শুক্রবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ঝিনাইদহে মেম্বার প্রার্থীর মৃত্যু হামলার শিকার পুলিশ কর্তা

নোয়াখালীতে চেয়ারম্যান প্রার্থীর শোডাউনে অংশ নিয়ে প্রাণ গেল দুই শিশুর

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচনী সংঘাতে গতকালও একজনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ-সহিংসতা চলছে। প্রচারণা নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলছেন দলীয় ও বিদ্রোহী স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। ঝিনাইদহে মেম্বার প্রার্থী মাহমুদুল হক পলাশকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া নৌকা এবং স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর মোটরসাইকেল ও নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর হয়েছে। নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর নির্বাচনী শোডাউন শেষে বাড়ি ফেরার পথে পিকআপ থেকে পড়ে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তবে আচরণবিধিতে নির্বাচনী মিছিল-শোডাউন নিষিদ্ধ থাকলেও এবারে কেউ তা মানছে না। নির্বাচন কমিশনও এসব দেখেও না দেখার ভান করছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের এক ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীর প্রচারণা ও শোডাউন শেষে বাড়ি ফেরার পথে পিকআপ থেকে পড়ে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে মেহেরাজ উদ্দিন (১২) ষষ্ঠ আর সম্রাট (১১) পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও তিনজন। বুধবার রাতে সদর উপজেলার চরমটুয়া ইউনিয়নের মনারখিল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে দুই শিশুর মৃত্যুতে পরিবার ও এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। গতকাল ১১টায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়। তবে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী কামাল উদ্দিন বাবলু অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার নির্বাচনী প্রচারণায় নয়, বিজয় দিবস র‌্যালি উপলক্ষে আয়োজিত বিজয় র‌্যালিতে অংশ নেওয়া একটি পিকআপের ড্রাইভার হঠাৎ হার্ড ব্রেক করলে পিকআপ ভ্যানের ডালা খুলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।’ পুলিশ ও প্রতক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বুধবার রাতে মেহেরাজ, সম্রাট, রাসেলসহ স্থানীয় ৮-১০ জন শিশু-কিশোর বড়দের সঙ্গে পিকআপ ভ্যানে চড়ে চরমটুয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী কামাল উদ্দিন বাবলুর নির্বাচনী মিছিল করছিল। রাত ৮টার দিকে মনারখিল গ্রামে চলন্ত পিকআপের ডালা খুলে চার-পাঁচ শিশু-কিশোর নিচে পড়ে যায়। এ সময় মেহেরাজ পিকআপের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যায়। গুরুতর অবস্থায় সম্রাটকে ঢাকায় নেওয়ার পথে রাত ২টার দিকে সেও মারা যায়। ঝিনাইদহে নৌকা ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর মোটরসাইকেল ও নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর হয়েছে। প্রতিপক্ষের মারধরে মেম্বার প্রার্থী মাহমুদুল হক পলাশের মৃত্যুর অভিযোগ করেছে পরিবার। এ সময় হামলার শিকার হয়েছেন পুলিশের এক কর্মকর্তা। জানা গেছে, বুধবার রাতে আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু সাঈদ শিকদার নির্বাচনী প্রচারণায় যান। ওই সময় লক্ষ্মীপুর গ্রামের দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। পরে রাতেই টিকারী বাজারে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী শহিদুল ইসলাম শিকদারের নির্বাচনী কার্যালয় ও দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। অভিযোগ উঠেছে- এ সংঘাতের সময় ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর প্রার্থী মাহমুদুল হক পলাশকে পিটিয়ে আহত করা হয়। গতকাল সকালে তিনি মারা যান। স্থানীয়রা বলছেন, নৌকা ও আনারস প্রতীকের দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে বুধবার আহত হন পলাশ। গতকাল সকালে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে বাজারে গিয়ে অসুস্থ হয়ে মারা যান। এদিকে এ সংঘর্ষের খবর পেয়ে নারিকেলবাড়িয়া পুলিশ ক্যাম্পে এসআই তৌহিদুল ইসলাম ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। সেখানে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা উত্তেজিত হয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। তৎক্ষণাৎ তাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার শাকচর ইউনিয়নের নির্বাচন কেন্দ্র করে নৌকার প্রার্থীর সমর্থককে স্বতন্ত্র প্রার্থীর অনুসারীরা কুপিয়ে জখম করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ইউনিয়নের পূর্ব শাকচর গ্রামে বুধবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে বলে লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ওসি মো. জসিম উদ্দিন জানান। আহত কামাল হোসেন (৪৮) ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তিনি নৌকার প্রার্থী ও শাকচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহফুজুর রহমানের কর্মী। নির্বাচনের দিন ভোট দেখতে গিয়ে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত স্কুলছাত্র দেলোয়ার হোসেন সাগর হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামিরা জামিনে বের হয়ে বাদীকে মামলা তুলে নেওয়াসহ বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর