বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিটিং সিস্টেম পরিচালনার জন্য ১৫ ফেব্রুয়ারি সহজ-সিনেসিস-ভিনসেন জেভির সঙ্গে পাঁচ বছর মেয়াদি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে সহজ কাজটি পায়। এর আগে টিকিট বিক্রির দায়িত্ব পালন করত সিএনএস নামক প্রতিষ্ঠান। সহজের কাছে টিকিট পরিচালনা দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন বলেছিলেন, ‘মানুষকে আরও ভালো সেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যে আমরা নতুন কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছি।’ কিন্তু নতুন কোম্পানি হিসেবে সহজ দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রেনের টিকিট পাওয়াই কঠিন হয়ে গেছে, এমন মন্তব্য যাত্রী সাধারণের। বিশেষ করে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাড়ি ফেরার টিকিট অনলাইনে না পাওয়া নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে যাত্রীদের। কয়েক দিন ধরে রেলের টিকিট সংগ্রহের অভিজ্ঞতা নিয়ে এমনই মন্তব্য করেছেন টিকিটের অপেক্ষায় থাকা মানুষেরা।
কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস অথবা রংপুর এক্সপ্রেসের ২৮ এপ্রিল বা ২৯ এপ্রিলের টিকিটের জন্য দুই দিন ধরে অনলাইনে চেষ্টা করে গেছেন আবদুর রাজ্জাক সরকার। গত দুই দিনে প্রতিদিনই সাহরির পর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন কম্পিউটারের সামনে বসে। সকাল ৮টা থেকে অনলাইনে টিকিট পাওয়ার কথা থাকলেও টানা দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করেও সার্ভারেই প্রবেশ করতে পারেননি তিনি। এ ক্ষেত্রে সার্ভারে ক্লিক করামাত্রই স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে ‘ইউ আর ভেরি ভেলুয়েবল টু আস, টু এনশিউর কোয়ালিটি সার্ভিস ফর ইউ উই আর পুটিং ইউ ইন এ কিউ। থ্যাংক ইউ ফর ইউর প্যাশেন্স’। এরপর সকাল ১০টার পর রাজ্জাক সরকার সার্ভারে প্রবেশ করতে পারলেও কোনো টিকিট পাননি। এমন অভিজ্ঞতা শুধু আবদুর রাজ্জাক সরকারেরই নয়, অনলাইনে টিকিট না পেয়ে ভুক্তভোগীরা সারা দেশ থেকেই বাংলাদেশ প্রতিদিনের এ প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করেছেন। তারা বলছেন, প্রতি বছরই ঈদের টিকিটের চাপ বাড়ে। প্রয়োজনের তুলনায় বরাবরই টিকিট কম থাকে। কিন্তু এর আগে কোনো বছরে রেলের টিকিটের জন্য সার্ভারে প্রবেশের জন্য ‘কিউ’ (লাইন) মেইনটেইন করতে হয়নি। এ ছাড়া ভাগ্যক্রমে যারা কিউ মেইনটেইন করে সার্ভারে প্রবেশ করতে পারছেন তারা পড়েছেন টিকিট সিলেকশন জটিলতায়। কারণ সহজের নতুন নিয়মে প্রতিটি বগি সিলেক্ট করে সিট সিলেক্ট করতে হচ্ছে। সময় ক্ষেপণে এতেও জটিলতায় ভুগছেন যাত্রীরা।
তথ্যমতে, ২৩ এপ্রিল থেকে রাজধানীর পাঁচটি রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রতিদিন মোট প্রায় ২৭ হাজার টিকিটের অর্ধেক নির্দিষ্ট স্টেশনের কাউন্টার থেকে এবং বাকি অর্ধেক অনলাইনে ই-টিকিটের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে। কাউন্টারে সকাল ৮টা থেকে টিকিট বিক্রি চলছে। অনলাইনে ই-টিকিটেও সকাল ৮টা থেকেই টিকিট পাওয়ার কথা। কিন্তু টিকিটের অপেক্ষায় যাত্রীরা বলছেন, অনলাইনে ই-টিকিটের সার্ভারে (https://eticket.railway.gov.bd/) তারা প্রবেশই করতে পারছেন না। অন্যদিকে সহজ কর্তৃপক্ষ বলছে, সকাল ৮টায় অনলাইনে টিকিট ছাড়ার পর মাত্র ১০ মিনিট বা এরও কম সময়ের মধ্যে সব টিকিট শেষ হয়ে যাচ্ছে।রেলের টিকিটিং সিস্টেম পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়া সহজের পিআর ম্যানেজার ফারহাত আহমেদ গতকাল এ প্রতিবেদককে বলেন, অনলাইনে যতগুলো টিকিট থাকে ঠিক ততজনই সার্ভারে টিকিট কিনতে পারেন। টিকিটের জন্য আগ্রহী অতিরিক্ত ব্যক্তিরা ‘কিউ’তে থাকেন। কিন্তু মাত্র ১০ মিনিট বা এরও কম সময়ের মধ্যে টিকিট শেষ হয়ে যায়। বাকিরা কেউ টিকিট পান না। তিনি বলেন, সকাল ৮টায় অনলাইন ই-টিকিট শুরু হওয়ার পর গতকাল ১ মিনিটে ১৮ লাখ ডিভাইস থেকে সার্ভারে হিট করা হয়েছে। গড়ে দেখা গেছে প্রতিটি টিকিটের বিপরীতে ৭০০ জন আগ্রহী ব্যক্তি সার্ভারে হিট করেন। কিন্তু রেলের ই-টিকিট ব্যতীত দেশের অন্য কোনো ওয়েবসাইট বা সার্ভারে প্রবেশের জন্য কিউ মেইনটেইন করতে হয় কি না, এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেননি ফারহাত আহমেদ।