে সংগ্রহ করা ৬০টি নমুনার মধ্যে ৪১টিতেই ভারতীয় ধরন বা ‘ডেলটা ভেরিয়েন্ট’ পেয়েছে আইসিডিডিআরবি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২৪ হাজার ৮৭১টি নমুনা পরীক্ষায় ৩ হাজার ৮৪০ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ১৫.৪৪ শতাংশ। সারা দেশের গড় শনাক্তের হার আগের দিনের চেয়ে কমলেও চট্টগ্রাম, রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগে বেড়েছে। এই সময়ে শনাক্তের হার কমেছে খুলনা, রাজশাহী, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগে। এক দিনের ব্যবধানে গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে শনাক্তের হার প্রায় ২ শতাংশ কমে ১০.৫৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তবে বিভাগের টাঙ্গাইল জেলায় ৩৬.১০ শতাংশ, রাজবাড়ী জেলায় ৩২.৭৯ শতাংশ ও গোপালগঞ্জ জেলায় ৩৮.৩৯ শতাংশ নমুনায় সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় গত ২৪ ঘণ্টায়ও সর্বোচ্চ ৩৬.৮১ শতাংশ শনাক্ত হার ছিল খুলনা বিভাগে। তবে আগের দিনের তুলনায় শনাক্তের হার ৩.৫৭ শতাংশ কমেছে এ বিভাগে। রংপুর বিভাগে শনাক্তের হার ছিল ৩১.৬৮ শতাংশ, যা দেশের মধ্যে দ্বিতীয়। অন্য বিভাগগুলোয় শনাক্তের হার ছিল ১০ থেকে ১৬ শতাংশের মধ্যে। এদিকে লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, বাগেরহাট, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মেহেরপুরসহ বেশ কিছু জেলায় শনাক্তের হার ছিল ৫০ শতাংশের আশপাশে। গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে  ৮ লাখ ৪১ হাজার ৮৭ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১৩ হাজার ৩৪৫ জন। সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৭৬ হাজার ৪৬৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে ৪৫ জন ছিলেন পুরুষ ও ১৮ জন নারী। হাসপাতালে ৫৫ জন ও বাড়িতে আটজন মারা গেছেন। বয়স বিবেচনায় মৃতদের মধ্যে ৩১ জন ছিলেন ষাটোর্ধ্ব, ১৫ জন পঞ্চাশোর্ধ্ব, সাতজন  চল্লিশোর্ধ্ব, সাতজন ত্রিশোর্ধ্ব, একজন বিশোর্ধ্ব ও দুজনের বয়স ছিল ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে খুলনা বিভাগে। এছাড়া ১০ জন ঢাকা, ১১ জন চট্টগ্রাম, ১৩ জন রাজশাহী, তিনজন বরিশাল এবং দুজন করে সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে মারা গেছেন।

‘ঢাকায় ৬৮% কভিড রোগীই ডেল্টাই আক্রান্ত’ : ঢাকা থেকে সংগ্রহ করা ৬০টি নমুনার মধ্যে ৪১টিতেই ভারতীয় ধরন বা ‘ডেলটা ভেরিয়েন্ট’ পেয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি), যা মোট সংগৃহীত নমুনার ৬৮ শতাংশ। মে মাসের শেষ ও জুন মাসের প্রথম এই দুই সপ্তাহে এসব নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আইসিডিডিআরবি সূত্র গতকাল রাতে সংবাদ মাধ্যমকে জানায় ঢাকা থেকে সংগ্রহ করা ৬০টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করেছে আইসিডিডিআরবি। এর মধ্যে ৬৮ শতাংশে ভারতীয় ধরন বা ডেলটা ভেরিয়েন্ট পাওয়া গেছে। ২২ শতাংশ নমুনায় পাওয়া গেছে দক্ষিণ আফ্রিকার ধরন বা বিটা ভেরিয়েন্ট। বাকি নমুনাগুলো অন্যান্য ভেরিয়েন্টের। সংক্রমণ বাড়ায় সারা দেশে লকডাউনের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে আলাদাভাবে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো আরও তথ্য-

বরিশাল : গত তিন দিনে বরিশাল বিভাগে করোনা সংক্রামণ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস জানান, গত ১৫ জুন বরিশাল বিভাগে ৩৩৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২২ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ছিল ৬.৬ শতাংশ। ১৬ জুন এটা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ শতাংশে। গতকাল ৩৪০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৫০ জনের করোনা পজিটিভ হয়। শনাক্তের হার ১৪.৭১ শতাংশ। যশোর, খুলনা, বাগেরহাটের সঙ্গে বরিশালের গণপরিবহন চলাচলে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়া নিয়ে উদ্বিগ্ন বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগ।

খুলনা : খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৭৬৫ জন।

দিনাজপুর : দিনাজপুর সদর উপজেলায় কঠোর লকডাউনের তৃতীয় দিনেও বেড়েছে সংক্রমণের পাশাপাশি মৃত্যু। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৭৪৪টি নমুনা পরীক্ষায় ২৭৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩৬.৯৬ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সদরেরই তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

বগুড়া : গত দুই দিনে বগুড়ায় সাতজন করোনায় মারা গেছেন। এ পর্যন্ত জেলায় মোট মৃত্যু হয়েছে ৩৩৬ জনের।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে চাঁপাইবাবগঞ্জের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে দুজন এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়।

রাজশাহী : রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন করোনা পজিটিভ ছিলেন। বাকিরা মারা যান উপসর্গ নিয়ে। এ নিয়ে চলতি মাসের গত ১৭ দিনে এ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা গেছেন ১৭১ জন।

মেহেরপুর : করোনায় আক্রান্ত হয়ে গতকাল মেহেরপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মেহেরপুর জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০ জনে। এদের মধ্যে সদর উপজেলায় ১২ জন, গাংনী উপজেলায় ১২ জন ও  মুজিবনগর উপজেলায় ছয়জন।

নোয়াখালী : করোনায় আক্রান্ত হয়ে নোয়াখালীতে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১০১ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২৫.৭০ শতাংশ।

নেত্রকোনা : করোনা উপসর্গ নিয়ে নেত্রকোনা জেলায় গত এক সপ্তাহে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন সীমান্ত উপজেলা কলমাকন্দার। বাকি একজন নেত্রকোনা সদরে। একজন হাসপাতালে মারা গেলেও দুজনের মৃত্যু হয় বাড়িতে।

বাগেরহাট : বাগেরহাটে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণে একজনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৭টি নমুনা পরীক্ষায় ৫২ জনের শরীরে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪৮.৫৯ শতাংশ। সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা মোংলা উপজেলায় ৩০টি নমুনা পরীক্ষায় ১৪ জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়ে। মোংলার সীমান্তবর্তী শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলায়ও সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে।

চুয়াডাঙ্গা : গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, যা এখন পর্যন্ত এক দিনের সর্বোচ্চ। শনাক্তের হার ৪৬.০৯ শতাংশ। একই সময়ে জেলার দামুড়হুদা উপজেলায় করোনায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

সাতক্ষীরা : করোনার উপসর্গ নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটির উপসর্গ নিয়ে জেলায় অন্তত ২৫৫ জনের মৃত্যু হলো। করোনা শনাক্তের পর মারা গেছেন ৫৫ জন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর