রবিবার, ১২ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

গণমাধ্যমকর্মী হত্যা তদন্ত করছে একাধিক সংস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডিবিসি নিউজের প্রযোজক আবদুল বারী হত্যার তিন দিন পার হলেও কাউকে শনাক্ত বা গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। হত্যার রহস্য উদঘাটনে থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি, র‌্যাব, সিআইডি, পিবিআই কাজ করছে। তবে এখনো কূল-কিনারা হয়নি। গত বুধবার রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকায় পুলিশ প্লাজার উল্টোদিকের সড়কের পাশ থেকে বারীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, আবদুল বারী হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করতে সময় লাগবে। হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করতে ডিবি, পিবিআই ও সিআইডিসহ অনেক সংস্থা একসঙ্গে কাজ করছে। তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বারীকে হয়তো হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। এ জন্য তিনি খুন হওয়ার ভয়ে অফিস বা অন্য কারও সঙ্গে টানা কয়েক দিন মোবাইল ফোনে কথা বলেননি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে অপরাধীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

পুলিশ বলছে, এই হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবিসহ বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। যে পথে তিনি হত্যার শিকার হয়েছেন, সেই পথ মূলত মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীরা ব্যবহার করে। হয়তো তারাই এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে। যেখানে বারীর গলাকাটা লাশ পাওয়া গেছে, হাতিরঝিলের সেই স্থানটিতে তিনি কেন কিংবা কার কাছে গিয়েছিলেন, হত্যাকান্ডের কিনারা করতে সেই প্রশ্নেরও উত্তর খুঁজছেন গোয়েন্দারা। এদিকে ডিবিসি নিউজে বারীর সহকর্মীরা বলছেন, ছয় মাস আগে এই প্রতিষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পর তাকে খুব চুপচাপই দেখেছেন তারা। বারীর গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ সদরের চি দাসগাতি এলাকায়। ১০ জুন বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে তার বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আর বিয়ের পিঁড়িতে বসা হলো না। ডিবিসি টেলিভিশনের অনুষ্ঠান প্রযোজক ছিলেন বারী। তার কর্মস্থলের পাশে মহাখালী ওয়্যারলেস গেট এলাকার একটি মেসে থাকতেন। মেস থেকে গত মঙ্গলবার রাতে তিনি বের হন। এরপর পরদিন বুধবার সকালে তার গলা ও পেট কাটা লাশ পাওয়া যায় হাতিরঝিলে। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ধারণা করা হচ্ছে, প্রথমে তাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়। তখন তিনি বাঁচার জন্য পানিতে নেমে পড়েন। পরে বারী লেক পাড়ে উঠে আসলে অথবা তাকে তুলে এনে মাটিতে শুইয়ে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। এখন পর্যন্ত বারীর কোনো শত্রু থাকার খবর পুলিশ পায়নি। ফলে কী কারণে, কার সঙ্গে বা তিনি হাতিরঝিলে কার কাছে গেলেন, তা জানার চেষ্টা করছি আমরা।

পুলিশের তথ্য বলছে, মঙ্গলবার ছিল বারীর সাপ্তাহিক ছুটির দিন। মহাখালীর ওয়্যারলেস গেট এলাকার মাদরাসাগলির যে বাসায় তিনি থাকতেন, সেখান থেকে রাত ৮টা ৪৯ মিনিটে তাকে বের হয়ে যেতে দেখা গেছে একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে। ওই সময় তার সঙ্গে আর কেউ ছিল কি না, তা স্পষ্ট নয়।

পুলিশে বলছে, বারীর লাশের পাশে তার মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ, জুতা ও একটি চাকু রাখা ছিল। ফলে এটি নিছক ছিনতাইয়ের ঘটনা হিসেবেও ধরে নেওয়া কঠিন। বারীর মোবাইল ফোন ঘেঁটে তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলছেন, তিনি মোবাইল খুব কমই ব্যবহার করতেন। যার সঙ্গে কথা বলতেন, খুব অল্প সময়। এমনটিও দেখা গেছে, তিনি টানা কয়েক দিন কারও সঙ্গেই মোবাইলে কথা বলেননি।

ডিবির গুলশান বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান বলেন, বারী যে পথ ব্যবহার করেছেন সেই পথ মূলত মাদক ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করে। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, তার সেখানে অবস্থান করার কথা নয়। যেখানে লাশ পড়ে ছিল, তা হাতিরঝিল থেকে নিকেতনের দিকে বের হওয়ার শর্টকাট রাস্তা। সাধারণত মাদকের সঙ্গে জড়িতরা ওই পথটি ব্যবহার করে থাকে। সবকিছু বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে।

এ ঘটনায় বারীর বড় ভাই আবদুল আলিম বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় আসামি হিসিবে কারও নাম উল্লেখ না করে ‘অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা’ পরিকল্পিতভাবে হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ডিএমপির গুলশান বিভাগের ডিসি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা ঘটনার আসল রহস্য বের করার চেষ্টা করছি এবং খুনিদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। আশা করি খুব কম সময়ের মধ্যে ভালো খবর দিতে পারব।

সর্বশেষ খবর