সোমবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

সড়কে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল এক বছরে গেল ৭৮০৯ প্রাণ

যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে ২০২১ সালে ৮৫ দিন গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৮০৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৯ হাজার ৩৯ জন। আহতদের অনেকে সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। এ ছাড়া গত ৭ বছরে মোট ৩৭ হাজার ৪২২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫১ হাজার ৬৬৫ জন নিহত এবং ১ লাখ ৩৯৭ জন আহত হয়েছেন। যাত্রী কল্যাণ সমিতির বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ২০২১ সালে দুর্ঘটনার বার্ষিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন সংগঠনটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী। এ সময় বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক হাদিউজ্জামান, গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক আবদুল হক, মানবাধিকারকর্মী নুর খান লিটন উপস্থিত ছিলেন।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, গত বছর লকডাউনে ৮৫ দিন গণপরিবহন বন্ধ ছিল। তারপরও সড়কে ৫ হাজার ৬২৯টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া রেলপথে ৪০২টি দুর্ঘটনায় ৩৯৬ জন নিহত ও ১৩৪ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে ১৮২টি দুর্ঘটনায় ৩১১ জন নিহত ও ৫৭৮ জন আহত হয়েছেন। নিখোঁজ হয়েছেন ৫৪৪ জন। সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৬ হাজার ২১৩টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৮ হাজার ৫১৬ জন নিহত ও ৯ হাজার ৭৫১ জন আহত হয়েছেন। দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত দুর্ঘটনার সংবাদ পর্যালোচনা করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, হতাহতদের ৭৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ ১৫ থেকে ৪৫ বছরের কর্মক্ষম ব্যক্তি এবং নারী। এসব দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন ২ হাজার ৩৫০ জন চালক, ১ হাজার ৭১৫ জন পথচারী, ১ হাজার ১৭ জন পরিবহন শ্রমিক, ৪৩০ জন ছাত্র-ছাত্রী, ১১১ জন শিক্ষক, ২৩৭ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ১ হাজার ৭৬ জন নারী, ৬৩৮ জন শিশু, ৪২ জন সাংবাদিক, ২৭ জন চিকিৎসক, ১৪ জন আইনজীবী, ১৮ জন প্রকৌশলী, ১৬১ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী এবং ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা।

দুর্ঘটনার ৫৪.০৭ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২২.১৭ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৬.১৩ শতাংশ খাদে পড়ে, ৬.২১ শতাংশ বিভিন্ন কারণে, শূন্য দশমিক ৫৩ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে এবং শূন্য দশমিক ৮৭ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষ। দুর্ঘটনায় পড়া ৭ হাজার ৭৩০টি যানবাহনের তথ্য পাওয়া গেছে, যার ৩০ দশমিক ৪২ শতাংশ ট্রাক, পিকআপ, লরি ও কাভার্ডভ্যান, ২৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ বাস, ৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ নসিমন, করিমন ট্রাক্টর ও লেগুনা, ৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ অটোরিকশা, ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা, রিকশা, ভ্যান ও ইজিবাইক, ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ কার, জিপ ও মাইক্রোবাস। দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে বেপরোয়া গতি, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, সড়কের ত্রুটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেড ফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা, ফুটপাথ না থাকা বা ফুটপাথ বেদখলে থাকা, ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগকে চিহ্নিত করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর