শনিবার, ১৯ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

‘মাসুদ রানা’ হতে চেয়েছিলেন

মির্জা মেহেদী তমাল

‘মাসুদ রানা’ হতে চেয়েছিলেন

কাজী আনোয়ার হোসেনের কাল্পনিক চরিত্র ‘মাসুদ রানা’ হতে চেয়েছিলেন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার আবদুল কাইয়ুম। তার স্বপ্ন ছিল মাসুদ রানার মতো একজন দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা হবেন। কোনো ঘটনা ঘটলেই ছুটে যাবেন। তীক্ষè বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে ঘটনার রহস্য বের করে আনবেন। একের পর এক রহস্য উন্মোচন করে আলোচিত গোয়েন্দা কর্মকর্তা হয়ে উঠবেন। কিন্তু কাইয়ুম গোয়েন্দা হতে পারেননি। গোয়েন্দা হতে গিয়ে নিজেই প্রাণ দিয়েছেন। আর তার লাশ উদ্ধার ও খুনিকে গ্রেফতারে আসল গোয়েন্দাদেরই মাঠে নামতে হয়। ঘটনাটি দুই বছর আগেকার।

কোটিপতি বাবার একমাত্র ছেলে কাইয়ুম নিখোঁজের চার দিন পর লাশ মেলে গাজীপুরের গভীর জঙ্গলে। তাকে নৃশংসভাবে হত্যার পর অ্যাসিডে মুখ ঝলসে দেওয়া হয়েছিল। ঘটনার এক মাস পর র‌্যাবের জালে আটক হয় খুনি আঞ্জুমান আঞ্জু। আঞ্জু হলেন কাইয়ুমের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। কাইয়ুমকে হত্যার রোমহর্ষক বর্ণনা দেয় র‌্যাবের কাছে। মাসুদ রানার মতো গোয়েন্দা হওয়ার স্বপ্ন পূরণের আশ্বাস দিয়ে কাইয়ুমের কাছ থেকে ৯ লাখ টাকা নেন আঞ্জু। পরে তাকে টাকা আত্মসাতের জন্য হত্যার পরিকল্পনা করে বলে আঞ্জু র‌্যাবের কাছে স্বীকার করেন।

ধনাঢ্য বাবার একমাত্র ছেলে কাইয়ুম ছোটবেলা থেকেই কিশোর কাল্পনিক চরিত্র কাজী আনোয়ার হোসেনের মাসুদ রানা সিরিজের বইগুলো পড়তে শুরু করেন। এক পর্যায়ে মাসুদ রানা সিরিজের প্রায় সব বই-ই তার পড়া হয়ে যায়। মাসুদ রানা হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে যান তিনি। স্বজনরা তাকে ‘মাসুদ রানা’ নামেই ডাকতে থাকেন। শৈশবে দেখা সেই স্বপ্ন পূরণের কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছিলেন না কাইয়ুম। এরই মধ্যে তার এই স্বপ্নের কথা জেনে যান টাঙ্গাইলের খালার বাড়ির এক প্রতিবেশী আঞ্জুমান আঞ্জু। কাইয়ুম খালার বাড়ি বেড়াতে গেলে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের মীর দেওহাটা গ্রামের সবুর মিয়ার ছেলে আঞ্জুর সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। মাসুদ রানা হওয়ার স্বপ্ন পূরণে কাইয়ুমকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন আঞ্জু। দুজনের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব হয়ে যায়। এক পর্যায়ে কাইয়ুমকে সরকারি উচ্চপদস্থ গোয়েন্দা কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন বলে আঞ্জু তাকে আশ্বাস দেন। কাইয়ুম এমন প্রস্তাবে ভীষণ খুশি। কিন্তু আঞ্জু এর জন্য তার কাছে ২০ লাখ টাকা লাগবে বলে জানান। কাইয়ুম রাজি। চুক্তি হয় তাদের মধ্যে।

২০১৮ সালের শুরুতে বাবার কাছ থেকে কাইয়ুম ৯ লাখ টাকা নিয়ে আঞ্জুকে দেন। ওই টাকা পেয়ে আঞ্জু মালয়েশিয়া চলে যান। সেখানে বসে আঞ্জু ওই টাকা আত্মসাতের জন্য হত্যার ছক আঁকতে থাকেন। পরে হত্যার মিশন নিয়ে ২০১৯ সালের ৪ মার্চ দেশে ফেরেন আঞ্জু। মালয়েশিয়ায় থেকেই নিয়মিত কাইয়ুমের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন তিনি। দেশে এসে কাইয়ুমের পছন্দের মেয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়ে দেওয়ার কথা বলে ৯ মার্চ তাকে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে যেতে বলেন। ৯ মার্চ বিকালে তারা দুজন ভাওয়াল জঙ্গলে একত্রিত হন। উদ্যানের ভিতরে দুজন ঘোরাফেরা করার সময় ছবি তোলার কথা বলে একটি গাছের সঙ্গে কাইয়ুমকে দাঁড় করান। পেছন থেকে ছবি তুলতে থাকেন আঞ্জু। এক পর্যায়ে পেছন দিক থেকে গলা চেপে ধরেন তিনি। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর গলা ছাড়েন। কেউ যাতে চিনতে না পারে, সে জন্য কাইয়ুমের মুখে অ্যাসিড ঢেলে দ্রুত পালিয়ে যান আঞ্জু। এদিকে গাজীপুর মহানগরের সদর থানার পুলিশ ১৩ মার্চ কাইয়ুমের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। কাইয়ুমের বাবা জালাল উদ্দিন বাদী হয়ে আঞ্জুকে প্রধান আসামি করে ঘটনার সাত দিন পর একটি মামলা দায়ের করেন। পরে তিনি র‌্যাব-১ এর পোড়াবাড়ী ক্যাম্পে গিয়ে গ্রেফতারের জন্য আবেদন করেন। কালিয়াকৈরের চন্দ্রা থেকে আঞ্জুকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

সর্বশেষ খবর